ইসলামে প্রতারণা, ওয়াদা ভঙ্গ ও বিশ্বাসঘাতকতা গুরুতর অপরাধ। কোরআন ও হাদিসে এসব আচরণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এর ভয়াবহ শাস্তির সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী, মুমিনের অন্যতম গুণ হলো প্রতিশ্রুতি পূরণ করা এবং সততা বজায় রাখা।
কোরআনের নির্দেশনা
পবিত্র কোরআনের সুরা মায়েদা (১)-এ বলা হয়েছে—
“হে মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করো।”
সুরা বনি ইসরাঈল (৩৪)-এ আল্লাহ তায়ালা সতর্ক করেছেন—
“প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করো, প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসসমূহ
১. বুখারি: ২৫৬২ —
“মুনাফিকের আলামত তিনটি: কথা বললে মিথ্যা বলে, আমানত রাখলে খেয়ানত করে এবং প্রতিশ্রুতি দিলে ভঙ্গ করে।”
➡ এখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা মুনাফিকির চিহ্ন।
২. ইবনে মাজাহ: ২৮৭২ —
“কেয়ামতের দিনে প্রতিটি বিশ্বাসঘাতকের জন্য একটি পতাকা থাকবে এবং ঘোষণা করা হবে—এটি অমুকের বিশ্বাসঘাতকতার পতাকা।”
➡ এই হাদিসে বোঝানো হয়েছে, বিশ্বাসঘাতকতা আখিরাতে প্রকাশ্যে অপমানের কারণ হবে।
৩. বুখারি: ২৯৫৪ —
“চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে, সে খাঁটি মুনাফিক গণ্য হবে: কথা বললে মিথ্যা বলে, অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে, আমানতে খেয়ানত করে এবং ঝগড়ায় অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করে। যার মধ্যে এর যেকোনো একটি গুণ থাকবে, তার মধ্যে মুনাফিকির একটি স্বভাব থাকবে, যতক্ষণ না তা পরিত্যাগ করে।”
➡ অর্থাৎ, আংশিকভাবে হলেও এই গুণ থাকলে তা আধ্যাত্মিক রোগ হিসেবে গণ্য হবে।
শাস্তির সতর্কবার্তা
সুরা মায়েদা (১৩)-এ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—
“তারা তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করায় আমি তাদের ওপর লানত করেছি এবং তাদের অন্তর কঠোর করে দিয়েছি…”
সুরা নিসা (১৪৫)-এ বলা হয়েছে—
“মুনাফিকরা জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে থাকবে…”
আর সুরা তওবা (৬৮)-তে উল্লেখ আছে—
“আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফেরদের জন্য জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেখানে তারা চিরকাল থাকবে।”
ইসলামের শিক্ষায় প্রতিশ্রুতি পূরণ শুধু ব্যক্তিগত নৈতিকতা নয়, বরং সামাজিক আস্থা ও ন্যায়বিচারের মূলভিত্তি। তাই মুসলিম সমাজে সততা ও ওয়াদা রক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।