ভারতের নয়াদিল্লির লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের পাশে গাড়িতে শক্তিশালী বিস্ফোরণের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। বাংলাদেশসহ তিন দেশের সীমান্ত এবং দেশটির গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঘটনাটির পেছনে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র রয়েছে বলে মনে করছে দিল্লি। বিস্ফোরণটি ‘সন্ত্রাসী হামলা’ ধরেই তদন্ত এগিয়ে নিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। হামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জন নিহত হওয়ার কথা জানা গেছে। আহত অন্তত ৩০ জন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভয়াবহ বিস্ফোরণের পেছনে যারা ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের কেউই রেহাই পাবে না। এ ঘটনায় গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন।
হামলার ঘটনায় ভারতে থাকা তাদের নাগরিকদের ভ্রমণ সতর্কতা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। ভারতের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে চীন, জাপান, মালদ্বীপ, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ। হামলার ব্যাপারে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। হামলার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে দিল্লির বাংলাদেশ মিশন। এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই দুঃসময়ে ভারতের পাশে রয়েছে বাংলাদেশ।
বিবিসি ও আলজাজিরা জানায়, বিস্ফোরণ ঘিরে কিছু প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাচ্ছে না। ভয়াবহ এই বিস্ফোরণটির নেপথ্যে আন্তর্জাতিক কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপ জড়িত কিনা, সেই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ঘটনার সময় গাড়িটিতে তিন যাত্রী ছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তবে তাদের শরীরে কোনো গুলির দাগ না থাকায় ঘটনাটি আত্মঘাতী কোনো হামলা কিনা– সেই শঙ্কা প্রকট হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ঘটনার দ্রুত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলছে।
ভারতের রাজধানী অঞ্চলের পুলিশ ঘটনা তদন্তে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, গাড়িটি হুন্দাই আই২০ মডেলের। বিস্ফোরণের পর গাড়িটি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য ও স্থাপনাগুলোতে নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিস্ফোরণের পর কর্তৃপক্ষ মুম্বাই শহর এবং নয়াদিল্লির সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরপ্রদেশসহ ভারতের প্রধান রেলস্টেশনগুলোতে নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করেছে। নয়াদিল্লির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মেট্রো সিস্টেম, প্রধান সরকারি ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা বাহিনী বসানো হয়েছে।
বাংলাদেশসহ তিন দেশের সীমান্তে উচ্চ সতর্কতা
ইন্ডিয়া টুডে জানায়, বিস্ফোরণের পর বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপাল সীমান্তে উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে ভারত। এর আগে দেশটির একাধিক রাজ্যে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী (বিএসএফ) পাঞ্জাবের ভারত-পাকিস্তান সীমান্তজুড়ে নজরদারি বাড়িয়েছে, পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ-নেপাল সীমান্ত এবং অন্যান্য সেনা চৌকিতেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, লক্ষ্ণৌ থেকে জারি করা এক নির্দেশে উত্তরপ্রদেশের সব জেলায় পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সংবেদনশীল এলাকায় টহল এবং যানবাহন তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে। দেরাদুনেও একই নির্দেশ অনুসারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ভারত-নেপাল সীমান্তেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তে মোতায়েন বিএসএফের পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশকেও সতর্ক করা হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে যাতায়াতকারী প্রত্যেককে কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
কী জানাচ্ছে পুলিশ
দিল্লির লালকেল্লার কাছে গাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় ওই গাড়ির মূল মালিককে আটক করা হয়েছে। চলন্ত হুন্দাই আই২০ গাড়ির ভেতর ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। দিল্লির পুলিশ কমিশনার সতীশ গোলচা সাংবাদিকদের বলেন, ধীরে চলা একটি গাড়ি লাল সিগন্যালে থেমে ছিল। সেই গাড়িতেই বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের কারণে আশপাশের আরও কয়েকটি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, গাড়িটির মূল মালিককে আটক করা হয়েছে।
সর্বত্র ছিল রক্ত ও খণ্ডিত দেহ
ঘটনাস্থল থেকে ২০০ মিটারেরও কম দূরে বসবাসকারী মোহাম্মদ হাফিজ বলেন, বিস্ফোরণে তাঁর বাড়ি কেঁপে উঠেছিল। ভূমিকম্প ভেবে তারা দ্রুত বেরিয়ে এসেছিলেন। রাস্তায় এসে দেখেন লোকেরা চারদিকে দৌড়াচ্ছে, গাড়িতে আগুন জ্বলছিল এবং রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে ছিল। তিনি বলেন, সর্বত্র রক্ত ছিল। মানুষের খণ্ড-বিখণ্ড দেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। মোহাম্মদ আজগর নামে একজন বলেন, তাঁর ভাই ঘটনাস্থলের এলাকায় ছিলেন। বিস্ফোরণের পর থেকে তিনি নিখোঁজ। আমরা লালকেল্লা, চাঁদনিচক– সর্বত্র খোঁজ করেছি; তাঁকে খুঁজে পাইনি।
ডেস্ক রিপোর্ট