একটি আনন্দমুখর পারিবারিক আয়োজন মুহূর্তেই পরিণত হলো শোকের আবহে। মালয়েশিয়া প্রবাসী পাকিস্তানি নাগরিক নূর মুহাম্মদ স্বপ্ন দেখেছিলেন নিজের বিয়েকে ঘিরে খুশির মুহূর্ত ভাগাভাগি করবেন প্রিয়জনদের সঙ্গে। কিন্তু গত ১৫ আগস্ট নিজ গ্রামে পৌঁছে তাকে বরণ করে নেয় না সজ্জিত বাড়ি কিংবা হাসিমুখের আত্মীয়–বরং প্রিয় মা, ভাই, বোনসহ মোট ২৪ জন স্বজনের জানাজার মিছিল। ভয়াবহ বন্যা কেড়ে নেয় একসাথে প্রায় পুরো পরিবারকেই।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পাহাড়ি জেলা বুনের, রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে মাত্র তিন ঘণ্টার পথ। এখানেই মুহাম্মদের বৃহৎ ৩৬ কক্ষের বংশীয় বাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল কাদির নগর গ্রামে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যার ফলে পাহাড় থেকে নেমে আসা কাদা, পাথর আর বন্যার পানির চাপে ভেঙে পড়ে পুরো বাড়ি। মুহূর্তের মধ্যেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় শত বছরের পারিবারিক আশ্রয়।
জিও নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন, বাড়ি ফেরার দুই দিন আগে দীর্ঘ সময় মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল তার। মা দারুণ খুশি ছিলেন ছেলের বিয়ে ঘিরে। কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানেই সেই মা ও ভাইবোনসহ স্বজনদের লাশ তাকে বিদায় দিতে হয়। বিধ্বংসী বন্যায় প্রাণ হারানোদের মধ্যে ছিলেন তার চাচা, দাদা এবং বিয়েতে যোগ দিতে আসা শিশুরাও। শুধু ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে তাকে নিতে গিয়ে যাতায়াতরত থাকায় বেঁচে যান মুহাম্মদের বাবা ও এক ভাই।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে চলতি বর্ষায় প্রবল বৃষ্টিপাত ও ভয়াবহ "মেঘ-বিস্ফোরণ" সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা অন্তত ২০০ জনের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, জুনের শেষ থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে সারাদেশে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৭৭৬ জন ছাড়িয়েছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আটকে পড়া ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে নিখোঁজদের সংখ্যা এখনও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
প্রাকৃতিক এই বিপর্যয় জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ বাস্তবতাকে নতুন করে সামনে এনেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণতা ও অস্বাভাবিক আবহাওয়াই দীর্ঘস্থায়ী মুষলধারে বৃষ্টি এবং বিরল "মেঘ বিস্ফোরণের" প্রধান কারণ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে এর তীব্রতা আরও বিধ্বংসী আকারে দেখা দিতে পারে। এই ট্র্যাজেডি কেবল একটি পরিবারের নয়, বরং পাকিস্তানের চলমান দুর্দশা ও বিশ্বজুড়ে বেড়ে ওঠা জলবায়ুগত হুমকির করুণ উদাহরণ।