আগামীকাল শনিবার ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। তিন দিনের এই সফরকে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে, গত ৩০ বছরে কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর না হওয়ায় এটিই হবে প্রথম উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় পদক্ষেপ। ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে রাজনৈতিক, কৌশলগত, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা জোরদার করাই সফরের মূল লক্ষ্য।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছাবেন ইসহাক দার। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্র সচিব ড. মো. নজরুল ইসলাম। এ সফরে ছয়টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি, বাণিজ্যবিষয়ক যৌথ কর্মপরিষদ গঠন, সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম, দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা, রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার মধ্যে সমঝোতা এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সঙ্গে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের যৌথ গবেষণা কার্যক্রম। পাশাপাশি, কৃষি, প্রতিরক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা ও যোগাযোগ খাতেও সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে।
সফরে আঞ্চলিক সংগঠন সার্কসহ নানা আন্তর্জাতিক ইস্যু গুরুত্ব পাবে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানায়। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, বর্তমান সফরের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো এর ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। বিগত শেখ হাসিনা সরকারের সময় বাংলাদেশ–পাকিস্তান সম্পর্ক কার্যত সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়। জুলাই বিপ্লবের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় আসা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে একটি স্বাধীন ও ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের, যেখানে আর একতরফাভাবে দিল্লির প্রভাব নির্ধারক হবে না বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ইসহাক দারের ঢাকা সফর দক্ষিণ এশিয়ার নতুন ভূরাজনৈতিক সমীকরণের প্রতি ইঙ্গিত বহন করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।