মোহর ইসলামি বিয়ের একটি মৌলিক শর্ত এবং নারীর একান্ত অধিকার। কেবল কাগজে অঙ্ক ধরে রাখার জন্য নয়, বরং তা বাস্তবিকভাবে পরিশোধ করাও স্বামীর ওপর ফরজ। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে স্ত্রীকে মর্যাদা ও সম্মানের প্রতীকস্বরূপ কিছু প্রদান করা।
মোহরে ফাতেমি-
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কন্যা হজরত ফাতিমা (রা.)-কে হজরত আলি (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহ দেন, তখন তিনি ৫০০ দিরহাম মোহর নির্ধারণ করেন। এই মোহরই ইসলামে “মোহরে ফাতেমি” নামে পরিচিত।
বর্তমান বাজারে মোহরে ফাতেমির হিসাব:
-
৫০০ দিরহাম × ৩.০৬১৮ গ্রাম = ১.৫৩০৯ কেজি রূপা
-
প্রতি ভরি রূপা ১,৭০০ টাকা হলে
-
মোহরের মূল্য ≈ ২,২৩,১২৫ টাকা
তবে রূপার দাম ওঠানামা করায় এই পরিমাণ সময়ভেদে পরিবর্তিত হতে পারে।
মোহরের পরিমাণ নির্ধারণে সামর্থ্যই মূল বিবেচ্য
মোহরে ফাতেমি দেওয়া প্রশংসনীয় হলেও, এটি আবশ্যক নয়। কোনো ব্যক্তির আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে তার পক্ষে সামর্থ্যের বাইরে মোহর ধার্য করা অনুচিত।
হাদিস:
“তোমরা নারীদের মোহরানা নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। যদি তা সম্মান ও তাকওয়ার মানদণ্ড হতো, তাহলে রাসূল (সা.)-ই সেটি করতেন।”
— সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১১১৪
মোহরের ন্যূনতম পরিমাণ: শরিয়তের নির্দিষ্ট নির্দেশনা
ইসলাম মোহরের সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করেছে, যেন এটিকে গুরুত্বহীন মনে না করা হয়।
সর্বনিম্ন মোহর:
১০ দিরহাম = ৩০.৬১৮ গ্রাম রূপা ≈ পৌনে ৩ ভরি রূপা
মূল্য:
প্রতি ভরি রূপা ১,৭০০ টাকা হলে, সর্বনিম্ন মোহরের পরিমাণ ≈ ৫,১০০ টাকা
হাদিস:
“১০ দিরহামের কম কোনো দেনমোহর নেই।”
— বায়হাকি শরীফ, ৭/২৪০
স্ত্রীর সম্মতিতেও যদি ১০ দিরহামের কম মোহর নির্ধারণ করা হয়, সেটি শরিয়তসম্মত নয়।
কোরআনে মোহরের গুরুত্ব
আল্লাহতায়ালা বিয়ের বিধান এবং মোহর সম্পর্কে বলেন:
"তোমরা বিয়ে করো তোমাদের পছন্দের নারীদের থেকে, দুজন অথবা তিনজন অথবা চারজন; কিন্তু যদি আশঙ্কা করো যে তোমরা ন্যায়ের সঙ্গে আচরণ করতে পারবে না, তাহলে একজনই যথেষ্ট।"
— (সুরা নিসা, আয়াত: ৩)
“...তোমরা তাদের দেনমোহর প্রদান করো বিয়ের জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন প্রণয়িনী গ্রহণকারী হিসেবে নয়।”
— (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৫)
মোহর ছাড়া বিয়ে বৈধ নয়
ইসলামিক শরিয়তের দৃষ্টিতে মোহর ছাড়া বিয়ে সম্পন্ন নয়। কেউ উদারতার ছদ্মবেশে মোহর ছাড়াই বিয়ে করলে সেটি শরিয়তসম্মত হবে না। মোহর হচ্ছে নারীর প্রাপ্য অধিকার, যা স্বামীকে অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে।
মোহর শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি একটি ইসলামী দায়িত্ব, যা নারীকে সম্মানিত করার অন্যতম উপায়। তাই বিয়ের সময় মোহর নির্ধারণে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। সামর্থ্যের বাইরে মোহর ধার্য করা যেমন অন্যায়, তেমনি কোনো মোহর না ধরা ইসলামবিরোধী।