কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা বণ্টনে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রকৃত ভাতাভোগীর নাম কেটে তালিকায় সচ্ছল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়মিত ভাতা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। দালালদের মধ্যস্থতায় ইউনিয়ন সমাজকর্মী জাইদুল ইসলাম জাহিদ এমনটি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, রৌমারী উপজেলায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার সুবিধাভোগী ২২ হাজার ৯৮৭ জন। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগী ১১ হাজার ৩৭৫ জন, বিধবা ভাতার পাঁচ হাজার ১৫৯ ও প্রতিবন্ধী ভাতার ছয় হাজার ৪৫৩ জন। তাদের মধ্যে বয়স্ক ২১৬, বিধবা ২৩৯ ও প্রতিবন্ধী ১৬৫ জন সুবিধাভোগীর নাম তালিকা থেকে কাটা পড়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তারা অনেক আগে থেকেই বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা নিয়মিত পেতেন। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম দিক থেকে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ভাতাভোগী অনেকের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) নম্বরে ভাতার টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় সুবিধাবঞ্চিতরা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে গেলে নাম ঠিক করে দেওয়ার আশ্বাস দেন বর্তমান উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম। তিনি প্রকৃত ভাতাভোগীদের নাম বাদ পড়ার জন্য সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিনকে দোষারোপ করেন।
বর্তমান কর্মকর্তার আশ্বাসের পরও বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা দিনের পর দিন সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না। এক বছরের বেশি সময় ধরে ভাতাবঞ্চিতরা নিয়মিত সমাজসেবা অফিসে গেলেও তাদের বিদায় করে দেওয়া হচ্ছে সুকৌশলে। এদিকে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীরা ভাতার টাকা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সম্প্রতি উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের টাপুরচর আশ্রয়কেন্দ্র এলাকায় গেলে অনেকে ভাতা নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, একই পরিবারের একাধিক সচ্ছল ব্যক্তিকে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে ভাতার তালিকায় নাম উঠিয়েছেন ইউনিয়ন সমাজকর্মী জাইদুল ইসলাম জাহিদ। স্থানীয় নূর জাহান, জাহানারা, কহিনূর, রশিদা, কলিম উদ্দিন, ওয়াহেদ আলী, ইউনুস আলী, বাদশা মিয়া ও রমজান আলীসহ অনেকের নাম উঠেছে এসব তালিকায়। তারা নিয়মিত ভাতার টাকা পাচ্ছেন।
স্বামী বেঁচে থাকলেও বিধবা ভাতা পাচ্ছেন একই এলাকার মুঞ্জুয়ারা খাতুন, সুফিয়া খাতুন ও ফালানি খাতুনসহ অসংখ্য নারী। অর্থের বিনিময়ে তাদের নাম উঠানো হয়েছে বিধবা ভাতার তালিকায়।
একটি সূত্র জানায়, কারও কারও নাম অজান্তে তালিকায় উঠিয়ে তাদের নামে করা মোবাইল ফোনের সিম নিজ সংগ্রহে রেখে দিয়েছেন ইউনিয়ন সমাজকর্মী জাহিদ। এর মাধ্যমে আসা ভাতার টাকা তিনি উঠিয়ে আত্মসাৎ করেন।
অভিযোগ আছে, ইউনিয়ন সমাজকর্মী জাহিদ বিভিন্ন ব্যক্তির বাসা ও বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে গিয়ে তাদের সঙ্গে চুক্তি করেন। এভাবে অর্থের বিনিময়ে প্রকৃত দুস্থদের নাম কেটে তালিকায় অন্যদের নাম উঠিয়ে তাদের ভাতার টাকা দেওয়া হয়।
এক সময় নিয়মিত ভাতা পেতেন টাপুরচর আশ্রয়কেন্দ্র এলাকার জন্মগত প্রতিবন্ধী রহম আলী। বছরখানেক ধরে ভাতা পাচ্ছেন না তিনি। তাঁর মতো অসংখ্য প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও বিধবা ব্যক্তির নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। যারা প্রায় এক বছর ধরে ভাতা থেকে বঞ্চিত। রহম আলী বলেন, ‘আমি আগে থেকেই প্রতিবন্ধী ভাতা পেতাম। কিন্তু এক বছর ধরে কোনো টাকা পাই না। শুনেছি স্যাররা নাম কেটে দিছেন। তারা আশ্বাস দিছেন, আমার নামটা আবার করে দিবেন।’
বন্দবেড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বলেন, নাম কাটার বিষয়ে আমার জানা নেই।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী জাইদুল ইসলাম জাহিদ এসব অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এগুলো আমি করিনি। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, এসব ঘটনা আমি যোগদানের আগের। তাই এ বিষয়ে কিছু জানি না। অফিসে যারা আসছেন, তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ নিয়ে সমস্যা সমাধান করছি। তিনি বলেন, সচ্ছল ব্যক্তির নাম প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকায় থাকলে তথ্য যাচাই-বাছাই করে বাদ দেওয়া হবে। প্রকৃত ভাতাবঞ্চিতরা নতুন করেও আবেদন করতে পারবেন। পরামর্শ দেন।
কুড়িগ্রাম জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক এ কে এম মনিরুজ্জামানের মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ডেস্ক রিপোর্ট