ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
চট্টগ্রামে চলন্ত অটোরিকশায় মুখোশধারীদের পেট্রলবোমা হামলা, দগ্ধ ২ নারী হাতিরঝিলে দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত যুবদলকর্মী, অবস্থা আশংকাজনক ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ডা. সুমিত সাহা গ্রেফতার রবার্ট এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজার নথি প্রকাশ এপ্রিলের রাতের আকাশে দুর্লভ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক চমক কিশোরগঞ্জে ভেজাল খাদ্য তৈরির দায়ে ৪ প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা মুন্সীগঞ্জে পুকুর থেকে ৩২৬ রাউন্ড চায়না রাইফেলের গুলি উদ্ধার গণ-অভ্যুত্থানের পর সমঝোতার সংস্কার দরকার: এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ভিসির প্রতীকী চেয়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ কুয়েট শিক্ষার্থীদের আবাসিকে গ্যাস সংযোগ নিয়ে প্রতারণা: সতর্ক করলো তিতাস গ্যাস

ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থার ঐতিহ্য ও বিতর্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং বিতর্কিত ব্যবস্থা। ১৭৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পদ্ধতি রাষ্ট্রের ছোট ও বড় রাজ্যগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য তৈরি হয়েছিল। ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে জনগণের সরাসরি ভোটের পরিবর্তে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ সময় ভোর পাঁচটায় ভারমন্ট রাজ্যে প্রথম ভোট প্রদান করেন ভোটাররা। এই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে বিশ্ব রাজনীতিতে সুপার পাওয়ার দেশটির নেতৃত্ব কে নিবে।

মার্কিন নির্বাচন ব্যবস্থায় ইলেক্টোরাল কলেজের ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও পপুলার বা সরাসরি ভোট গুরুত্বপূর্ণ, তবে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ভর করে ইলেক্টোরাল ভোটের ওপর। প্রতিটি রাজ্যের নির্ধারিত ইলেক্টোরাল ভোট প্রার্থীদের জন্য জয়ের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বিশ্বের অন্যসব গণতান্ত্রিক দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রে ভোটদাতারা সরাসরি প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারেন না, ভোট হয় ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ নামের একটি পদ্ধতির মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে মোট ৫৩৮ জন ইলেক্টর রয়েছেন। জয়ের জন্য প্রয়োজন নূন্যতম ২৭০টি ইলেক্টরাল ভোট। তাই অনেক সময়ই দেখা যায়, জনগণের ভোট বা পপুলার ভোট বেশি পেয়েও শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছে কোনো প্রার্থীকে।

২০০০ ও ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এভাবেই হেরে যান দুই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী, অ্যাল গোর ও হিলারি ক্লিন্টন।

১৭৮৭ সালে মার্কিন সংবিধান প্রণেতারা এই পদ্ধতি চালু করেন। ব্রিটেন থেকে যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ছিল একেবারে নতুন একটি দেশ। সে বছর যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান যখন লেখা হচ্ছিল তখন বিশালাকার দেশটিতে যোগাযোগের অভাবের ফলে জাতীয় স্তরে সাধারণ মানুষের ভোট নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা কার্যত অসম্ভব ছিল।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ফাউন্ডিং ফাদার্স হিসাবে পরিচিত ব্যক্তিরা এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন যা ক্ষমতাকে একজনের হাতে কেন্দ্রীভূত করবে না। রাজতন্ত্রের মতো কাঠামো তৈরি করতে পারে এমন ব্যবস্থা থেকে তারা নিজেদেরকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন।

সংবিধান রচয়িতারা তখন ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। সংবিধান রচনার সময় কংগ্রেস এবং জনগণের সরাসরি ভোটে (পপুলার ভোট) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুটি ধারণাই বাতিল করে দেন। তাদের যুক্তি ছিল, পপুলার ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে লোকেরা তাদের স্থানীয় প্রার্থীকে ভোট দেবে এবং তার ফলে বড় অঙ্গরাজ্যগুলো আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ছোট ছোট অঙ্গরাজ্যগুলো ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতিকে সমর্থন করে, কারণ এটি তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ দেয়। এ পদ্ধতির ফলে বড় রাজ্যের তুলনায় ছোট রাজ্যগুলোর মতামত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে পারে। ঐতিহাসিকভাবে, দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলো এই ব্যবস্থার পক্ষে ছিল। সেসময় এসব রাজ্যে বিপুলসংখ্যক দাস ছিল, যাদের ভোটাধিকার না থাকলেও আদম শুমারিতে তাদের গণনা করা হতো, যা ইলেক্টোরাল কলেজে তাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে সাহায্য করত।

জনপ্রিয়

চট্টগ্রামে চলন্ত অটোরিকশায় মুখোশধারীদের পেট্রলবোমা হামলা, দগ্ধ ২ নারী

ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থার ঐতিহ্য ও বিতর্ক

প্রকাশিত: ০৬:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং বিতর্কিত ব্যবস্থা। ১৭৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পদ্ধতি রাষ্ট্রের ছোট ও বড় রাজ্যগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য তৈরি হয়েছিল। ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে জনগণের সরাসরি ভোটের পরিবর্তে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ সময় ভোর পাঁচটায় ভারমন্ট রাজ্যে প্রথম ভোট প্রদান করেন ভোটাররা। এই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে বিশ্ব রাজনীতিতে সুপার পাওয়ার দেশটির নেতৃত্ব কে নিবে।

মার্কিন নির্বাচন ব্যবস্থায় ইলেক্টোরাল কলেজের ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও পপুলার বা সরাসরি ভোট গুরুত্বপূর্ণ, তবে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ভর করে ইলেক্টোরাল ভোটের ওপর। প্রতিটি রাজ্যের নির্ধারিত ইলেক্টোরাল ভোট প্রার্থীদের জন্য জয়ের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বিশ্বের অন্যসব গণতান্ত্রিক দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রে ভোটদাতারা সরাসরি প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারেন না, ভোট হয় ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ নামের একটি পদ্ধতির মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে মোট ৫৩৮ জন ইলেক্টর রয়েছেন। জয়ের জন্য প্রয়োজন নূন্যতম ২৭০টি ইলেক্টরাল ভোট। তাই অনেক সময়ই দেখা যায়, জনগণের ভোট বা পপুলার ভোট বেশি পেয়েও শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছে কোনো প্রার্থীকে।

২০০০ ও ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এভাবেই হেরে যান দুই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী, অ্যাল গোর ও হিলারি ক্লিন্টন।

১৭৮৭ সালে মার্কিন সংবিধান প্রণেতারা এই পদ্ধতি চালু করেন। ব্রিটেন থেকে যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ছিল একেবারে নতুন একটি দেশ। সে বছর যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান যখন লেখা হচ্ছিল তখন বিশালাকার দেশটিতে যোগাযোগের অভাবের ফলে জাতীয় স্তরে সাধারণ মানুষের ভোট নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা কার্যত অসম্ভব ছিল।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ফাউন্ডিং ফাদার্স হিসাবে পরিচিত ব্যক্তিরা এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন যা ক্ষমতাকে একজনের হাতে কেন্দ্রীভূত করবে না। রাজতন্ত্রের মতো কাঠামো তৈরি করতে পারে এমন ব্যবস্থা থেকে তারা নিজেদেরকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন।

সংবিধান রচয়িতারা তখন ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। সংবিধান রচনার সময় কংগ্রেস এবং জনগণের সরাসরি ভোটে (পপুলার ভোট) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুটি ধারণাই বাতিল করে দেন। তাদের যুক্তি ছিল, পপুলার ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে লোকেরা তাদের স্থানীয় প্রার্থীকে ভোট দেবে এবং তার ফলে বড় অঙ্গরাজ্যগুলো আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ছোট ছোট অঙ্গরাজ্যগুলো ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতিকে সমর্থন করে, কারণ এটি তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ দেয়। এ পদ্ধতির ফলে বড় রাজ্যের তুলনায় ছোট রাজ্যগুলোর মতামত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে পারে। ঐতিহাসিকভাবে, দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলো এই ব্যবস্থার পক্ষে ছিল। সেসময় এসব রাজ্যে বিপুলসংখ্যক দাস ছিল, যাদের ভোটাধিকার না থাকলেও আদম শুমারিতে তাদের গণনা করা হতো, যা ইলেক্টোরাল কলেজে তাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে সাহায্য করত।