ঘটনার সময়ের ছবি ও অভিযুক্ত জিশান (ডানে)
রাজধানীর বনশ্রীতে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় ভুক্তভোগী তরুণীকে শ্লীলতাহানির শিকার হতে হয়েছে। এরপর এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় ছোট ভাই ও বন্ধুসহ তাকে মারধর করা হয় এবং ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়।
বুধবার (২ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে বনশ্রী এফ ব্লকের ৩ নম্বর সড়কে এ ঘটনা ঘটে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী তরুণী।
আহত অবস্থায় ভুক্তভোগী তরুণীসহ তিনজনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। পরে রাতেই রামপুরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলা নং ১।
রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আতাউর রহমান আকন্দ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, মামলায় সোয়েব রহমান জিশান (২৫) নামে এক যুবকের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও দুই যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। ভুক্তভোগী তরুণী কিছু ভিডিও ফুটেজও পুলিশের কাছে জমা দিয়েছেন। থানার একাধিক টিম বিষয়টি তদন্ত করছে এবং ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
রামপুরা থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বুধবার (২ এপ্রিল) রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে রামপুরার বনশ্রী ই-ব্লকের ৩ নম্বর রোডের এক জুসের দোকানে ছিলেন ওই তরুণী।
ভুক্তভোগীর ভাষ্যমতে, তখন এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বারবার তার দিকে তাকাচ্ছিল। তিনি জানতে চাইলে সে উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করতে থাকে। এরপর তরুণী দোকান থেকে বের হয়ে আসেন এবং তার ছোট ভাই ও বন্ধুসহ রাস্তায় দাঁড়ান।
পরবর্তীতে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি দোকানে থাকা আরও দুজনকে বিষয়টি জানান। তারা দোকান থেকে বেরিয়ে এসে ভুক্তভোগীকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করতে থাকে এবং সোয়েব রহমান জিশানসহ তিনজন তার পথরোধ করে।
এটি দেখে তরুণীর ছোট ভাই সামনে এসে দাঁড়ালে তারা তাকে ভয় দেখিয়ে বলে, ‘বাসা কোথায়, চল বাসায় যাই’। তরুণী বাধা দিলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তার ভাইকে মারধর শুরু করে। ভাইকে রক্ষা করতে গেলে জিশান ও অন্য দুজন তার চুল ধরে টান দেয়, বুকে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করে এবং শরীরে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারে।
এদিকে, মারধরের ঘটনা ভিডিও করতে গেলে তরুণীর বন্ধু মাশফিককেও তারা কিল, ঘুষি ও লাথি মারে। এরপর জিশান ও তার সহযোগীরা তরুণীকে ধর্ষণের হুমকি দিয়ে বলে, ‘রেপ করসি? হ্যাঁ, দেখ রেপ করসি’।
জিশান এরপর ফোন করে আরও ১০-১২ জনকে ডেকে আনে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। অভিযুক্তরা তরুণী ও তার সঙ্গীদের ফোন কেড়ে নিয়ে লাথি মেরে ফেলে দেয় এবং বলে, ‘কার কাছে যাবি, যা বিচার চাস কর।’
একজন বলেন, ‘আমি আনন্দ টিভির সাংবাদিক, যা যা করার কর।’
একপর্যায়ে এক বয়স্ক ব্যক্তি এসে বলেন, ‘আমি সমিতির নেতা, সমাধান করে দেব।’ এরপর তরুণী ও তার ছোট ভাই চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যান।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, ‘আমি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের লক্ষ্যে মামলা করেছি। পুলিশকে ফুটেজ দিয়েছি এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’