কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের বাঁশজানি সীমান্তে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ঝাকুয়াটারী সীমান্ত জামে মসজিদটি বাংলাদেশের ও ভারতের মানুষের একতা ও সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ দুই শতাব্দী পুরনো এই মসজিদটি, যে স্থানটি ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত, দুটি দেশের মানুষের জন্য হয়ে উঠেছে একটি সেতুবন্ধ, যেখানে দেশভাগের পরও একে অপরের মধ্যে সম্পর্ক ও সৌহার্দ্য রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় গ্রামটি দুইটি ভাগে বিভক্ত হলেও, মানুষের মধ্যে সম্পর্ক কোনোদিন ভাঙেনি। মসজিদটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের বাঁশজানি গ্রামের মুসল্লিদের পাশাপাশি ভারতের ঝাকুয়াটারী গ্রামের মুসল্লিদের জন্যও একটি পূণ্যময় স্থান। তবে, সম্প্রতি মসজিদটির সংস্কারকাজে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বারবার বাধা দিচ্ছে, যা মসজিদটির উন্নয়নে আঘাত হেনেছে। জানা গেছে, গত দুই বছর ধরে মসজিদটির সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় মুসল্লিরা তাদের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে মসজিদটি পাকা করতে চাইলেও বিএসএফ একাধিকবার এই উদ্যোগে বাধা দিয়েছে।
সম্প্রতি, ৯ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বিএসএফ সদস্যরা মসজিদের পাশে একটি ইউক্যালিপটাস গাছের ওপর সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছিল, যা বিজিবির প্রতিবাদের পর ১২ ফেব্রুয়ারি অপসারণ করা হয়। মসজিদের মুয়াজ্জিন কয়েস আলী জানান, “আজানের ধ্বনিতে দুই বাংলার মুসল্লিরা মসজিদে ছুটে আসেন। নামাজ শেষে তারা একে অপরের খোঁজ খবর নেন এবং মাঝে মাঝে কোলাকুলি করেন।” এছাড়া, মসজিদটির ইমাম আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, “জুমার নামাজের দিন এই মসজিদে ব্যাপক জমায়েত হয়, যেখানে দুই দেশের মুসল্লিরা তবারক বিতরণ করেন।” এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি দেখতে অনেক দর্শনার্থীও আসেন, যারা সীমান্তের এই মসজিদটির সংস্কার ও উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। বিশিষ্ট নাট্য নির্মাতা শাহজাহান সোহাগ বলেন, “এখানে এসে একসঙ্গে নামাজ পড়তে খুব ভালো লেগেছে। তবে মসজিদটির অবস্থা দেখে মন খারাপ হয়েছে, এটা অবশ্যই সংস্কারের প্রয়োজন।”
ভুরুঙ্গামারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুস ছবুর বলেন, “এখানে বাস করা মানুষরা একে অপরের আত্মীয়। দেশভাগের পরও তাদের সম্পর্ক ভাঙেনি। শুধু মসজিদে একসঙ্গে নামাজ পড়াই নয়, তারা একে অপরের দুঃখ-সুখ ভাগ করে নেন, পারিবারিক অনুষ্ঠানে একে অপরকে দাওয়াত করেন।” এখন, মসজিদটির সংস্কার নিয়ে সরকারের কাছে স্থানীয় জনগণের একটাই দাবি, তা হলো মসজিদটির সংস্কারকাজে যাতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করা হয় এবং দুই দেশের মানুষের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়।