ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
চট্টগ্রামে চলন্ত অটোরিকশায় মুখোশধারীদের পেট্রলবোমা হামলা, দগ্ধ ২ নারী হাতিরঝিলে দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত যুবদলকর্মী, অবস্থা আশংকাজনক ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ডা. সুমিত সাহা গ্রেফতার রবার্ট এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজার নথি প্রকাশ এপ্রিলের রাতের আকাশে দুর্লভ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক চমক কিশোরগঞ্জে ভেজাল খাদ্য তৈরির দায়ে ৪ প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা মুন্সীগঞ্জে পুকুর থেকে ৩২৬ রাউন্ড চায়না রাইফেলের গুলি উদ্ধার গণ-অভ্যুত্থানের পর সমঝোতার সংস্কার দরকার: এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ভিসির প্রতীকী চেয়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ কুয়েট শিক্ষার্থীদের আবাসিকে গ্যাস সংযোগ নিয়ে প্রতারণা: সতর্ক করলো তিতাস গ্যাস

বাসে ডাকাতি ও নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় অবশেষে মামলা

ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনার তিনদিন পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা হয়েছে।

ডাকাতদের কবলে পড়া নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা ওমর আলী নামে ওই বাসের যাত্রী বৃহস্পতিবার (২০) রাতে বাদী হয়ে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন ১০ ধারাসহ ৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড (ডাকাতি) ধারায় মামলাটি করেন। এতে অজ্ঞাত ৮/৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

টাঙ্গাইলের সহকারী পুলিশ সুপার (মির্জাপুর সার্কেল) এইচ এম মাহবুব রেজওয়ান সিদ্দিকী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশের একটি বিশেষ দল এরই মধ্যে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।

বড়াইগ্রাম উপজেলার থানা মোড় এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী ওমর আলী জানান, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাত ১১টায় ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস পরিবহনের বাসটি গাবতলি থেকে ছেড়ে আসে। পথে গাজিপুরের চন্দ্রা এলাকায় বাসটিতে আরও কয়েকজন যাত্রী উঠে। বাসটি টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরে এলে নতুন উঠা যাত্রীসহ ৮/১০ জন ডাকাত দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

এরপর ডাকাতদের একজন চালককে বলেন, ‘ওস্তাদ অনেকক্ষণ গাড়ি চালিয়েছেন এবার ওঠেন, আমরা চালাবো।’ তাদের একজন গিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে। এর ১০ মিনিট পরেই চাকু- ছুরি বের করে সবাইকে মারধর শুরু করে এবং ডাকাতি শুরু করে। বাসের যাত্রীদের একেকজনকে ৮-৯ বার চেক করা হয়েছে। যা পেয়েছে তাই নিয়েছে। নারীদের কানের দুল ছিড়ে নিয়েছে। ডাকাতের পুরো কার্যক্রমটি আড়াই থেকে তিন ঘণ্টার ভিতর শেষ করেছে। পরে নির্জন একটি জায়গায় গিয়ে তারা নেমে পড়েছে।

ওমর আলী আরও বলেন, এরপর হাইওয়ে পুলিশ এসে বলে সামনে মির্জাপুর থানা সেখানে গিয়ে মামলা করেন। সেখানে গেলে কয়েকজন পুলিশ দেখতে পাই তারা বলে ফজরের আজানের পরে স্যার আসলে মামলা হবে। পরে সেখান থেকে আমরা চলে আসি। বড়াইগ্রাম এসে গাড়ি থামিয়ে দেই। গাড়িতে আমি সহ মৌখড়া এলাকায় ৭৩ বছর বয়সী আরেকজন ব্যবসায়ী ছিল। আমার কাছে ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আমাদের সব টাকা নিয়ে নেয় ডাকাতরা।

বাসে ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেছিল কিনা এমনটা জানতে চাইলে ওমর আলী বলেন, আসলে বাসে সেদিন রাতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। তবে নারীদের খুব খারাপভাবে বেইজ্জতি করেছে। দুইজন মেয়েকে ধর্ষণ ছাড়া সবই করেছে। ওই মেয়ে দুটো সব দেওয়ার পরও তাদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। তারা থানাতে এসে এগুলো পুলিশকে বলেছে। পরে বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ ড্রাইভার হেলপার ও সুপার ভাইজারকে আটক করে আদালতে পাঠায়। আদালত থেকে তারা জামিন নেন।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় বড়াইগ্রাম থানায় মামলা করার অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু এখানে মামলা হয়নি। পরে মির্জাপুর থানায় মামলা করি।

নাটোরের বড়াইগ্রাম আমলী আদালত সূত্রে জানা যায়, বড়াইগ্রাম থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) শরিফুল ইসলাম সাক্ষরিত চালান মূলে ঢাকা-রাজশাহী চলাচলকারি ইউনিক রোড রয়েলস বাসের চালক বাবলু ইসলাম (৩৫) চালকের সহকারী সুমন ইসলাম (৩৫) ও সুপারভাইজার মাহবুল আলমকে (৩৮) বুধবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় তাদেরকে আদালতের সামনে হাজির করলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তৌহিদুর রহমান সুমন শুনানী অন্তে আসামিদের জামিনে মুক্তির আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের কোর্ট ইন্সপেক্টর মোস্তফা কামাল জানান, মামলাটি ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারার হওয়ায় এবং আসামিদের বিরুদ্ধে কোন ধর্তব্য অপরাধের অভিযোগ সুনির্দিষ্ট না থাকায় আদালত তাদের জামিনের আদেশ দেন।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, বাসে ডাকাতি বা বাসের যাত্রীদের ধর্ষণের ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ দেননি। ঘটনাস্থলও অন্য জেলায়। তাই আটক বাসের চালক, চালকের সহকারী ও সুপারভাইজারকে কার্যবিধি ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাসের যাত্রীরা মৌখিকভাবে পুলিশকে ডাকাতি হওয়ার কথা বলেছেন। ঘটনাটি টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে সংঘটিত হয়েছে বলেও জানা গেছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের সহকারী পুলিশ সুপার (মির্জাপুর সার্কেল) এইচ এম মাহবুব রেজওয়ান সিদ্দিকী বলেন, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে নাটোরের এক ভুক্তভোগী যাত্রী ডাকাতি ও নারী শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন। ঘটনাটি আলোচিত। বিষয়টি অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

জনপ্রিয়

চট্টগ্রামে চলন্ত অটোরিকশায় মুখোশধারীদের পেট্রলবোমা হামলা, দগ্ধ ২ নারী

বাসে ডাকাতি ও নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় অবশেষে মামলা

প্রকাশিত: ০৯:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনার তিনদিন পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা হয়েছে।

ডাকাতদের কবলে পড়া নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা ওমর আলী নামে ওই বাসের যাত্রী বৃহস্পতিবার (২০) রাতে বাদী হয়ে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন ১০ ধারাসহ ৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড (ডাকাতি) ধারায় মামলাটি করেন। এতে অজ্ঞাত ৮/৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

টাঙ্গাইলের সহকারী পুলিশ সুপার (মির্জাপুর সার্কেল) এইচ এম মাহবুব রেজওয়ান সিদ্দিকী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশের একটি বিশেষ দল এরই মধ্যে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।

বড়াইগ্রাম উপজেলার থানা মোড় এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী ওমর আলী জানান, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাত ১১টায় ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস পরিবহনের বাসটি গাবতলি থেকে ছেড়ে আসে। পথে গাজিপুরের চন্দ্রা এলাকায় বাসটিতে আরও কয়েকজন যাত্রী উঠে। বাসটি টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরে এলে নতুন উঠা যাত্রীসহ ৮/১০ জন ডাকাত দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

এরপর ডাকাতদের একজন চালককে বলেন, ‘ওস্তাদ অনেকক্ষণ গাড়ি চালিয়েছেন এবার ওঠেন, আমরা চালাবো।’ তাদের একজন গিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে। এর ১০ মিনিট পরেই চাকু- ছুরি বের করে সবাইকে মারধর শুরু করে এবং ডাকাতি শুরু করে। বাসের যাত্রীদের একেকজনকে ৮-৯ বার চেক করা হয়েছে। যা পেয়েছে তাই নিয়েছে। নারীদের কানের দুল ছিড়ে নিয়েছে। ডাকাতের পুরো কার্যক্রমটি আড়াই থেকে তিন ঘণ্টার ভিতর শেষ করেছে। পরে নির্জন একটি জায়গায় গিয়ে তারা নেমে পড়েছে।

ওমর আলী আরও বলেন, এরপর হাইওয়ে পুলিশ এসে বলে সামনে মির্জাপুর থানা সেখানে গিয়ে মামলা করেন। সেখানে গেলে কয়েকজন পুলিশ দেখতে পাই তারা বলে ফজরের আজানের পরে স্যার আসলে মামলা হবে। পরে সেখান থেকে আমরা চলে আসি। বড়াইগ্রাম এসে গাড়ি থামিয়ে দেই। গাড়িতে আমি সহ মৌখড়া এলাকায় ৭৩ বছর বয়সী আরেকজন ব্যবসায়ী ছিল। আমার কাছে ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আমাদের সব টাকা নিয়ে নেয় ডাকাতরা।

বাসে ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেছিল কিনা এমনটা জানতে চাইলে ওমর আলী বলেন, আসলে বাসে সেদিন রাতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। তবে নারীদের খুব খারাপভাবে বেইজ্জতি করেছে। দুইজন মেয়েকে ধর্ষণ ছাড়া সবই করেছে। ওই মেয়ে দুটো সব দেওয়ার পরও তাদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। তারা থানাতে এসে এগুলো পুলিশকে বলেছে। পরে বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ ড্রাইভার হেলপার ও সুপার ভাইজারকে আটক করে আদালতে পাঠায়। আদালত থেকে তারা জামিন নেন।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় বড়াইগ্রাম থানায় মামলা করার অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু এখানে মামলা হয়নি। পরে মির্জাপুর থানায় মামলা করি।

নাটোরের বড়াইগ্রাম আমলী আদালত সূত্রে জানা যায়, বড়াইগ্রাম থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) শরিফুল ইসলাম সাক্ষরিত চালান মূলে ঢাকা-রাজশাহী চলাচলকারি ইউনিক রোড রয়েলস বাসের চালক বাবলু ইসলাম (৩৫) চালকের সহকারী সুমন ইসলাম (৩৫) ও সুপারভাইজার মাহবুল আলমকে (৩৮) বুধবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় তাদেরকে আদালতের সামনে হাজির করলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তৌহিদুর রহমান সুমন শুনানী অন্তে আসামিদের জামিনে মুক্তির আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের কোর্ট ইন্সপেক্টর মোস্তফা কামাল জানান, মামলাটি ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারার হওয়ায় এবং আসামিদের বিরুদ্ধে কোন ধর্তব্য অপরাধের অভিযোগ সুনির্দিষ্ট না থাকায় আদালত তাদের জামিনের আদেশ দেন।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, বাসে ডাকাতি বা বাসের যাত্রীদের ধর্ষণের ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ দেননি। ঘটনাস্থলও অন্য জেলায়। তাই আটক বাসের চালক, চালকের সহকারী ও সুপারভাইজারকে কার্যবিধি ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাসের যাত্রীরা মৌখিকভাবে পুলিশকে ডাকাতি হওয়ার কথা বলেছেন। ঘটনাটি টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে সংঘটিত হয়েছে বলেও জানা গেছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের সহকারী পুলিশ সুপার (মির্জাপুর সার্কেল) এইচ এম মাহবুব রেজওয়ান সিদ্দিকী বলেন, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে নাটোরের এক ভুক্তভোগী যাত্রী ডাকাতি ও নারী শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন। ঘটনাটি আলোচিত। বিষয়টি অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।