ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
চট্টগ্রামে চলন্ত অটোরিকশায় মুখোশধারীদের পেট্রলবোমা হামলা, দগ্ধ ২ নারী হাতিরঝিলে দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত যুবদলকর্মী, অবস্থা আশংকাজনক ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ডা. সুমিত সাহা গ্রেফতার রবার্ট এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজার নথি প্রকাশ এপ্রিলের রাতের আকাশে দুর্লভ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক চমক কিশোরগঞ্জে ভেজাল খাদ্য তৈরির দায়ে ৪ প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা মুন্সীগঞ্জে পুকুর থেকে ৩২৬ রাউন্ড চায়না রাইফেলের গুলি উদ্ধার গণ-অভ্যুত্থানের পর সমঝোতার সংস্কার দরকার: এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ভিসির প্রতীকী চেয়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ কুয়েট শিক্ষার্থীদের আবাসিকে গ্যাস সংযোগ নিয়ে প্রতারণা: সতর্ক করলো তিতাস গ্যাস

ডিজিএফআই সদর দপ্তরে গোপন বন্দিশালার সন্ধান: তদন্ত কমিশনের চাঞ্চল্যকর তথ্য

গুমের ঘটনায় নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের আশঙ্কা এবার সত্যি হয়ে উঠতে পারে। গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন প্রকাশ করেছে যে, ঢাকার ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স)-এর সদর দপ্তরের ভেতরে ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত একটি গোপন বন্দিশালা ছিল, যেখানে নিখোঁজ ব্যক্তিদের আটক রাখা হতো বলে অনুমান করা হচ্ছে। 

কমিশন জানায়, এই বন্দিশালায় ২০ থেকে ২২টি সেল বা কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষ এখন খালি, তবে তদন্তে পাওয়া বিবরণ এবং ভুক্তভোগীদের বর্ণনার সঙ্গে এর সম্পূর্ণ মিল পাওয়া গেছে। এই তথ্য গুম হয়ে যাওয়া মানুষদের পরিবারের জন্য চরম শোক এবং ক্ষোভের প্রতিধ্বনি তৈরি করেছে। বহু বছর ধরে অপেক্ষার পর, অবশেষে তাঁরা জানতে পারছেন তাঁদের প্রিয়জনদের সম্ভবত কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার গুলশানে কমিশনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমরা ডিজিএফআই সদর দপ্তরের একটি দোতলা ভবনে গোপন সেল পেয়েছি। এই সেলের বর্ণনা এবং ভুক্তভোগীদের দেওয়া তথ্যের মধ্যে স্পষ্ট মিল রয়েছে।”

কমিশন আরও জানায়, গত ১৩ কার্যদিবসে ৪০০টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্যে অনেক অভিযোগই নিখোঁজ থাকা মানুষদের পরিবারের কাছ থেকে এসেছে। এক মা, যার ছেলে ২০১৪ সালে গুম হয়েছিলেন, এই সংবাদ শুনে বলছিলেন, “আমরা এতদিন জানতাম না আমার ছেলে কোথায় আছে। আজ যখন জানতে পারছি, যে ওকে এই আয়নাঘরে নিয়ে গুম করে রাখা হয়েছিল, তখনও যেন এক অসহায় শূন্যতায় ডুবে যাচ্ছি।”

গুমের ঘটনা ২০১০ সাল থেকে শুরু হয়, যখন শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় ছিল। ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের আগে গুমের সংখ্যা বেড়ে যায়, এবং অনেক রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্রনেতা, ও সাধারণ মানুষ হঠাৎই নিখোঁজ হতে শুরু করে। এর পর দীর্ঘ এক দশক ধরে, নিখোঁজদের পরিবারগুলো আশায় ছিল, তাদের প্রিয়জনরা ফিরবে। কিন্তু আজ তারা জানছে, অনেকেরই হয়তো ফিরে আসার আর কোনো পথ নেই।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারগুলো আরও সরব হয়েছে, তাদের প্রিয়জনদের সন্ধানে। এখন, এই ‘আয়নাঘর’ এবং ডিজিএফআই কার্যালয়ে পাওয়া প্রমাণ তাদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে, তবে সেই জবাবের সঙ্গে জুড়ে থাকছে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত।

তদন্ত কমিশনের তথ্যগুলো সামনে আসার পর, সারা দেশে মানবাধিকার সংগঠনগুলো গুমের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের বিচার দাবি করেছে। নিখোঁজদের পরিবারগুলোও এখন ন্যায়বিচারের আশায় অপেক্ষায় রয়েছে।

জনপ্রিয়

চট্টগ্রামে চলন্ত অটোরিকশায় মুখোশধারীদের পেট্রলবোমা হামলা, দগ্ধ ২ নারী

ডিজিএফআই সদর দপ্তরে গোপন বন্দিশালার সন্ধান: তদন্ত কমিশনের চাঞ্চল্যকর তথ্য

প্রকাশিত: ০৮:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪

গুমের ঘটনায় নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের আশঙ্কা এবার সত্যি হয়ে উঠতে পারে। গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন প্রকাশ করেছে যে, ঢাকার ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স)-এর সদর দপ্তরের ভেতরে ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত একটি গোপন বন্দিশালা ছিল, যেখানে নিখোঁজ ব্যক্তিদের আটক রাখা হতো বলে অনুমান করা হচ্ছে। 

কমিশন জানায়, এই বন্দিশালায় ২০ থেকে ২২টি সেল বা কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষ এখন খালি, তবে তদন্তে পাওয়া বিবরণ এবং ভুক্তভোগীদের বর্ণনার সঙ্গে এর সম্পূর্ণ মিল পাওয়া গেছে। এই তথ্য গুম হয়ে যাওয়া মানুষদের পরিবারের জন্য চরম শোক এবং ক্ষোভের প্রতিধ্বনি তৈরি করেছে। বহু বছর ধরে অপেক্ষার পর, অবশেষে তাঁরা জানতে পারছেন তাঁদের প্রিয়জনদের সম্ভবত কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার গুলশানে কমিশনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমরা ডিজিএফআই সদর দপ্তরের একটি দোতলা ভবনে গোপন সেল পেয়েছি। এই সেলের বর্ণনা এবং ভুক্তভোগীদের দেওয়া তথ্যের মধ্যে স্পষ্ট মিল রয়েছে।”

কমিশন আরও জানায়, গত ১৩ কার্যদিবসে ৪০০টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্যে অনেক অভিযোগই নিখোঁজ থাকা মানুষদের পরিবারের কাছ থেকে এসেছে। এক মা, যার ছেলে ২০১৪ সালে গুম হয়েছিলেন, এই সংবাদ শুনে বলছিলেন, “আমরা এতদিন জানতাম না আমার ছেলে কোথায় আছে। আজ যখন জানতে পারছি, যে ওকে এই আয়নাঘরে নিয়ে গুম করে রাখা হয়েছিল, তখনও যেন এক অসহায় শূন্যতায় ডুবে যাচ্ছি।”

গুমের ঘটনা ২০১০ সাল থেকে শুরু হয়, যখন শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় ছিল। ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের আগে গুমের সংখ্যা বেড়ে যায়, এবং অনেক রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্রনেতা, ও সাধারণ মানুষ হঠাৎই নিখোঁজ হতে শুরু করে। এর পর দীর্ঘ এক দশক ধরে, নিখোঁজদের পরিবারগুলো আশায় ছিল, তাদের প্রিয়জনরা ফিরবে। কিন্তু আজ তারা জানছে, অনেকেরই হয়তো ফিরে আসার আর কোনো পথ নেই।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারগুলো আরও সরব হয়েছে, তাদের প্রিয়জনদের সন্ধানে। এখন, এই ‘আয়নাঘর’ এবং ডিজিএফআই কার্যালয়ে পাওয়া প্রমাণ তাদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে, তবে সেই জবাবের সঙ্গে জুড়ে থাকছে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত।

তদন্ত কমিশনের তথ্যগুলো সামনে আসার পর, সারা দেশে মানবাধিকার সংগঠনগুলো গুমের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের বিচার দাবি করেছে। নিখোঁজদের পরিবারগুলোও এখন ন্যায়বিচারের আশায় অপেক্ষায় রয়েছে।