চীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি শীর্ষ ফ্যাশন ব্র্যান্ড ক্যালভিন ক্লেইন ও টমি হিলফিগার নিষিদ্ধ হওয়ায় মার্কিন ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি পিভিএইচ করপোরেশন, যারা এই দুটি ব্র্যান্ডের মালিক, তাদেরকে চীন ‘অনির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে নিষিদ্ধ করেছে। এ ঘটনায় মার্কিন ব্যবসায়ীরা চীনের বাজারে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে চীন প্রথমবারের মতো পিভিএইচ করপোরেশন এবং ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক বায়োটেক প্রতিষ্ঠান ইলুমিনাকে নিষিদ্ধ করেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে চীনা কর্তৃপক্ষ এখন থেকে এই কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে সরাসরি জড়িয়ে ফেলেছে, যা বিশ্ববাজার ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন চায়নার প্রেসিডেন্ট মাইকেল হার্ট বলেন, “অন্যান্য কোম্পানিগুলো এখন আমাদের কাছে পরামর্শ চাইছে। তারা জানতে চাচ্ছে, তাদের পরবর্তী লক্ষ্য কী হতে পারে? যদি তাদের চীন থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয়, তাহলে এর তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী হতে পারে?”
চীনের এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় চীন মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগলের বিরুদ্ধে অ্যান্টি ট্রাস্ট তদন্ত শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়াও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর ১৫ শতাংশ এবং অপরিশোধিত তেল, কৃষি যন্ত্রপাতি, পিকআপ ট্রাক ও বড় ইঞ্জিনের গাড়ির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে চীন। এই সিদ্ধান্ত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে।
চীনের অভিযোগ, পিভিএইচ ও ইলুমিনা চীনা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। তবে চীন এখনো এই অভিযোগের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়নি বা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কী ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে, সে সম্পর্কেও কিছু জানায়নি।
পিভিএইচ করপোরেশন জানিয়েছে, তারা সব আইন মেনে চলেছে। তবে চীনের এই সিদ্ধান্তে তারা ‘অবাক ও হতাশ’। প্রতিষ্ঠানটি চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আশা করছে। অন্যদিকে, ইলুমিনার সিইও জ্যাকব থাইসেন বলেছেন, তারা চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন এবং বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন। চীনের বাজার ইলুমিনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশটি তাদের মোট বিক্রির প্রায় ৭ শতাংশ সরবরাহ করে।
চীনের স্থানীয় বায়োটেক কোম্পানিগুলো ইলুমিনার বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপকে নিজেদের জন্য সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইলুমিনার বিকল্প হিসেবে চীনা প্রতিষ্ঠান জিনমাইন্ড এবং এমজিআই কম দামে যন্ত্রপাতি সরবরাহের প্রস্তাব দিচ্ছে। জিনমাইন্ডের প্রধান অপারেটিং অফিসার ঝো ঝিলিয়াং বলেছেন, “এটি স্থানীয় সিকোয়েন্সিং মেশিন প্রস্তুতকারকদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ।”
বিশ্লেষকদের মতে, চীন প্রতিশোধমূলক বাণিজ্যনীতির ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে পারে, যাতে অর্থনীতিতে অতিরিক্ত নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। চীনে পিভিএইচের প্রায় ১ হাজার কর্মী রয়েছে, এবং টমি হিলফিগারের এক বিক্রয়কর্মী বলেছেন, “আমরা আমাদের চাকরি নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। আমাদের ভবিষ্যৎ কী, আমরা এখনো কিছুই জানি না।”
চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সংঘাতের এই নতুন অধ্যায় বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘অনির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে তালিকাভুক্তি কত দূর যাবে এবং এর প্রভাব কতটা গভীর হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে এটি স্পষ্ট, বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্যও ঝুঁকি বাড়ছে।