“আমার আমেরিকান স্বপ্ন মৃত এবং তা মৃতই থাকবে”—৩১ মে ফেসবুকে এমন পোস্ট দিয়েছিলেন মেধাবী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী শ্বাশত সৌম্য। মাত্র একদিন পর, ২ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার কেলৌনা ক্যাম্পাসের পাশের ওকানাগান লেকে পাওয়া যায় তার নিথর দেহ। কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তার মরদেহ আগামী ২০ জুন (শুক্রবার) দেশে পাঠানো হবে।
মাত্র ২৮ বছর বয়সেই জীবন থেমে গেল কুষ্টিয়ার ছেলে, প্রফেসর শিখা চক্রবর্তী ও সুশান্ত প্রামাণিকের বড় ছেলে সৌম্যের। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী এই তরুণ ঢাকা আইডিয়াল স্কুল, নটর ডেম কলেজ হয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে জিপিএ ৪.০০ পেয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর শিক্ষকতা শুরু করেন ব্র্যাক ও বুয়েটের একই বিভাগে।
২০২২ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে স্কলারশিপে ভর্তি হন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (MIT)। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পিএইচডির শেষ পর্যায়ে ছিলেন তিনি। তার গবেষণায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সাড়া পড়ে। সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তিনি।
২৯ মে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় এনএলপি গবেষক দলের আমন্ত্রণে একটি টকে অংশ নেন সৌম্য। বক্তৃতার প্রশংসা পেয়ে তাকে সেখানে দুই সপ্তাহ কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়। সৌম্য এক রাত ভেবে রাজি হয়ে যান, কিন্তু তার ঠিক পরদিনই ফেসবুকে লেখেন:
“আমার আমেরিকান স্বপ্ন মৃত এবং তা মৃতই থাকবে… যুক্তরাষ্ট্র এখন দক্ষ অভিবাসীদের নিরুৎসাহিত করছে।”
পরদিন, ২ জুন সকালে, ওকানাগান লেকে তার লাশ ভেসে থাকতে দেখা যায়।
এ মৃত্যু শুধু তার পরিবার নয়, গোটা দেশ এবং বৈশ্বিক গবেষণা জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পরিবার বলছে, ১ জুন রাত ১১টার পর থেকে সৌম্যের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
কানাডার পুলিশ জানায়, শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই এবং তদন্ত চলছে। পুলিশ ধারণা করছে, হয়তো অন্ধকারে হাঁটার সময় পা পিছলে লেকে পড়ে যান তিনি। MIT এ ঘটনাকে “অপ্রত্যাশিত ও মর্মান্তিক” বলে বর্ণনা করেছে।
সামাজিক মাধ্যমে এই মৃত্যু নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। কেউ বলছেন আত্মহত্যা, কেউ বলছেন দুর্ঘটনা, কেউ মেনে নিতে পারছেন না এমন পরিণতি। কিন্তু একথা অনস্বীকার্য, এমন একটি অনন্য মেধা হয়তো শত বছরেও আর তৈরি হবে না।