মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে যুদ্ধ থামানোর তাঁর প্রতিশ্রুতি বড় ভূমিকা রেখেছে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনে চলমান সংঘাতের মধ্যে, মার্কিন ভোটাররা যুদ্ধ বন্ধের আশা নিয়ে ট্রাম্পকে নির্বাচিত করেছেন।
শুধু মার্কিনিরাই নন, বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রত্যাশা– যুদ্ধ যেন বন্ধ হয়। ট্রাম্প কি এই প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবেন– এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে নির্বাচনের ফলাফল আসার পরপরই ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন তাঁর অবস্থান। গতকাল বুধবার বিজয়ীর ভাষণে তিনি আবারও যুদ্ধ বন্ধের অঙ্গীকার করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি যুদ্ধ শুরু করতে যাচ্ছি না; যুদ্ধ থামাতে যাচ্ছি।’ ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন মধ্যপ্রাচ্যেও নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, কমলা হ্যারিসের চেয়ে মধ্যপ্রাচ্যে লড়াই বন্ধে ট্রাম্প বেশি কার্যকর ভূমিকায় যেতে পারেন বলেই মনে করা হচ্ছে। এপির সাবেক আঞ্চলিক সম্পাদক ড্যান প্যারি বলেন, ইসরায়েলে একটা বিষয় প্রচলিত আছে যে, তারা যা কিছু করবে, সেটাকেই সমর্থন দেবেন ট্রাম্প। তবে সেখানে ট্রাম্পের কিছু বিরোধীও আছেন। ইসরায়েলের উদারপন্থিরা মনে করেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকলে তা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য ভালো, ইসরায়েলের জন্য নয়। তিনি বলেন, ইসরায়েলের একটি অংশ এও মনে করে যে, ট্রাম্প মানবিক বিষয়গুলোতে নজর দেন না। তবে ট্রাম্পের কথা নেতানিয়াহু মানতে পারেন। এ কারণে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা এখন বেশি।
এ নিয়ে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘ট্রাম্পের জয় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জয়। তবে সবকিছুই যে তিনি পাবেন– এমনটা নয়।’ এতে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নির্বাচনের প্রভাব অনেক বেশি। এটি নেতানিয়াহুর জয়। তিনি ট্রাম্পের জয়ের উল্লাসকে লুকানওনি। বাইডেন প্রশাসন নেতানিয়াহু সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে গেছে। তাদের মধ্যে গাজায় ত্রাণ সহায়তা দেওয়ায় বাধা, জাতিসংঘের বিরুদ্ধে অভিযান, জিম্মি উদ্ধারে চুক্তির বিরোধিতাসহ নানা ইস্যুতে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। বাইডেন প্রশাসন পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের বসতি স্থাপনেরও সমালোচনা করে আসছে। তারা ইসরায়েলের বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছিলেন। ট্রাম্পের আসন্ন সরকার ফিলিস্তিনের জাতিসংঘের সহায়তাকারী ইউএনআরডব্লিউএকে কোনো ধরনের সমর্থন দেবে না বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। তবে সব কিছুর পর ট্রাম্পের যুদ্ধবিরোধী অবস্থানের কারণে হামাসের সঙ্গে লড়াই বন্ধ হওয়ার ক্ষীণ আলো দৃশ্যমান রয়েছে।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধেও প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। বুধবার পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে ইউক্রেনের মানুষের মধ্যে ভয় ও উদ্বেগ মিশ্রিত প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের তিন বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। এ যুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের বড় আর্থিক ও সামরিক সহায়তা পেয়ে আসছিল দেশটি। ট্রাম্প সহায়তা বন্ধ করে দেবেন বলে বারবার বলে আসছেন। এতে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন টিকে থাকতে পারবে কি না– সে প্রশ্ন সামনে আসছে। সম্প্রতি রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেনের মাটিতে লড়ছে শত শত উত্তর কোরিয়ার সেনা।
ট্রাম্পের জয়ের আভাস পেয়ে সামাজিক মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তাঁর প্রত্যাশা কিয়েভ ও ওয়াশিংটনের সম্পর্ক অটুট থাকবে। কিন্তু ইউক্রেন সরকারের এমন আশার পরও এটা পরিষ্কার, ট্রাম্পের বিজয় কিয়েভের জন্য ভারি হবে। গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৯ মাস ইউক্রেনকে দেওয়া জো বাইডেন প্রশাসনের অনুদান আটকে দিয়েছিল ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টি। এর জেরে কিয়েভ তাদের যুদ্ধকালীন বাজেট ছোট করতে বাধ্য হয়।
কিয়েভ স্কুল অব ইকোনমিকসের সভাপতি টিমোফাই মাইলোভানোভ এক ফেসবুক পোস্টে ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘আমাদেরকে এখন ট্রাম্পের বিশ্বে বসবাস করতে হবে। আমি সন্দিহান যে, আসন্ন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ হতে যাচ্ছে; যদিও তিনি অঙ্গীকার করেছেন। তবে আমরা নিশ্চিতভাবে এতে বিরক্ত হবো না।’ ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টি সব সময় দাবি করে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বেশ ভালো। তারা জেলেনস্কিকে ‘ইতিহাস সেরা বিক্রয়কর্মী’ বলে আখ্যায়িত করে আসছে।