ফের মানচিত্রে যুক্ত হচ্ছে সন্দ্বীপ, এবং এ প্রক্রিয়ায় নতুন চরও যুক্ত হচ্ছে। তবে, কাগজপত্রে বিলীন হয়ে যাওয়া সন্দ্বীপের সঙ্গে নতুন চরগুলোর কোনো আইনি সংযোগ এখনও ঘটেনি। অতীতে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়, সন্দ্বীপের নতুন চরগুলোর বেশিরভাগ অংশকে নোয়াখালী জেলার সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
গত ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর সীমানা বিরোধ ফের সামনে চলে আসে। জানা গেছে, সাবেক এমপি মাহফুজুর রহমান মিতার অসহযোগিতায় সন্দ্বীপের বাসিন্দারা বারবার প্রতিবাদ জানালেও, শীর্ষ মহল থেকে সীমানা বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়। বর্তমানে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কাজ চলছে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বঙ্গোপসাগরের বুকে নতুন সন্দ্বীপ তৈরির প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক বছরে সাগরে পলিমাটি জমে বাড়ছে এই দ্বীপ। বর্তমানে সন্দ্বীপের আয়তন প্রায় ৭২১ বর্গকিলোমিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে নতুন চরগুলোর মধ্যে জাহাইজ্যারচর, ভাসানচর, উরিরচর সন্দ্বীপের সঙ্গে মিশে গেছে।
বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) এর বিজ্ঞানী ড. মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, “আমরা স্যাটেলাইট ছবির মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলের পর্যবেক্ষণ করছি এবং দেখছি, জাহাইজ্যারচর ও ভাসানচর ধীরে ধীরে সন্দ্বীপের অংশ হয়ে উঠছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম শহীদুল ইসলাম বলেন, “প্রতিবছর দুই থেকে তিন বিলিয়ন টন পলি উপকূলে জমে থাকে, যার এক অংশ সন্দ্বীপে জড়ো হয়ে দ্বীপটির আয়তন বাড়াচ্ছে।”
সন্দ্বীপের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, ভাসানচর ও অন্যান্য চর সন্দ্বীপের অন্তর্ভুক্ত করা হোক। ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মামলা হয়েছিল। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকারের একতরফা সিদ্ধান্তে আদেশ বাতিল হয়নি।
বর্তমানে, সন্দ্বীপের সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চূড়ান্ত বৈঠক ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর মধ্যে সীমানা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
সন্দ্বীপ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সভাপতি নুরুল আক্তার জানিয়েছেন, “ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ায় সন্দ্বীপে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে বড় শিল্পকলকারখানা গড়ে উঠবে এবং গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন করার মাধ্যমে সন্দ্বীপকে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব।”
এছাড়া, এলজিইডি সন্দ্বীপ উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল আলীম জানান, সন্দ্বীপের মূল সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করা হবে, কারণ ফেরি সার্ভিস চালুর পর এখানে যানবাহন প্রবাহ ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
সন্দ্বীপের নতুন চরের সঙ্গে সীমানা বিরোধের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ১০ এপ্রিল হতে পারে, যা দ্বীপটির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় যোগ করতে যাচ্ছে।