যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, জেলেনস্কি খুব সহজেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থ গ্রহণ করেছেন, কিন্তু এর জন্য কোনো কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেননি। রোববার (৯ মার্চ) বার্তাসংস্থা আনাদোলু এ তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে ওভাল অফিসে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর থেকে ট্রাম্প ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের সমালোচনা অব্যাহত রেখেছেন। এবার তিনি অভিযোগ করেছেন যে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শাসনামলে জেলেনস্কি খুব সহজেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাহায্যের অর্থ পেয়েছেন। ফক্স নিউজে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “তিনি বাইডেনের সময় এই দেশ (যুক্তরাষ্ট্র) থেকে অর্থ নিয়েছেন, ঠিক যেমন একটি শিশুর কাছ থেকে ক্যান্ডি নেওয়া হয়। এটা ছিল একেবারেই সহজ।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “আমি মনে করি না তিনি (জেলেনস্কি) কৃতজ্ঞ। আমরা তাকে ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছি, অথচ তিনি শুধু এই যুদ্ধ এবং তাদের সাহসিকতা নিয়ে কথা বলছেন।’’ ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, তিনিই ইউক্রেনকে জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাংক অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন এবং দাবি করেন যে, যদি ২০২২ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট থাকতেন, তাহলে ইউক্রেন যুদ্ধের সূচনা হতো না।
ইউক্রেনে মার্কিন ও ইউরোপীয় সহায়তা প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, “জেলেনস্কির উচিত ইউরোপকে বোঝানো যে তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) পাশে থাকতে হবে, কারণ আমরা বিপদের মধ্যে নেই, বরং ইউরোপই বেশি ঝুঁকির মুখে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, “ইউরোপ রাশিয়াকে প্রচুর অর্থ দিচ্ছে, অথচ যুক্তরাষ্ট্র সেখানে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে।”
তবে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের এই দাবিকে ভুল বলেছেন, তাদের মতে ইউরোপ সম্মিলিতভাবে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কিছুটা বেশি অর্থ সহায়তা দিয়েছে।
যখন ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন ও ইসরায়েলের ব্যাপারে একই নীতি অনুসরণ করছে কিনা, তখন তিনি বলেন, “এ দুটি বিষয় একেবারেই ভিন্ন, সম্পূর্ণ আলাদা পরিস্থিতি। এখানে ক্ষমতার বিভিন্ন স্তরের ব্যাপার রয়েছে।”
প্রসঙ্গত, ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যকার সম্পর্ক গত মাসে আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার জন্য জেলেনস্কিকে দায়ী করেন এবং অভিযোগ করেন যে, তিনি মার্কিন সাহায্যের প্রতি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন না। এই বিতর্কের মধ্যেই ওভাল অফিসের বৈঠকে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং পরে ট্রাম্প ইউক্রেনের সামরিক সহায়তা স্থগিত করেন। একইসঙ্গে কিয়েভকে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য চাপ দেন।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে এবং রাশিয়া এটিকে স্বাগত জানায়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে ওঠে।