বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে চীন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। একই সময়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
বাণিজ্যের উত্থান-পতন
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুন মাসে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশে মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ১৭ শতাংশে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। অপরদিকে, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য একই সময়ে কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশে, যা আগের বছরের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ পয়েন্ট কম।
চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের কারণ
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ শিল্পায়নের জন্য চীনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। চীনের শিল্প কাঁচামাল, সেমি-ফিনিশড পণ্য এবং ভোগ্যপণ্য সাশ্রয়ী দামে সরবরাহ করে। তিনি আরও বলেন, চীনের মূল্য প্রতিযোগিতার পাশাপাশি ভৌগোলিক কারণে কম পরিবহন ব্যয়ও আমদানির ব্যয় কমিয়ে আনে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, “চীনের বৈশ্বিক মূল্য প্রতিযোগিতা এটিকে শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বব্যাপী অনেক দেশের জন্য আকর্ষণীয় বাণিজ্য অংশীদার করে তুলেছে। চীনের রপ্তানিকারকরা বাংলাদেশি আমদানিকারকদের বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে থাকেন, যা বাণিজ্যকে আরও শক্তিশালী করেছে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, চীনের মূল্যস্ফীতি তাদের পণ্যকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলেছে।
বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য
বাংলাদেশ মূলত চীন থেকে শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি এবং ভোগ্যপণ্য আমদানি করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে পাটের সুতা, পাটজাত পণ্য, হাইড চামড়া এবং প্রক্রিয়াজাত চুল রপ্তানি করা হয়।
বৈশ্বিক বাণিজ্য চিত্রে চীন
বৈশ্বিক বাণিজ্যে চীনের শক্ত অবস্থান বজায় রয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ১৭৪টি দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল চীনের। তবে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট আমদানির কারণে সবচেয়ে বড় বাণিজ্য ঘাটতি চীনের তাইওয়ানের সঙ্গে রয়েছে। এছাড়া জাপানের সঙ্গে ১১৯০ কোটি ডলার এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ৩৭৮০ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।
এদিকে রাশিয়া, সৌদি আরব এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো তেল ও কাঁচামাল সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গেও চীনের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। লোহা, সোনা, লিথিয়াম এবং তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল আমদানি চীনের এই ঘাটতির অন্যতম কারণ।
২০১০ সালের শুরুর দিকে চীন বাংলাদেশের আমদানিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যায় এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শিল্পায়ন ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে চীন থেকে সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্যের চাহিদা বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি সত্ত্বেও এ সম্পর্ককে দীর্ঘমেয়াদে আরও শক্তিশালী করবে।