ঢাকা , শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
ক্রিমিয়া নিয়ে ছাড়? শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়াকে স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: ব্লুমবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইয়েমেনের রাস ঈসা বন্দরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮০, আহত ১৭১ দিলীপ ঘোষের বিয়ে ঘিরে প্রশ্ন: আরএসএস প্রচারকেরা কি বিয়ে করতে পারেন? সংগঠনটির প্রচারক ছিলেন মোদিও নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর চট্টগ্রামে শিশুর লাশ উদ্ধার টাঙ্গাইলে অবৈধ ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু শায়েস্তাগঞ্জে আগুনে পুড়ল ১৫ টি দোকান বিডিআর হত্যাকাণ্ড: সহায়ক তথ্য আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি মালয়েশিয়ায় ১৬৫ বাংলাদেশিসহ ৫০৬ জন অভিবাসী আটক ইভ্যালির অর্থ আত্মসাৎ: গ্রাহকদের মানববন্ধন ও রাসেলের গ্রেফতারের দাবি কক্সবাজার-মহেশখালী রুটে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলো সি-ট্রাক

ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ও চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের পরামর্শ আমদানিনির্ভর নীতিমালার কারণে দেশের জ্বালানি খাত ঝুঁকির মুখে

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এবং অনুগত ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুযোগ ও প্রতিযোগিতা ছাড়াই অস্বচ্ছভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। চাহিদা না থাকলেও ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অতিরিক্ত স্থাপন করা হয়েছে। দেড় দশকে ১ লাখ কোটি টাকা শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে সামিট, ইউনাইটেডসহ কয়েকটি বিদ্যুৎ কোম্পানির পকেটে গেছে, যারা তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিল। আমদানিনির্ভর নীতিমালার কারণে দেশের জ্বালানি খাত ঝুঁকির মুখে। খরচ বেড়েছে। এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। অদক্ষ এবং ব্যয়বহুল কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে হবে। অসম চুক্তিগুলোর অন্যায্য শর্ত নিয়ে আরও দরকষাকষি করতে হবে।

বৈষম্যহীন টেকসই অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।

প্রতিবেদনের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য জ্বালানির রূপান্তর নীতি শীর্ষক অধ্যায়ে দেশে জ্বালানি খাতের পরিস্থিতি, গত সরকারের অনিয়ম ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি জ্বালানি খাতের সংকট থেকে উত্তরণের জন্য স্বল্প এবং দীর্ঘময়াদি সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার প্রণীত বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৫০ সালে দেশের বিদ্যুতের চাহিদা হবে ৬০ হাজার মেগাওয়াট। এ জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকবে ৭৯ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এই বিপুল কর্মযজ্ঞে বিনিয়োগ লাগবে ১৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

এতে বলা হয়, এমন উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাকে রেখে বিশেষ আইনে টেন্ডার ছাড়াই পছন্দের ব্যবসায়ীদের একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দেওয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই না করে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করা হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত গত আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী কোম্পানিগুলোর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতার কারণে ২০২১-২২ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরেই ক্যাপাসিটি চার্জ বেড়েছে ৬০ শতাংশ। ভর্তুকি বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সক্ষমতা কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ৩২ হাজার কোটি টাকা বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে খরচ হয়েছে। ক্যাপাসিটি চার্জ পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে গোপালগঞ্জের ব্যবসায়ী গ্রুপ সামিট, তারা এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার নিয়েছে। তৎকালীন জ্বালানি উপেদষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহীর সুপারিশে সামিটকে এলএনজির ব্যবসাও দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ দেওয়া হতো শেখ হাসিনার পরামর্শে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি হয়েছে মূলত নিম্নমানের যন্ত্রপাতি কেনা এবং ভূমি অধিগ্রহণে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংকট মোকাবিলায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

স্বল্পমেয়াদি সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে– এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) শক্তিশালী ও দক্ষ করে তোলা, অদক্ষ ও ব্যয়বহুল কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া, বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন, বাস্তবভিত্তিক জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়ন করা, নবায়নেযাগ্য জ্বালানির ওপর জোর দেওয়া, এ খাতে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া।
দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে– একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ তৈরি করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ করা, নিম্ন আয়ের মানুষের জ্বালানি অধিকার রক্ষার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া, নবায়নেযাগ্য জ্বালানির জন্য দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করা ইত্যাদি।

জনপ্রিয়

ক্রিমিয়া নিয়ে ছাড়? শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়াকে স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: ব্লুমবার্গ

ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ও চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের পরামর্শ আমদানিনির্ভর নীতিমালার কারণে দেশের জ্বালানি খাত ঝুঁকির মুখে

প্রকাশিত: ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এবং অনুগত ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুযোগ ও প্রতিযোগিতা ছাড়াই অস্বচ্ছভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। চাহিদা না থাকলেও ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অতিরিক্ত স্থাপন করা হয়েছে। দেড় দশকে ১ লাখ কোটি টাকা শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে সামিট, ইউনাইটেডসহ কয়েকটি বিদ্যুৎ কোম্পানির পকেটে গেছে, যারা তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিল। আমদানিনির্ভর নীতিমালার কারণে দেশের জ্বালানি খাত ঝুঁকির মুখে। খরচ বেড়েছে। এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। অদক্ষ এবং ব্যয়বহুল কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে হবে। অসম চুক্তিগুলোর অন্যায্য শর্ত নিয়ে আরও দরকষাকষি করতে হবে।

বৈষম্যহীন টেকসই অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।

প্রতিবেদনের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য জ্বালানির রূপান্তর নীতি শীর্ষক অধ্যায়ে দেশে জ্বালানি খাতের পরিস্থিতি, গত সরকারের অনিয়ম ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি জ্বালানি খাতের সংকট থেকে উত্তরণের জন্য স্বল্প এবং দীর্ঘময়াদি সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার প্রণীত বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৫০ সালে দেশের বিদ্যুতের চাহিদা হবে ৬০ হাজার মেগাওয়াট। এ জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকবে ৭৯ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এই বিপুল কর্মযজ্ঞে বিনিয়োগ লাগবে ১৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

এতে বলা হয়, এমন উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাকে রেখে বিশেষ আইনে টেন্ডার ছাড়াই পছন্দের ব্যবসায়ীদের একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দেওয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই না করে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করা হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত গত আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী কোম্পানিগুলোর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতার কারণে ২০২১-২২ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরেই ক্যাপাসিটি চার্জ বেড়েছে ৬০ শতাংশ। ভর্তুকি বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সক্ষমতা কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ৩২ হাজার কোটি টাকা বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে খরচ হয়েছে। ক্যাপাসিটি চার্জ পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে গোপালগঞ্জের ব্যবসায়ী গ্রুপ সামিট, তারা এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার নিয়েছে। তৎকালীন জ্বালানি উপেদষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহীর সুপারিশে সামিটকে এলএনজির ব্যবসাও দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ দেওয়া হতো শেখ হাসিনার পরামর্শে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি হয়েছে মূলত নিম্নমানের যন্ত্রপাতি কেনা এবং ভূমি অধিগ্রহণে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংকট মোকাবিলায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

স্বল্পমেয়াদি সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে– এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) শক্তিশালী ও দক্ষ করে তোলা, অদক্ষ ও ব্যয়বহুল কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া, বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন, বাস্তবভিত্তিক জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়ন করা, নবায়নেযাগ্য জ্বালানির ওপর জোর দেওয়া, এ খাতে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া।
দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে– একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ তৈরি করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ করা, নিম্ন আয়ের মানুষের জ্বালানি অধিকার রক্ষার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া, নবায়নেযাগ্য জ্বালানির জন্য দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করা ইত্যাদি।