সান সিরো যেন শেষ বাঁশির আগে নিঃশ্বাস আটকে রেখেছিল। কিংসলে কোমানের শেষ মুহূর্তের একমাত্র ভলি পোস্টের উপর দিয়ে চলে যেতেই গ্যালারি থেকে যেন তুমুল এক হাঁফ ছেড়ে বাঁচার শব্দ উঠল। পুরো স্টেডিয়াম গর্জে উঠল উল্লাসে—ইন্টার মিলান ২-২ গোলে বায়ার্ন মিউনিখকে রুখে দিয়ে সামগ্রিক ফল ৪-৩ ব্যবধানে জয়লাভ করে জায়গা করে নিল চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে।
শুরু থেকেই দারুণ ছন্দে থাকা নেরাজ্জুরিরা এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে ইউরোপীয় ফুটবলে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিল। লাওতারো মার্তিনেজ ম্যাচশেষে বলেই ফেলেন, “এ এক মহাকাব্যিক ম্যাচ। ইন্টার কখনো মরে না। ইন্টারের হৃদয় আছে, মস্তিষ্কও আছে। আমরা বড় কিছুর জন্য প্রস্তুত।”
ম্যাচের শুরুতেই হ্যারি কেইনের গোলে সমতায় ফিরেছিল দুই দলের সম্মিলিত লড়াই। তবে মার্তিনেজের দারুণ হেডে গোল করে ইন্টার আবার এগিয়ে যায়। এরপর হাকান চালানওগলুর কর্নার থেকে বেনজামিন পাভার্ডের হেড ইন্টারকে আরও এগিয়ে দেয়, আর তখনই যেন পুরো সান সিরো উৎসবে মাতোয়ারা।
বায়ার্ন অবশ্য হাল ছাড়েনি। এরিক ডায়ারের ৭৬ মিনিটের গোলে তারা আবার ম্যাচে ফেরার আশা জাগায়। ম্যাচ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে কেইনের পায়ে গোলের সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল, কিন্তু তার শট চলে যায় বাইরে। ভাগ্য যেন সেদিন ইন্টারের পাশেই ছিল।
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টিতে খেলা কঠিন হয়ে উঠেছিল, তবুও ইন্টার খেলোয়াড়রা ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করেছেন। ফেদেরিকো দিমারকোর ছোট ভুলে কেইনের গোল এলেও, আলেসান্দ্রো বাস্তোনির শেষ মুহূর্তের ট্যাকল ইন্টারকে বাঁচিয়ে দেয়।
বায়ার্নের কোচ ভিনসেন্ট কোম্পানির কণ্ঠে হতাশা স্পষ্ট— “আজ অনেক কিছু ঠিকঠাক হচ্ছিল, তবু পারলাম না। এবার নিজেদের মাঠে ফাইনাল খেলতে না পারার কষ্ট অনেক।”
ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে রাখবে আরেকটি ব্যাপার—টমাস মুলার এবারই হয়তো শেষবারের মতো বড় মঞ্চে নামলেন বায়ার্নের জার্সিতে। মেসির পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার তালিকায়, তবে আফসোস থেকে যাবে সুযোগ নষ্টের।
ইন্টারের এই জয় শুধু একটি সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেনি, বরং ইউরোপে দলটির পুনরুত্থানের বার্তাও দিয়ে গেল। ইতিহাসের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল সান সিরোর নায়করা।