মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় পূর্ব বিরোধের জেরে ফের ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুই গ্রামের মানুষ। রোববার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলা এই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ অন্তত ৫০ জন। সংঘর্ষে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পুলিশের যানবাহন। সংঘর্ষের সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণও ঘটে, যা পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, উপজেলার বেপারীপাড়া ব্রিজ মোড়ে বদরপাশা ও পশ্চিম রাজৈর গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর আগে শনিবার রাতেও একই দুটি গ্রামের মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়েছিল, যার সূত্রপাত আতশবাজি ফাটানোকে কেন্দ্র করে। শনিবারের ঘটনায় ১০ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন।
রোববার দুপুরে উভয়পক্ষকে থানায় ডেকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং সিদ্ধান্ত হয় সোমবার সকাল ১০টায় থানার হলরুমে মীমাংসা হবে। তবে সন্ধ্যা নামতেই উত্তেজনা আবারও চরমে পৌঁছে, দুই পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
রাজৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় কুমার বলেন, “দুপুরে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে রাজি হয় দুই পক্ষ। কিন্তু সন্ধ্যায় ফের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। এমনকি পুলিশ ও গাড়ির ওপর হামলাও চালায়।”
সন্ধ্যার সংঘর্ষ উত্তর ও দক্ষিণ কুমার নদপাড় কেন্দ্রিক আঞ্চলিক রূপ নিয়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়েও নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
এ সংঘর্ষে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) জাহাঙ্গীর আলম, রাজৈর থানার ওসি মোহাম্মদ মাসুদ খানসহ দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। গুরুতর আহতদের মধ্যে মেহেদী মীর (২২), রাসেল শেখ (২৮), মনোতোষ সাহা (৫০) ও তাওফিক (৩৭) বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ওসি মোহাম্মদ মাসুদ খান বলেন, “এটি এই দুই গ্রামের মধ্যে চতুর্থ দফা সংঘর্ষ। আমরা সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। কিন্তু এভাবে পুলিশের ওপর হামলা উদ্বেগজনক। আশা করি, সব পক্ষের সহযোগিতায় এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে।”
প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা এই সহিংসতা বন্ধে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা ও স্থায়ী সমাধান কামনা করছেন।