ঢাকা , শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
ক্রিমিয়া নিয়ে ছাড়? শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়াকে স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: ব্লুমবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইয়েমেনের রাস ঈসা বন্দরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮০, আহত ১৭১ দিলীপ ঘোষের বিয়ে ঘিরে প্রশ্ন: আরএসএস প্রচারকেরা কি বিয়ে করতে পারেন? সংগঠনটির প্রচারক ছিলেন মোদিও নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর চট্টগ্রামে শিশুর লাশ উদ্ধার টাঙ্গাইলে অবৈধ ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু শায়েস্তাগঞ্জে আগুনে পুড়ল ১৫ টি দোকান বিডিআর হত্যাকাণ্ড: সহায়ক তথ্য আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি মালয়েশিয়ায় ১৬৫ বাংলাদেশিসহ ৫০৬ জন অভিবাসী আটক ইভ্যালির অর্থ আত্মসাৎ: গ্রাহকদের মানববন্ধন ও রাসেলের গ্রেফতারের দাবি কক্সবাজার-মহেশখালী রুটে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলো সি-ট্রাক

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা বনাম সৌদি আরবের নেতৃত্বে বিকল্প চায় আরব বিশ্ব

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখলের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিকল্প উপস্থাপনের জন্য সৌদি আরবের নেতৃত্বে জরুরি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের একটি উপকূলীয় অঞ্চলে পরিণত করার কথা বলা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের জর্ডান ও মিসরে তাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা কায়রো ও আম্মান প্রত্যাখ্যান করেছে এবং পুরো অঞ্চলে এটিকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

সৌদি আরব, মিসর, জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশ এই পরিস্থিতিতে রিয়াদে একটি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। পাঁচ সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, এই বৈঠকে গাজা পুনর্গঠনের জন্য উপসাগরীয় দেশগুলোর নেতৃত্বে একটি তহবিল গঠন এবং হামাসকে প্রান্তিক করার প্রস্তাব আলোচনা করা হতে পারে।

সৌদি আরব ও তার আরব মিত্ররা ট্রাম্পের গাজা দখলের পরিকল্পনায় হতবাক হয়েছে। এই পরিকল্পনা সৌদি আরবের জন্য বিশেষভাবে হতাশাজনক। কারণ এটি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের শর্ত হিসেবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পথ সুগম করার দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের মাধ্যমে ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি উচ্চাভিলাষী সামরিক চুক্তি করতে চায় সৌদি আরব। যা ইরানের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করবে।

রয়টার্স সৌদি আরব, মিসর, জর্ডান ও অন্যান্য স্থানের ১৫টি সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছে, আরব দেশগুলো ট্রাম্পের কাছে বিকল্প পরিকল্পনা উপস্থাপনের জন্য দ্রুত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি তারা এই পরিকল্পনাকে ‘ট্রাম্প পরিকল্পনা’ নামে চালিয়ে তার সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করতে পারে।

এক আরব সরকারি সূত্র জানিয়েছে, গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্তত চারটি প্রস্তাব ইতোমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে মিসরের প্রস্তাবটি এখন আরব দেশগুলোর বিকল্প পরিকল্পনার কেন্দ্রে অবস্থান করছে।

মিসরের প্রস্তাবঃ
তিন মিসরীয় নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ মিসরীয় প্রস্তাবে হামাসের অংশগ্রহণ ছাড়াই একটি জাতীয় ফিলিস্তিনি কমিটি গঠন করে গাজা শাসন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে পুনর্গঠন এবং দুই রাষ্ট্রের সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এক আরব সরকারি সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরব, মিসর, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিরা রিয়াদে এই পরিকল্পনা পর্যালোচনা ও আলোচনা করবেন। যা ২৭ ফেব্রুয়ারির আরব শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) ভূমিকা এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এক জর্ডানি কর্মকর্তা বলেন, আমরা আমেরিকানদের বলছি, আমাদের একটি পরিকল্পনা আছে যা কাজ করবে। এমবিএসের সঙ্গে আমাদের বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ হবে। তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন সৌদি যুবরাজ। নতুন ট্রাম্প যুগে আরব-মার্কিন সম্পর্কে তিনি ক্রমশ কেন্দ্রীয় হয়ে উঠছেন। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের প্রধান আঞ্চলিক অংশীদার সৌদি আরব ব্যবসা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার রাজনীতির মাধ্যমে এই সম্পর্ক প্রসারিত করছে।

সৌদি আরবের সোভরেন ওয়েলথ ফান্ড এই মাসে মিয়ামিতে একটি সম্মেলনের আয়োজন করছে। যেখানে ট্রাম্পের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এছাড়া রিয়াদে ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৃহস্পতিবার বলেছেন, এখন পর্যন্ত একমাত্র পরিকল্পনা হলো ট্রাম্প পরিকল্পনা। তারা এটি পছন্দ করছে না, কিন্তু যদি তাদের কাছে ভালো পরিকল্পনা থাকে, এখনই উপস্থাপনের সময়।

বাফার জোনঃ
গাজার যুদ্ধ-পরবর্তী ভবিষ্যৎ নিয়ে স্পষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করা কঠিন হয়ে উঠেছে। কারণ এতে ভূখণ্ডের অভ্যন্তরীণ শাসন, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, অর্থায়ন ও পুনর্গঠন নিয়ে বিতর্কিত আলোচনার অবস্থান নেওয়া প্রয়োজন।

ইসরায়েল ইতোমধ্যেই গাজা শাসন বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনও ভূমিকা প্রত্যাখ্যান করেছে। আরব দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্রও সেখানে স্থলবাহিনী মোতায়েন করতে চাইছে না।

ঐতিহাসিকভাবে গাজা পুনর্গঠনের জন্য অর্থায়ন করা উপসাগরীয় দেশগুলো বলেছে, তারা এবার ইসরায়েলের পুনরায় ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের নিশ্চয়তা ছাড়া অর্থায়ন করতে চায় না।

এক জর্ডানি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ সোমবার হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, তিনি সৌদি আরব ও মিসরের সঙ্গে একটি কার্যকর গাজা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন।

তিন মিসরীয় নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, পুনর্গঠন ও অর্থায়ন সংক্রান্ত প্রাথমিক প্রস্তাবগুলো বেশ অগ্রগতি লাভ করেছে। গাজার সীমান্তে মিসরের সঙ্গে সুড়ঙ্গ নির্মাণ বন্ধ করতে একটি বাফার জোন ও বাধা তৈরি করা হবে। ধ্বংসস্তূপ সরানোর পর ২০টি অঞ্চলকে অস্থায়ী বসতি এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রায় ৫০টি মিসরীয় ও বিদেশি কোম্পানিকে এই কাজে নিয়ে আসা হবে।

এক আঞ্চলিক সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক ও উপসাগরীয় অর্থায়নে একটি তহবিল গঠন করা হতে পারে। আরব সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, এই তহবিলের নাম হতে পারে ‘ট্রাম্প ফান্ড ফর রিকনস্ট্রাকশন’।

তবে গাজার শাসন ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত সবচেয়ে কঠিন বিষয়গুলো এখনও সিদ্ধান্তবিহীন রয়ে গেছে। হামাসকে গাজা শাসন থেকে সরিয়ে দেওয়া এই পরিকল্পনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে আরব কর্মকর্তা ও তিন মিসরীয় সূত্র জানিয়েছেন।

হামাস আগেই বলেছে, তারা গাজা শাসন একটি জাতীয় কমিটির হাতে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। তবে তারা এই কমিটির সদস্য নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে চায় এবং তাদের সম্মতি ছাড়া কোনও স্থলবাহিনী মোতায়েন করতে দেবে না।‘

অসন্তুষ্ট’ সৌদি আরবঃ

ট্রাম্পের ঘোষণার আগেই সৌদি আরব গাজা পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের শর্ত হিসেবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পথ উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছে রিয়াদ।

সৌদি জনগণের মধ্যে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ ও মৃত্যু নিয়ে ক্রোধ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অবস্থান আরও শক্ত হয়েছে। নভেম্বরে ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে সৌদি যুবরাজ ইসরায়েলকে গণহত্যার অভিযোগ এনেছিলেন এবং দুই রাষ্ট্রের সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন।

দুই আঞ্চলিক গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, চলমান যুদ্ধ নিয়ে সৌদি আরবে হতাশা তুঙ্গে ছিল। ওয়াশিংটন রিয়াদের দুই রাষ্ট্রের সমাধানের দাবি উপেক্ষা করতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছিলো। ট্রাম্প গাজা দখল পরিকল্পনা ঘোষণার আগের দিন জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন, সৌদি আরব খুব সহায়ক হবে।

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ জানুয়ারির শেষে রিয়াদে বৈঠক করেছেন। দুই ঊর্ধ্বতন কূটনীতিক বলেছেন, উইটকফ সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়ার জন্য তিন মাসের একটি সময়সীমা পেশ করেছেন।

তবে ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা ঘোষণার পর সৌদি হতাশা দ্রুত অবাক হয়ে রূপ নেয়। সৌদি রাজপরিবারের কাছের এক সূত্র বলেছেন, ‘তিনি অসন্তুষ্ট’।

রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার সম্প্রচারে এই ক্রোধ দ্রুত স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যা প্রায়ই সরকারি সৌদি মতামতের পরিমাপক হিসেবে বিবেচিত হয়। টেলিভিশন সংবাদ প্রতিবেদনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ব্যক্তিগতভাবে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করা হয়।

সৌদি বিশ্লেষক আজিজ আলঘাশিয়ান বলেছেন, তারা ক্ষুব্ধ। এটি চরম পর্যায়ের হতাশার চেয়েও বেশি কিছু।

অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ট্রাম্প তার কূটনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে আলোচনার শুরুতেই একটি চরম অবস্থান উপস্থাপন করতে পারেন। তার প্রথম মেয়াদে তিনি প্রায়ই অতিরঞ্জিত পররাষ্ট্রনীতি ঘোষণা করতেন। যার অনেক কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।

তবে এটি সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের আলোচনাকে জটিল করে তুলেছে। সৌদি আরবের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান প্রিন্স তুর্কি আল-ফয়সাল সিএনএনকে বলেছিলেন, ট্রাম্প যদি রিয়াদে আসেন, আমি নিশ্চিত, তিনি এখানকার নেতৃত্বের কাছ থেকে কড়া জবাব শুনবেন।

জনপ্রিয়

ক্রিমিয়া নিয়ে ছাড়? শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়াকে স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: ব্লুমবার্গ

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা বনাম সৌদি আরবের নেতৃত্বে বিকল্প চায় আরব বিশ্ব

প্রকাশিত: ১১:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখলের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিকল্প উপস্থাপনের জন্য সৌদি আরবের নেতৃত্বে জরুরি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের একটি উপকূলীয় অঞ্চলে পরিণত করার কথা বলা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের জর্ডান ও মিসরে তাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা কায়রো ও আম্মান প্রত্যাখ্যান করেছে এবং পুরো অঞ্চলে এটিকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

সৌদি আরব, মিসর, জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশ এই পরিস্থিতিতে রিয়াদে একটি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। পাঁচ সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, এই বৈঠকে গাজা পুনর্গঠনের জন্য উপসাগরীয় দেশগুলোর নেতৃত্বে একটি তহবিল গঠন এবং হামাসকে প্রান্তিক করার প্রস্তাব আলোচনা করা হতে পারে।

সৌদি আরব ও তার আরব মিত্ররা ট্রাম্পের গাজা দখলের পরিকল্পনায় হতবাক হয়েছে। এই পরিকল্পনা সৌদি আরবের জন্য বিশেষভাবে হতাশাজনক। কারণ এটি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের শর্ত হিসেবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পথ সুগম করার দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের মাধ্যমে ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি উচ্চাভিলাষী সামরিক চুক্তি করতে চায় সৌদি আরব। যা ইরানের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করবে।

রয়টার্স সৌদি আরব, মিসর, জর্ডান ও অন্যান্য স্থানের ১৫টি সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছে, আরব দেশগুলো ট্রাম্পের কাছে বিকল্প পরিকল্পনা উপস্থাপনের জন্য দ্রুত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি তারা এই পরিকল্পনাকে ‘ট্রাম্প পরিকল্পনা’ নামে চালিয়ে তার সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করতে পারে।

এক আরব সরকারি সূত্র জানিয়েছে, গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্তত চারটি প্রস্তাব ইতোমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে মিসরের প্রস্তাবটি এখন আরব দেশগুলোর বিকল্প পরিকল্পনার কেন্দ্রে অবস্থান করছে।

মিসরের প্রস্তাবঃ
তিন মিসরীয় নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ মিসরীয় প্রস্তাবে হামাসের অংশগ্রহণ ছাড়াই একটি জাতীয় ফিলিস্তিনি কমিটি গঠন করে গাজা শাসন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে পুনর্গঠন এবং দুই রাষ্ট্রের সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এক আরব সরকারি সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরব, মিসর, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিরা রিয়াদে এই পরিকল্পনা পর্যালোচনা ও আলোচনা করবেন। যা ২৭ ফেব্রুয়ারির আরব শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) ভূমিকা এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এক জর্ডানি কর্মকর্তা বলেন, আমরা আমেরিকানদের বলছি, আমাদের একটি পরিকল্পনা আছে যা কাজ করবে। এমবিএসের সঙ্গে আমাদের বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ হবে। তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন সৌদি যুবরাজ। নতুন ট্রাম্প যুগে আরব-মার্কিন সম্পর্কে তিনি ক্রমশ কেন্দ্রীয় হয়ে উঠছেন। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের প্রধান আঞ্চলিক অংশীদার সৌদি আরব ব্যবসা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার রাজনীতির মাধ্যমে এই সম্পর্ক প্রসারিত করছে।

সৌদি আরবের সোভরেন ওয়েলথ ফান্ড এই মাসে মিয়ামিতে একটি সম্মেলনের আয়োজন করছে। যেখানে ট্রাম্পের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এছাড়া রিয়াদে ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৃহস্পতিবার বলেছেন, এখন পর্যন্ত একমাত্র পরিকল্পনা হলো ট্রাম্প পরিকল্পনা। তারা এটি পছন্দ করছে না, কিন্তু যদি তাদের কাছে ভালো পরিকল্পনা থাকে, এখনই উপস্থাপনের সময়।

বাফার জোনঃ
গাজার যুদ্ধ-পরবর্তী ভবিষ্যৎ নিয়ে স্পষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করা কঠিন হয়ে উঠেছে। কারণ এতে ভূখণ্ডের অভ্যন্তরীণ শাসন, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, অর্থায়ন ও পুনর্গঠন নিয়ে বিতর্কিত আলোচনার অবস্থান নেওয়া প্রয়োজন।

ইসরায়েল ইতোমধ্যেই গাজা শাসন বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনও ভূমিকা প্রত্যাখ্যান করেছে। আরব দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্রও সেখানে স্থলবাহিনী মোতায়েন করতে চাইছে না।

ঐতিহাসিকভাবে গাজা পুনর্গঠনের জন্য অর্থায়ন করা উপসাগরীয় দেশগুলো বলেছে, তারা এবার ইসরায়েলের পুনরায় ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের নিশ্চয়তা ছাড়া অর্থায়ন করতে চায় না।

এক জর্ডানি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ সোমবার হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, তিনি সৌদি আরব ও মিসরের সঙ্গে একটি কার্যকর গাজা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন।

তিন মিসরীয় নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, পুনর্গঠন ও অর্থায়ন সংক্রান্ত প্রাথমিক প্রস্তাবগুলো বেশ অগ্রগতি লাভ করেছে। গাজার সীমান্তে মিসরের সঙ্গে সুড়ঙ্গ নির্মাণ বন্ধ করতে একটি বাফার জোন ও বাধা তৈরি করা হবে। ধ্বংসস্তূপ সরানোর পর ২০টি অঞ্চলকে অস্থায়ী বসতি এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রায় ৫০টি মিসরীয় ও বিদেশি কোম্পানিকে এই কাজে নিয়ে আসা হবে।

এক আঞ্চলিক সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক ও উপসাগরীয় অর্থায়নে একটি তহবিল গঠন করা হতে পারে। আরব সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, এই তহবিলের নাম হতে পারে ‘ট্রাম্প ফান্ড ফর রিকনস্ট্রাকশন’।

তবে গাজার শাসন ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত সবচেয়ে কঠিন বিষয়গুলো এখনও সিদ্ধান্তবিহীন রয়ে গেছে। হামাসকে গাজা শাসন থেকে সরিয়ে দেওয়া এই পরিকল্পনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে আরব কর্মকর্তা ও তিন মিসরীয় সূত্র জানিয়েছেন।

হামাস আগেই বলেছে, তারা গাজা শাসন একটি জাতীয় কমিটির হাতে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। তবে তারা এই কমিটির সদস্য নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে চায় এবং তাদের সম্মতি ছাড়া কোনও স্থলবাহিনী মোতায়েন করতে দেবে না।‘

অসন্তুষ্ট’ সৌদি আরবঃ

ট্রাম্পের ঘোষণার আগেই সৌদি আরব গাজা পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের শর্ত হিসেবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পথ উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছে রিয়াদ।

সৌদি জনগণের মধ্যে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ ও মৃত্যু নিয়ে ক্রোধ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অবস্থান আরও শক্ত হয়েছে। নভেম্বরে ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে সৌদি যুবরাজ ইসরায়েলকে গণহত্যার অভিযোগ এনেছিলেন এবং দুই রাষ্ট্রের সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন।

দুই আঞ্চলিক গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, চলমান যুদ্ধ নিয়ে সৌদি আরবে হতাশা তুঙ্গে ছিল। ওয়াশিংটন রিয়াদের দুই রাষ্ট্রের সমাধানের দাবি উপেক্ষা করতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছিলো। ট্রাম্প গাজা দখল পরিকল্পনা ঘোষণার আগের দিন জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন, সৌদি আরব খুব সহায়ক হবে।

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ জানুয়ারির শেষে রিয়াদে বৈঠক করেছেন। দুই ঊর্ধ্বতন কূটনীতিক বলেছেন, উইটকফ সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়ার জন্য তিন মাসের একটি সময়সীমা পেশ করেছেন।

তবে ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা ঘোষণার পর সৌদি হতাশা দ্রুত অবাক হয়ে রূপ নেয়। সৌদি রাজপরিবারের কাছের এক সূত্র বলেছেন, ‘তিনি অসন্তুষ্ট’।

রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার সম্প্রচারে এই ক্রোধ দ্রুত স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যা প্রায়ই সরকারি সৌদি মতামতের পরিমাপক হিসেবে বিবেচিত হয়। টেলিভিশন সংবাদ প্রতিবেদনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ব্যক্তিগতভাবে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করা হয়।

সৌদি বিশ্লেষক আজিজ আলঘাশিয়ান বলেছেন, তারা ক্ষুব্ধ। এটি চরম পর্যায়ের হতাশার চেয়েও বেশি কিছু।

অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ট্রাম্প তার কূটনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে আলোচনার শুরুতেই একটি চরম অবস্থান উপস্থাপন করতে পারেন। তার প্রথম মেয়াদে তিনি প্রায়ই অতিরঞ্জিত পররাষ্ট্রনীতি ঘোষণা করতেন। যার অনেক কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।

তবে এটি সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের আলোচনাকে জটিল করে তুলেছে। সৌদি আরবের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান প্রিন্স তুর্কি আল-ফয়সাল সিএনএনকে বলেছিলেন, ট্রাম্প যদি রিয়াদে আসেন, আমি নিশ্চিত, তিনি এখানকার নেতৃত্বের কাছ থেকে কড়া জবাব শুনবেন।