অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, যুগের পর যুগ দেশে যে বৈষম্য তৈরি হয়েছিল, তা কয়েক মাসে ঠিক করে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে চব্বিশের আন্দোলন এবং নব্বইয়ের আন্দোলন প্রমাণ করেছে যে, পরিবর্তন সম্ভব। অনেকে বলেছিল বাংলাদেশ টিকবে না, কিন্তু দেশের জনগণ দেখিয়ে দিয়েছেন যে, সম্ভাবনাময় নতুন বাংলাদেশ শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আলী রীয়াজ বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর পরিবেশ পেয়েছি। আপনাদের মেধা, পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা আজকে এখানে নিয়ে এসেছে। এককভাবে সফলতা অর্জন সম্ভব নয়; অন্যদের সহযোগিতা এবং পর্দার অন্তরালে থাকা মানুষের অবদানকে স্বীকার করতে হবে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকতে হবে। যদি তা না করেন, তাহলে ব্যক্তির সাফল্যের উদযাপন হবে, যা দেশের জন্য কোনো কাজে আসবে না।
তিনি আরও বলেন, দেশের অগ্রগতির জন্য সকলে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। শিক্ষার্থীরা দেশের ভবিষ্যৎ কান্ডারি। মেধা, শ্রম ও জ্ঞানের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিযোগিতা জ্ঞান অর্জনে অনুপ্রাণিত করবে। তবে যে জ্ঞান কেবলমাত্র একক চিন্তায় আবদ্ধ, তা রাষ্ট্রচিন্তায় কোনো কাজে আসে না। নতুন জ্ঞান সংযুক্ত করতে হবে এবং নতুন চিন্তার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে, তবে সেটা যেন পরিবেশকে রক্ষা করে। পরিবেশবান্ধব না হলে সেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষের জন্য উপযুক্ত নয়। প্রাণ ও প্রকৃতিকে রক্ষা না করতে পারলে বাংলাদেশ রক্ষা পাবে না।
একে অপরের প্রতি সহমর্মিতার কথা উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহমর্মিতাবোধ থাকতে হবে। সুবিধাবঞ্চিতদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা হলো মুক্ত চিন্তার শিক্ষা। জ্ঞানের চর্চা করতে হবে, তা যেভাবেই হোক। পত্রিকার খবর পড়া, আর্টিকেল পড়া, সবই জ্ঞান চর্চার মাধ্যম। সমাজের সবার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। যারা মহাবিদ্যালয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেননি, তাদের কাছ থেকেও শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য ড. এসএম আব্দুল আওয়ালের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. মো. আনোয়ারুল আজিম আকন্দ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নকীব মুহাম্মদ নাসরুল্লাহ এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) উপাচার্য ড. এসএম আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি সকাল সাড়ে ১০টায় কোরআন তেলাওয়াত ও জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয়। এরপর জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে নিহত শহীদদের জন্য ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং শহীদ ও আহতদের জন্য দোয়া করা হয়।