প্রকাশিত:
১১:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
২০০২৫
বার পড়া হয়েছে
চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূলজুড়ে উঁকি দিচ্ছে নতুন এক বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম থেকে মেঘনা নদীর হাতিয়া পর্যন্ত বিশাল অঞ্চলে ক্রমশ দূরে সরছে বঙ্গোপসাগরের ঢেউ, জাগছে দিগন্ত বিস্তৃত নতুন নতুন চরাঞ্চল। যা পাল্টে দিতে পারে, এ অঞ্চলের মানচিত্রকেও।বাংলাদেশের মানচিত্রের বুক জুড়ে পাল্টে যাচ্ছে উপকূলীয় জনপদের অর্থনীতি। কোথাও দেখা দিচ্ছে সম্ভাবনা, কোথাও তৈরি হচ্ছে জীবিকার সংকট। এমনকি বদলে দিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে সারাদেশে পণ্য পরিবহনের নৌপথও।
সমুদ্রের কোলে সবুজ উপকূলে দাঁড়িয়ে চোখে পড়ে, রূপোলী ডানায় সূর্যস্নান। যুগ যুগ ধরে যে অচেনা মানচিত্রে ঘর বাঁধছে এ পরিযায়ী পাখির দল, সে মানচিত্রও যেন তাদের কাছে অচেনা।
চট্টগ্রামের হালিশহরের জেগে ওঠা চর জানান দিচ্ছে, পাল্টে যাচ্ছে এ উপকূলীয় এলাকার দৃশ্যপট। সংকুচিত হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের জল।
স্থানীয়রা বলছেন, বিগত কয়েক বছর চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূল থেকে মেঘনার মোহনা পর্যন্ত, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ জুড়ে জাগছে এমন নতুন নতুন ছোট-বড় চর। যা জানান দিচ্ছে, তৈরি হওয়া নতুন এক ব-দ্বীপের।
জেগে ওঠা এ চর বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও সংকটের মানচিত্রেও হচ্ছে পরিবর্তন। এসব অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান আর অর্থনীতির চিত্রে ঘটছে অভূতপূর্ব পালাবদল। এরই সাথে পাল্লা দিয়ে এই দ্বীপে সংখ্যা বাড়ছে মহিষ পালনের , দ্বীপে এখন মহিষের পাল ৩শ থেকে সাড়ে তিনশত।
জেগে ওঠা উর্বর চরে। চাষ হয় ধান, ডাল জাতীয় ফসল। । নতুন এ জনপদ ঘিরে বাড়ছে জনবসতি। স্থানীয়রা জানান, দক্ষিণের এ সবুজ চর বাড়তে বাড়তে গিয়ে ঠেকেছে, প্রায় মীরসরাইয়ের ইকনোমিক জোনের সাথে। এতোটাই নিকটে যে রাতে ইকনোমিক জোনের বাতির আলো আর দিনে কর্মব্যস্ততা ধরা পড়ে সন্দ্বীপ থেকেই।
সন্দ্বীপ উপজেলাঃ স্যাটেলাইট হতে সংগৃহীত
সন্দ্বীপের টাউন চরে সকাল হতেই মাছ নিয়ে আসা নৌকার সারি। ধূ-ধূ চরের এ জনপদে চলে, সে মাছ বিক্রির কোলাহল। এখন এ বাজারে প্রতিদিন বিক্রি হয়, কয়েক লক্ষ টাকার মাছ।
স্থানীয়রা জানান, নতুন চরে বসতি আর কর্মসংস্থানের আশায় শহর ছেড়ে আবারো দ্বীপে আসতে শুরু করেছে মানুষ।
তবে পানির সাথে যাদের বসবাস, এই চর তাদের জন্য বয়ে এনেছে অভিশাপের বার্তা। সমুদ্রের ঢেউ যতো দূরে সরছে, ততই আশার আলো ক্ষীণ হচ্ছে জেলেদের। যারা মাছ ধরছেন তারা জানান, এখন প্রায় ৮০-৮৫ কিলোমিটার ট্রলার চালিয়ে মাছের সন্ধানে যেতে হয়।
দ্বীপ বা চর জাগার প্রভাব পড়ছে, দেশের বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহনেও। চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে যেসব লাইটার জাহাজ ছুটে যায় সারাদেশে, তারা পড়ছেন নতুন বিপাকে। চর জাগায় বিগত কয়েক বছরে, পরিবর্তন হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম নৌ পথ।কেননা, অচেনা চরে আটকে যাচ্ছে জাহাজ, বাড়ছে নৌ দুর্ঘটনা।
সব মিলিয়ে সম্ভাবনার বাতিঘর নাকি আশঙ্কার বার্তা আনছে— তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে সরকার কী এ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নিয়েছে?
সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমা বলেন, ‘সরকার যদি মনে করে, এখানে একটা ইকোনমিক জোন করা সম্ভব এবং যদি চায়। অবশ্যই এখানে করা সম্ভব। একটা অপার সম্ভাবনার জায়গা। বিস্তীর্ণ জমি। অবশ্যই সরকার এটাকে কাজে লাগাতে পারে।’