এসব ইস্যু মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে সরকার। এ জন্য আজ রবিবার দুপুর আড়াইটায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হবে।
বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে আগের সভার কার্যবিবরণী দৃঢ়ীকরণ ও অগ্রগতি পর্যালোচনা; সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ক আলোচনা; মহান বিজয় দিবস, বড়দিন ও ৩১ ডিসেম্বর থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত আলোচনা।
পাশাপাশি বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সার্বিক নিরাপত্তা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আলোচনা; পার্বত্য জেলাসমূহে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সশস্ত্র গ্রুপের অপতৎপরতা নিয়ে আলোচনা; নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনগুলোর অপতৎপরতা রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ; অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা; মাদকের অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গার্মেন্টস কারখানা, ঔষধশিল্পসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির তৎপরতা বিষয়ে আলোচনা হবে।
এ ছাড়া মায়ানমার সীমান্ত ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলাসহ সার্বিক পরিস্থিতি এবং দেশ ও সরকারবিরোধী দেশি-বিদেশি মিথ্যা প্রচারণা বা প্রপাগান্ডার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়ে আলোচনা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির একাধিক সদস্য জানান, বৈঠকে সরকারবিরোধী দেশি-বিদেশি প্রপাগান্ডা, বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে তাবলিগের দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থান, গার্মেন্টস ও ঔষধশিল্প প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা এবং পার্বত্য এলাকায় সশস্ত্র গ্রুপের অপতৎপরতা, থার্টিফার্স্ট নাইটের নিরাপত্তা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের সফলতা নিয়েও চিন্তিত সরকার।
মূলত ছয়-সাতটি ইস্যুই প্রাধান্য পাবে বৈঠকে। এসব বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেবে না সরকার। কারণ সব ইস্যুই সরকারের অস্তিত্বসংশ্লিষ্ট। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। এর পর থেকে নানা ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে টানাপড়েন শুরু হয় প্রতিবেশী দেশ ভারতের।
এদিকে বিশ্ব ইজতেমা নিয়েও মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে তাবলিগের বিবদমান দুই পক্ষ। এক পক্ষের জোড় ইজতেমা শেষ হলেও অন্য পক্ষের জোড় ইজতেমা নিয়ে দুই পক্ষ পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এর মধ্যে হামলার ঘটনা ও সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদানের কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত। এমন পরিস্থিতিতে ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সেনাবাহিনী, র্যাব, এপিবিএন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ইজতেমা মাঠে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত সরকার।
এর পাশাপাশি গার্মেন্টস খাত ও ঔষধশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশৃঙ্খলা এবং পার্বত্য এলাকায় সশস্ত্র গ্রুপের অপতৎপরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার। রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ বন্ধে সরকার ও মালিকপক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও অস্থিরতা থামছে না।
মাসের পর মাস চেষ্টার পরও কেন থামানো যাচ্ছে না বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান এই খাতে শ্রমিক অসন্তোষ, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। তারা বলছেন, পরিকল্পিতভাবে পোশাকশিল্পকে অস্থিতিশীল করতে কাজ করছে শ্রমিকদের পাশাপাশি কিছু কারখানা মালিকও। বেশ কিছু মালিক ব্যবসা করলেও শ্রমিকদের বেতন দিতে গড়িমসি করছেন। আবার ঝুট ব্যবসা নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যেও রয়েছে কোন্দল। ফলে অস্থিরতা লেগেই আছে।