ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তোলা একটি প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হয়েছে। অবিলম্বে নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবিতে তোলা প্রস্তাবে ১৫৮টি দেশ ভোট দিয়েছে। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বুধবার (১১ ডিসেম্বর) এ ভোট হয়।
সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, অবিলম্বে নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবিতে তোলা প্রস্তাব নিয়ে ভোটে ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৫৮টি ভোট পড়ে দাবির পক্ষে। অনুপস্থিত ছিল ১৩ সদস্য দেশ, আর বিপক্ষে পড়েছে ৯ ভোট।
যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তি দেয়া নিয়ে এ ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) কাজের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করা হয়েছে।
ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে এবং ইসরাইলের জাতিসংঘের সংস্থার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করবে এমন একটি নতুন ইসরায়েলি আইনের নিন্দা জানানোর দ্বিতীয় প্রস্তাবটির পক্ষে ১৫৯টি, বিপক্ষে ৯টি ভোট পড়ে। ১১ সদস্য ভোটে বিরত ছিল।
সপ্তাহ তিনেক আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একই ধরনের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোয় বাতিল হওয়ার পরই এই বৈঠকের বিষয়টি আলোচনায় আসে। সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হলেও নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের মতো এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নেরও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
স্লোভেনিয়ার জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত স্যামুয়েল জবোগার সাধারণ পরিষদের বৈঠকে বলেছেন, গাজার আর কোনো অস্তিত্ব নেই। এটা ধ্বংস হয়ে গেছে। বেসামরিক মানুষ ক্ষুধা, হতাশা এবং মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে। তিনি বলেন, এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের এখন যুদ্ধবিরতি দরকার। আমাদের এখন জিম্মিদের বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ৪৪ হাজার ৮০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।