আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গত ৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন আড্ডায় শুনতেন, অবৈধ অর্থ উপার্জনের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যাশিয়ার কে, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানার ক্যাশিয়ার কে। সালমান এফ রহমান তাঁর ক্যাশিয়ার। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের টাকা কার মাধ্যমে যায়। পলক কার ক্যাশিয়ার। তখন দুদক ছিল, উচ্চ আদালত ছিল। এসবের কোনো বিচার হয়নি। দুদক ও বিচার বিভাগ শেখ হাসিনার দাসে পরিণত হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন।
বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের কথা বলা হয়েছে, সেটা এখন ছয় কোটি টাকা হয়েছে। একটা টাকা আত্মসাৎ হয়নি। প্রক্রিয়াগত ভুলের কারণে তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে দুদক ও বিচার বিভাগ মিলে ১০ বছরের সাজা দিয়েছে। আর সেই চোর প্রধানমন্ত্রী, যার পুরো পরিবার ছিল চোর, তিনি সারা দেশে ঘুরে বলে বেড়াতেন, খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছে। এই চোরের সামনে কেউ কোনো কথা বলত না। এখন তো সেই পরিবেশ নেই। বিগত সরকারের আমলে মন্ত্রী-এমপিরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে পাচার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আগের কমিশন যে অনুমোদন দিয়ে গেছে, এখন দুদক সেগুলো নিয়ে কাজ করতে পারে। দেখান যে ভালো পরিবেশ পেলে আপনারা কাজ করতে পারেন। এটাই আপনাদের কাছে আমাদের এবং সারা দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা। অন্যের ঘাড়ে দোষ দিয়ে নিজের দুর্নীতি আড়াল করবেন না।
সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ নজরুল বলেন, দুদকের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন কোনো কমিশন গঠন করা হলে আইন সংশোধনসহ নানা জটিলতা দেখা দেবে। বেশি বিলম্ব না করে নতুন কমিশন গঠনের জন্য সরকার কাজ করছে।
সভার বিশেষ অতিথি ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বছরের প্রতিদিন দুর্নীতিবিরোধী দিবস হওয়া দরকার। যারা দুর্নীতি করে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। বিগত সরকার অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল। নজিরবিহীনভাবে বারবার বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অথচ পৃথিবীর কোনো দেশে এ ধরনের রীতিনীতি নেই। কর্তৃত্ববাদ বিকাশের কারণেই দেশের তরুণরা এর বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল। দুদকের ভেতরের দুর্নীতি নিয়ে তিনি বলেন, বিগত দিনে কমিশন, দুদকের কর্মীরা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল। এখন এসবের ভয়াবহ চিত্র উঠে আসছে। দুদককে ঢেলে সাজাতে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে কমিশন পদত্যাগ করায় কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এই সময়ে দুদক পরিচালনার জন্য সরকারকে অন্তর্বর্তীকালীন একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে নতুন কমিশন গঠন করা হলে দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, মতামত, সুপারিশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।
দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সবাইকে দুর্নীতি প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন শুভেচ্ছা বক্তব্যে দুদকের কার্যক্রম তুলে ধরেন।
খোরশেদা ইয়াসমীনের নেতৃত্বে সকাল ৮টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে বেলুন উড়িয়ে দিবসটির কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়। পরে দুর্নীতিবিরোধী মানববন্ধন পালন করা হয়।