ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
ঘুষ ও হয়রানির অভিযোগে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি স্ট্যান্ড রিলিজ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ‘শহীদ তুরাব স্ট্যান্ড’ নামকরণ চার বছরে এসএসসি পরীক্ষার্থী কমেছে তিন লাখের বেশি চাঁদপুরে পুকুর খননের সময় মিলল পুরনো থ্রি নট থ্রি রাইফেল ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে আইন উপদেষ্টা পদে নিয়োগ প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছুরিকাঘাতে নিহত, অভিযুক্ত একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানে বাড়ছে বিদেশি পর্যটকদের ভিড় ক্রিমিয়া নিয়ে ছাড়? শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়াকে স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: ব্লুমবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইয়েমেনের রাস ঈসা বন্দরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮০, আহত ১৭১ দিলীপ ঘোষের বিয়ে ঘিরে প্রশ্ন: আরএসএস প্রচারকেরা কি বিয়ে করতে পারেন? সংগঠনটির প্রচারক ছিলেন মোদিও

ড. আসিফ নজরুল দুদক, বিচার বিভাগ শেখ হাসিনার দাসে পরিণত হয়েছিল দুদকের কর্মীরাও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল: ড. ইফতেখারুজ্জামান

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গত ৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন আড্ডায় শুনতেন, অবৈধ অর্থ উপার্জনের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যাশিয়ার কে, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানার ক্যাশিয়ার কে। সালমান এফ রহমান তাঁর ক্যাশিয়ার। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের টাকা কার মাধ্যমে যায়। পলক কার ক্যাশিয়ার। তখন দুদক ছিল, উচ্চ আদালত ছিল। এসবের কোনো বিচার হয়নি। দুদক ও বিচার বিভাগ শেখ হাসিনার দাসে পরিণত হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন।

উপদেষ্টা অতীতে আওয়ামী লীগ নেতাদের কথোপকথনের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘দেখা হলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলতেন, আপা তো কিছু করতে পারতেন না, ওনার ছোট বোনের জন্য। বোনের প্রতি কী মায়া!’ তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময়ে দুর্নীতি একটা গ্রহণযোগ্য মবে পরিণত হয়েছিল। কেউ কোনো প্রশ্ন করত না। অবৈধ বিত্ত নিয়ে গর্ব করত। দুর্নীতি যে খারাপ জিনিস– এটা মনে করার সংস্কৃতি পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। আমরা দেখলাম, একজন বেহায়া প্রধানমন্ত্রী তাঁর পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছে বলে হাসতে হাসতে জাতির সামনে বলছেন। গত ১৫ বছর আমরা দেখেছি, ১০০ টাকার বালিশ ৪ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে। বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনী হয়েছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলাকায় এক সময় ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচিত এক লোক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের কথা বলা হয়েছে, সেটা এখন ছয় কোটি টাকা হয়েছে। একটা টাকা আত্মসাৎ হয়নি। প্রক্রিয়াগত ভুলের কারণে তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে দুদক ও বিচার বিভাগ মিলে ১০ বছরের সাজা দিয়েছে। আর সেই চোর প্রধানমন্ত্রী, যার পুরো পরিবার ছিল চোর, তিনি সারা দেশে ঘুরে বলে বেড়াতেন, খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছে। এই চোরের সামনে কেউ কোনো কথা বলত না। এখন তো সেই পরিবেশ নেই। বিগত সরকারের আমলে মন্ত্রী-এমপিরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে পাচার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আগের কমিশন যে অনুমোদন দিয়ে গেছে, এখন দুদক সেগুলো নিয়ে কাজ করতে পারে। দেখান যে ভালো পরিবেশ পেলে আপনারা কাজ করতে পারেন। এটাই আপনাদের কাছে আমাদের এবং সারা দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা। অন্যের ঘাড়ে দোষ দিয়ে নিজের দুর্নীতি আড়াল করবেন না।

সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ নজরুল বলেন, দুদকের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন কোনো কমিশন গঠন করা হলে আইন সংশোধনসহ নানা জটিলতা দেখা দেবে। বেশি বিলম্ব না করে নতুন কমিশন গঠনের জন্য সরকার কাজ করছে।

সভার বিশেষ অতিথি ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বছরের প্রতিদিন দুর্নীতিবিরোধী দিবস হওয়া দরকার। যারা দুর্নীতি করে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। বিগত সরকার অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল। নজিরবিহীনভাবে বারবার বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অথচ পৃথিবীর কোনো দেশে এ ধরনের রীতিনীতি নেই। কর্তৃত্ববাদ বিকাশের কারণেই দেশের তরুণরা এর বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল। দুদকের ভেতরের দুর্নীতি নিয়ে তিনি বলেন, বিগত দিনে কমিশন, দুদকের কর্মীরা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল। এখন এসবের ভয়াবহ চিত্র উঠে আসছে। দুদককে ঢেলে সাজাতে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে কমিশন পদত্যাগ করায় কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এই সময়ে দুদক পরিচালনার জন্য সরকারকে অন্তর্বর্তীকালীন একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে নতুন কমিশন গঠন করা হলে দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, মতামত, সুপারিশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।

দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সবাইকে দুর্নীতি প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন শুভেচ্ছা বক্তব্যে দুদকের কার্যক্রম তুলে ধরেন।

খোরশেদা ইয়াসমীনের নেতৃত্বে সকাল ৮টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে বেলুন উড়িয়ে দিবসটির কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়। পরে দুর্নীতিবিরোধী মানববন্ধন পালন করা হয়।

জনপ্রিয়

ঘুষ ও হয়রানির অভিযোগে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি স্ট্যান্ড রিলিজ

ড. আসিফ নজরুল দুদক, বিচার বিভাগ শেখ হাসিনার দাসে পরিণত হয়েছিল দুদকের কর্মীরাও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল: ড. ইফতেখারুজ্জামান

প্রকাশিত: ১০:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গত ৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন আড্ডায় শুনতেন, অবৈধ অর্থ উপার্জনের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যাশিয়ার কে, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানার ক্যাশিয়ার কে। সালমান এফ রহমান তাঁর ক্যাশিয়ার। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের টাকা কার মাধ্যমে যায়। পলক কার ক্যাশিয়ার। তখন দুদক ছিল, উচ্চ আদালত ছিল। এসবের কোনো বিচার হয়নি। দুদক ও বিচার বিভাগ শেখ হাসিনার দাসে পরিণত হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন।

উপদেষ্টা অতীতে আওয়ামী লীগ নেতাদের কথোপকথনের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘দেখা হলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলতেন, আপা তো কিছু করতে পারতেন না, ওনার ছোট বোনের জন্য। বোনের প্রতি কী মায়া!’ তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময়ে দুর্নীতি একটা গ্রহণযোগ্য মবে পরিণত হয়েছিল। কেউ কোনো প্রশ্ন করত না। অবৈধ বিত্ত নিয়ে গর্ব করত। দুর্নীতি যে খারাপ জিনিস– এটা মনে করার সংস্কৃতি পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। আমরা দেখলাম, একজন বেহায়া প্রধানমন্ত্রী তাঁর পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছে বলে হাসতে হাসতে জাতির সামনে বলছেন। গত ১৫ বছর আমরা দেখেছি, ১০০ টাকার বালিশ ৪ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে। বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনী হয়েছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলাকায় এক সময় ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচিত এক লোক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের কথা বলা হয়েছে, সেটা এখন ছয় কোটি টাকা হয়েছে। একটা টাকা আত্মসাৎ হয়নি। প্রক্রিয়াগত ভুলের কারণে তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে দুদক ও বিচার বিভাগ মিলে ১০ বছরের সাজা দিয়েছে। আর সেই চোর প্রধানমন্ত্রী, যার পুরো পরিবার ছিল চোর, তিনি সারা দেশে ঘুরে বলে বেড়াতেন, খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছে। এই চোরের সামনে কেউ কোনো কথা বলত না। এখন তো সেই পরিবেশ নেই। বিগত সরকারের আমলে মন্ত্রী-এমপিরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে পাচার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আগের কমিশন যে অনুমোদন দিয়ে গেছে, এখন দুদক সেগুলো নিয়ে কাজ করতে পারে। দেখান যে ভালো পরিবেশ পেলে আপনারা কাজ করতে পারেন। এটাই আপনাদের কাছে আমাদের এবং সারা দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা। অন্যের ঘাড়ে দোষ দিয়ে নিজের দুর্নীতি আড়াল করবেন না।

সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ নজরুল বলেন, দুদকের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন কোনো কমিশন গঠন করা হলে আইন সংশোধনসহ নানা জটিলতা দেখা দেবে। বেশি বিলম্ব না করে নতুন কমিশন গঠনের জন্য সরকার কাজ করছে।

সভার বিশেষ অতিথি ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বছরের প্রতিদিন দুর্নীতিবিরোধী দিবস হওয়া দরকার। যারা দুর্নীতি করে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। বিগত সরকার অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল। নজিরবিহীনভাবে বারবার বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অথচ পৃথিবীর কোনো দেশে এ ধরনের রীতিনীতি নেই। কর্তৃত্ববাদ বিকাশের কারণেই দেশের তরুণরা এর বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল। দুদকের ভেতরের দুর্নীতি নিয়ে তিনি বলেন, বিগত দিনে কমিশন, দুদকের কর্মীরা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল। এখন এসবের ভয়াবহ চিত্র উঠে আসছে। দুদককে ঢেলে সাজাতে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে কমিশন পদত্যাগ করায় কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এই সময়ে দুদক পরিচালনার জন্য সরকারকে অন্তর্বর্তীকালীন একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে নতুন কমিশন গঠন করা হলে দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, মতামত, সুপারিশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।

দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সবাইকে দুর্নীতি প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন শুভেচ্ছা বক্তব্যে দুদকের কার্যক্রম তুলে ধরেন।

খোরশেদা ইয়াসমীনের নেতৃত্বে সকাল ৮টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে বেলুন উড়িয়ে দিবসটির কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়। পরে দুর্নীতিবিরোধী মানববন্ধন পালন করা হয়।