ঢাকা , শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
ক্রিমিয়া নিয়ে ছাড়? শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়াকে স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: ব্লুমবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইয়েমেনের রাস ঈসা বন্দরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮০, আহত ১৭১ দিলীপ ঘোষের বিয়ে ঘিরে প্রশ্ন: আরএসএস প্রচারকেরা কি বিয়ে করতে পারেন? সংগঠনটির প্রচারক ছিলেন মোদিও নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর চট্টগ্রামে শিশুর লাশ উদ্ধার টাঙ্গাইলে অবৈধ ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু শায়েস্তাগঞ্জে আগুনে পুড়ল ১৫ টি দোকান বিডিআর হত্যাকাণ্ড: সহায়ক তথ্য আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি মালয়েশিয়ায় ১৬৫ বাংলাদেশিসহ ৫০৬ জন অভিবাসী আটক ইভ্যালির অর্থ আত্মসাৎ: গ্রাহকদের মানববন্ধন ও রাসেলের গ্রেফতারের দাবি কক্সবাজার-মহেশখালী রুটে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলো সি-ট্রাক

সিরিয়ার আলেপ্পো-ইদলিবসহ ছোটবড় অনেক জায়গা দখলে বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল-শামের (HTS) যোদ্ধাদের

সিরিয়ার হায়াত তাহরির আল-শামের (HTS) বাহিনী দেশটির ঐতিহাসিক ও বৃহত্তম শহর আলেপ্পোর অধিকাংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস আজ শনিবার এই বিষয়টি জানিয়েছে। এদিকে, বিদ্রোহী বাহিনীকে দমনে ২০১৬ সালের পর রাশিয়া আজ শনিবার প্রথমবারের মতো আলেপ্পোর বিভিন্ন অংশে বিমান হামলা চালিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, বুধবার শুরু হওয়া অভিযানে এখন পর্যন্ত ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক। এই অভিযান গত কয়েক বছরের মধ্যে সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় আক্রমণ। বিদ্রোহী বাহিনী ২০১৬ সালে সরকারি বাহিনীর ধাওয়া খেয়ে আলেপ্পো থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর এবারই প্রথম শহরটিতে প্রবেশ করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলেপ্পোর বিমানবন্দর এবং শহরে প্রবেশের সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, শনিবার ভোরে হায়াত তাহরির আল-শাম(HTS) শহরের বেশির ভাগ অংশ কোনো বড় প্রতিরোধ ছাড়াই দখল করেছে। সংস্থাটির এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ‘সরকারি বাহিনী পিছু হটায় কোনো লড়াই হয়নি।’

সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের মুখপাত্র বলেছেন, ‘নগর পরিষদ, পুলিশ স্টেশন, গোয়েন্দা অফিস—সব খালি। এমনটা আগে কখনো ঘটেনি।’

এর আগে, গতকাল শুক্রবার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আলেপ্পো ও ইদলিব প্রদেশের কিছু শহরে তারা পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। এই অঞ্চলগুলোতে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ও মিত্র বাহিনী বুধবার থেকে আক্রমণ চালাচ্ছে। ইসলামপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী এইচটিএস—এর সঙ্গে যুক্ত একটি চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিওতে বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল-শামের (HTS) যোদ্ধাদের আলেপ্পোর ভেতরে যানবাহনে চলাচল করতে দেখা গেছে।

বিবিসি ভিডিওটির অবস্থান (জিও লোকেশন) শনাক্ত করে নিশ্চিত করেছে যে, এটি আলেপ্পোর পশ্চিমাঞ্চলের একটি শহরতলিতে ধারণ করা। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, তাদের একজন প্রতিবেদক শুক্রবার আলেপ্পোর ঐতিহাসিক দুর্গের সামনে সরকারবিরোধী হায়াত তাহরির আল-শামের (HTS) যোদ্ধাদের দেখেছেন।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন দমনের পর সিরিয়ায় শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী এই অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে সিরিয়ার বড় অংশ দখল করে নেয়। পরে সিরিয়ার সরকার রাশিয়া ও অন্যান্য মিত্রদের সহায়তায় অধিকাংশ এলাকা পুনরুদ্ধার করে।

ইদলিব এখনো বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল-শামের (HTS) যোদ্ধাদের শেষ শক্ত ঘাঁটি। এটি মূলত এইচটিএস—এর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তুরস্ক সমর্থিত বিদ্রোহী এবং তুর্কি বাহিনীও সেখানে অবস্থান করছে। শুক্রবার সিরিয়া ও রাশিয়ার বিমানবাহিনী ইদলিবের কাছে ২৩টি বিমান হামলা চালায় বলে জানিয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস।

রাশিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ‘চরমপন্থী শক্তির’ ওপর হামলা চালিয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘সিরিয়ার সরকারকে দ্রুত শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে রাশিয়া সমর্থন দিচ্ছে এবং সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে।’

এর আগে, ইদলিবে ২০২০ সালে রাশিয়া ও তুরস্কের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল। তবে বুধবার এইচটিএস ও মিত্ররা নতুন করে অভিযানের ঘোষণা দেয়। তারা সরকার ও মিত্র মিলিশিয়াদের ওপর অঞ্চলটিতে উত্তেজনা বাড়ানোর অভিযোগ তোলে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল-শামের (HTS) যোদ্ধার দ্রুত অগ্রসর হয়েছে কারণ সিরিয়ার মিত্র ইরান ও হিজবুল্লাহ ইসরায়েলি হামলায় দুর্বল হয়ে পড়েছে।

এদিকে আলেপ্পো রক্ষায় রাশিয়ার তোড়জোড়, নতুন সামরিক সরঞ্জাম আসছে সিরিয়ায়।
সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল-শামের (HTS) যোদ্ধাদের দখল প্রতিহত করতে রাশিয়া অতিরিক্ত সহায়তা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সিরিয়ার সেনা সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়ার হমেইমিম ঘাঁটিতে নতুন সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপ আলেপ্পোসহ সিরিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে বিদ্রোহীদের ক্রমবর্ধমান অগ্রযাত্রা থামাতে সহায়তা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়াও অন্তত চারটি ইরানি কার্গো বিমান অস্ত্র সহায়তা নিয়ে অবতরণ করার কথা শোনা যাচ্ছে।

জনপ্রিয়

ক্রিমিয়া নিয়ে ছাড়? শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়াকে স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: ব্লুমবার্গ

সিরিয়ার আলেপ্পো-ইদলিবসহ ছোটবড় অনেক জায়গা দখলে বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল-শামের (HTS) যোদ্ধাদের

প্রকাশিত: ০৪:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

সিরিয়ার হায়াত তাহরির আল-শামের (HTS) বাহিনী দেশটির ঐতিহাসিক ও বৃহত্তম শহর আলেপ্পোর অধিকাংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস আজ শনিবার এই বিষয়টি জানিয়েছে। এদিকে, বিদ্রোহী বাহিনীকে দমনে ২০১৬ সালের পর রাশিয়া আজ শনিবার প্রথমবারের মতো আলেপ্পোর বিভিন্ন অংশে বিমান হামলা চালিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, বুধবার শুরু হওয়া অভিযানে এখন পর্যন্ত ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক। এই অভিযান গত কয়েক বছরের মধ্যে সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় আক্রমণ। বিদ্রোহী বাহিনী ২০১৬ সালে সরকারি বাহিনীর ধাওয়া খেয়ে আলেপ্পো থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর এবারই প্রথম শহরটিতে প্রবেশ করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলেপ্পোর বিমানবন্দর এবং শহরে প্রবেশের সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, শনিবার ভোরে হায়াত তাহরির আল-শাম(HTS) শহরের বেশির ভাগ অংশ কোনো বড় প্রতিরোধ ছাড়াই দখল করেছে। সংস্থাটির এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ‘সরকারি বাহিনী পিছু হটায় কোনো লড়াই হয়নি।’

সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের মুখপাত্র বলেছেন, ‘নগর পরিষদ, পুলিশ স্টেশন, গোয়েন্দা অফিস—সব খালি। এমনটা আগে কখনো ঘটেনি।’

এর আগে, গতকাল শুক্রবার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আলেপ্পো ও ইদলিব প্রদেশের কিছু শহরে তারা পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। এই অঞ্চলগুলোতে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ও মিত্র বাহিনী বুধবার থেকে আক্রমণ চালাচ্ছে। ইসলামপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী এইচটিএস—এর সঙ্গে যুক্ত একটি চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিওতে বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল-শামের (HTS) যোদ্ধাদের আলেপ্পোর ভেতরে যানবাহনে চলাচল করতে দেখা গেছে।

বিবিসি ভিডিওটির অবস্থান (জিও লোকেশন) শনাক্ত করে নিশ্চিত করেছে যে, এটি আলেপ্পোর পশ্চিমাঞ্চলের একটি শহরতলিতে ধারণ করা। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, তাদের একজন প্রতিবেদক শুক্রবার আলেপ্পোর ঐতিহাসিক দুর্গের সামনে সরকারবিরোধী হায়াত তাহরির আল-শামের (HTS) যোদ্ধাদের দেখেছেন।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন দমনের পর সিরিয়ায় শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী এই অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে সিরিয়ার বড় অংশ দখল করে নেয়। পরে সিরিয়ার সরকার রাশিয়া ও অন্যান্য মিত্রদের সহায়তায় অধিকাংশ এলাকা পুনরুদ্ধার করে।

ইদলিব এখনো বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল-শামের (HTS) যোদ্ধাদের শেষ শক্ত ঘাঁটি। এটি মূলত এইচটিএস—এর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তুরস্ক সমর্থিত বিদ্রোহী এবং তুর্কি বাহিনীও সেখানে অবস্থান করছে। শুক্রবার সিরিয়া ও রাশিয়ার বিমানবাহিনী ইদলিবের কাছে ২৩টি বিমান হামলা চালায় বলে জানিয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস।

রাশিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ‘চরমপন্থী শক্তির’ ওপর হামলা চালিয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘সিরিয়ার সরকারকে দ্রুত শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে রাশিয়া সমর্থন দিচ্ছে এবং সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে।’

এর আগে, ইদলিবে ২০২০ সালে রাশিয়া ও তুরস্কের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল। তবে বুধবার এইচটিএস ও মিত্ররা নতুন করে অভিযানের ঘোষণা দেয়। তারা সরকার ও মিত্র মিলিশিয়াদের ওপর অঞ্চলটিতে উত্তেজনা বাড়ানোর অভিযোগ তোলে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল-শামের (HTS) যোদ্ধার দ্রুত অগ্রসর হয়েছে কারণ সিরিয়ার মিত্র ইরান ও হিজবুল্লাহ ইসরায়েলি হামলায় দুর্বল হয়ে পড়েছে।

এদিকে আলেপ্পো রক্ষায় রাশিয়ার তোড়জোড়, নতুন সামরিক সরঞ্জাম আসছে সিরিয়ায়।
সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল-শামের (HTS) যোদ্ধাদের দখল প্রতিহত করতে রাশিয়া অতিরিক্ত সহায়তা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সিরিয়ার সেনা সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়ার হমেইমিম ঘাঁটিতে নতুন সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপ আলেপ্পোসহ সিরিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে বিদ্রোহীদের ক্রমবর্ধমান অগ্রযাত্রা থামাতে সহায়তা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়াও অন্তত চারটি ইরানি কার্গো বিমান অস্ত্র সহায়তা নিয়ে অবতরণ করার কথা শোনা যাচ্ছে।