পূর্ব আফ্রিকা ভিত্তিক সশস্ত্র ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন। চলতি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে মুজাহিদিনরা সোমালিয়ায় পশ্চিমা মদদপুষ্ট মোগাদিশু বাহিনীর বিরুদ্ধে বৃহৎ পরিসরে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করেন। এরপর থেকে সম্মুখ সারিতে উত্তপ্ত সময় পার করছে দেশটি, আর অধিকাংশ যুদ্ধগুলো দেশের কেন্দ্রীয় হিরান এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় মধ্য শাবেলি রাজ্যে কেন্দ্রীভূত হয়ে উঠেছে।
এই অঞ্চলে বৃহৎ পরিসরে সমন্বিত আক্রমণ শুরুর পর থেকে আশ-শাবাব মুজাহিদিনরা মোগাদিশু বাহিনী থেকে অনেক শহর ও এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। সর্বশেষ গত ১৬ এপ্রিল বুধবার মুজাহিদিনরা মধ্য শাবেলির গুরুত্বপূর্ণ শহর আদান-ইয়াবালের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন।
এই অভিযানের সময় শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত ১০টি সামরিক ঘাঁটি ও শহরের উপকন্ঠে বিভিন্ন প্রতিরক্ষা পয়েন্টে অবস্থান করছিল মোগাদিশু সরকারের কয়েক হাজার সৈন্য। এই সৈন্যদের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার (২৫০০) সেনাই ছিলো তুর্কি প্রশিক্ষিত গরগর ফোর্সের সদস্য। এছাড়াও ইরিত্রিয়া, বুরুন্ডিয়া ও ইথিওপীয় বাহিনী দ্বারা প্রশিক্ষিত আরও ছয় হাজার (৬০০০) সেনা শহরের কেন্দ্রে নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত ছিলো, সেই সাথে মোগাদিশু সরকারের অন্যান্য সামরিক ইউনিটের পাশাপাশি স্থানীয় ২টি মিলিশিয়া গোষ্ঠীরও কয়েক হাজার সৈন্য শহরটিতে মোতায়েন ছিলো।
মুজাহিদিনরা শহরের কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলে মোগাদিশু বাহিনীর বিপুল সংখ্যক এই সেনা সদস্যরা নিরাপত্তা পোস্ট, বাঙ্কার ও সুড়ঙ্গে অবস্থান নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলার চেষ্টা করে। ফলে মুজাহিদদের অগ্রগতি কিছু সময়ের জন্য ধীরগতি হয়ে পড়ে। কিন্তু মহান রব্বুল আলামিনের পরিকল্পনা ছিলো ভিন্ন, তাই ঠিক এই মূহুর্তেই শুরু হয় প্রবল বাতাস ও মুশলধারে বৃষ্টি। এতে শত্রু ড্রোনগুলো মুজাহিদদের গতিবিধি নজরদারি করতে এবং পশ্চিমা জোট বাহিনী মুজাহিদদের উপর বিমান হামলা চালাতে ব্যর্থ হয়। একই সাথে প্রবল বাতাসে শত্রু ছাউনি ও সামরিক পোস্টগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আর বৃষ্টির পানিতে ভরে যায় মাটি খুঁড়ে তৈরি করা শত্রুর সমস্ত নিরাপত্তা পোস্ট, বাঙ্কার ও সুড়ঙ্গ, প্লাবিত হয় পুরো শহর, কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে রাস্তাঘাট ও সামরিক ঘাঁটি। এতে মোগাদিশু বাহিনী ভারী অস্ত্র শস্ত্র ছাড়াই তাদের নিরাপদ অবস্থানগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়। আর এই সুযোগকে কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চাননি আশ-শাবাব মুজাহিদিনরা।
তাই মুশলধারে বৃষ্টি মধ্যেই হারাকাতুশ শাবাবের সামরিক বাহিনী মাত্র দেড় শতাধিক (১৫০) জানবাজ মুজাহিদদের নিয়ে শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত মোগাদিশু বাহিনীর হাজার হাজার সৈন্যের মোকাবিলায় বীরদর্পে ঝাপিয়ে পড়েন। এসময় অতিবৃষ্টি আর সামরিক ঘাঁটিগুলো গভীর কাঁদায় ডেবে যাওয়ার ফলে মোগাদিশু বাহিনী তাদের কাছে মজুদ গোলাবারুদ ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে মুজাহিদদের তীব্র আক্রমণ আর কৌশলী পদক্ষেপের ফলে মোগাদিশু বাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও আতংক ছড়িয়ে পড়ে, সেনারা তাদের জীবন বাঁচাতে দিকভ্রান্ত হয়ে দলে দলে আশেপাশের গ্রামীণ এলাকা ও বনজঙ্গলে পালিয়ে যেতে শুরু করে। মোগাদিশু বাহিনীর এই পলায়নের মধ্য দিয়ে আশ-শাবাব মুজাহিদিনরা আদন ইয়াবাল শহরের ও এর আশপাশের এক ডজনেরও বেশি সামরিক ঘাঁটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেন।
আশ-শাবাবের সামরিক কমান্ডো কর্তৃক প্রকাশিত প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, এই যুদ্ধে অসংখ্য শত্রু সৈন্য হতাহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫৫ সেনার মৃতদেহ যুদ্ধক্ষেত্রে ফেলে রেখেই পালিয়েছে মোগাদিশু বাহিনী। এছাড়াও আরও ৭৭ এরও বেশি সৈন্য আহত হয়েছে। সেই সাথে অনেক শত্রু সৈন্যকে বন্দী করার পাশাপাশি মুজাহিদিনরা অনেক সামরিক যানবাহন, অগণিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ গনিমত হিসাবে জব্দ করেছেন।
আশ-শাবাব মুজাহিদিনরা এদিন আদান-ইয়াবাল শহর বিজয়ের পর, মোগাদিশু বাহিনী আবুরি শহরের উপকণ্ঠ থেকেও পিছু হটে আসে। হারাকাতুশ শাবাব মুজাহিদিনদের থেকে শহরটি পুনর্দখলে নিতে টানা ১০ দিন ধরে ব্যর্থ আক্রমণ চালিয়ে আসছিল মোগাদিশু বাহিনী। এসময় মুজাহিদদের হামলায় মোগাদিশু বাহিনীর চার (৪০০) শতাধিক সৈন্য নিহত এবং আরও অসংখ্য সৈন্য আহত হয়।
আবুরি থেকে মোগাদিশু বাহিনীর প্রত্যাহারের পর, আশ শাবাব মুজাহিদিনরা শহরের পূর্বে ইয়াসুমান এলাকার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেন। মুজাহিদদের এই অগ্রসরের সংবাদ পাওয়া মাত্রই ইয়াসুমান এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মোগাদিশু বাহিনীর সদস্যরা মুজাহিদদের আসার আগেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। ফলে ইয়াসুমান এলাকাও এদিন মুজাহিদদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। একই সাথে মোগাদিশু বাহিনী আদান-ইয়াবাল জেলার উপকন্ঠের বিভিন্ন সম্মুখ সারির সামরিক ঘাঁটিগুলো থেকেও সরে গেছে।
আঞ্চলিক সূত্রমতে, আদান-ইয়াবাল থেকে পালিয়ে যাওয়া মোগাদিশু সৈন্যরা মোকোকোরি শহরে পাল্টা আক্রমণ চালানোর জন্য একত্রিত হয়েছে। আর আশ-শাবাব মুজাহিদিনরাও মোকোকোরিতে অগ্রসর হওয়ার জন্য শহরের উপকন্ঠে শক্তিবৃদ্ধি করতে শুরু করেছেন।
সূত্রমতে, এদিন ফজরের নামাজের পরপরই মুজাহিদিনরা শহরটির উপকন্ঠে মোগাদিশু বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এসময় হারাকাতুশ শাবাবের কয়েকশো বীর মুজাহিদ শহরের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে তিন দিক থেকে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করেন। এর ধারাবাহিকতায় মুজাহিদিনরা মাত্র আধঘন্টার তীব্র লড়াইয়ের মাধ্যমে শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত মোগাদিশু বাহিনীর সমস্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলতে সক্ষম হন। এরপর মুজাহিদিনরা শহরের কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হতে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন।