পটুয়াখালীর কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতের পাশের রাখাইন পল্লীতে গতকাল শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) শুরু হয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রাচীন ও বর্ণিল উৎসব ‘জলকেলি’। পুরোনো বছরের দুঃখ, গ্লানি আর ক্লান্তিকে জলে ধুয়ে ফেলে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রাখাইন জনগোষ্ঠীর এই উৎসব হয়ে ওঠে আত্মশুদ্ধি, মিলন আর আনন্দের এক মহোৎসবে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম ফিতা কেটে উৎসবের উদ্বোধন করেন। এরপর তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে পানি ছিটিয়ে দিয়ে উৎসবের প্রাণবন্ততা ছড়িয়ে দেন পুরো পল্লীতে।
রাখাইন তরুণীরা জানান, ‘জলকেলি’ শুধুই বিনোদন নয়, এটি তাদের কাছে একধরনের আধ্যাত্মিক আত্মশুদ্ধির রীতি। তাদের বিশ্বাস, পানির এই ছোঁয়ায় মুছে যায় পুরোনো সব দুঃখ-কষ্ট এবং শুরু হয় নতুন জীবনের যাত্রা। কেউ ঐতিহ্যবাহী রাখাইন পোশাকে, কেউ আধুনিক সাজে—সবার চোখেমুখে থাকে আনন্দের ছাপ।
জলকেলিতে ছিল রাখাইন ব্যান্ড দলের সঙ্গীত পরিবেশনা, ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, ধর্মীয় আচার, স্থানীয় খাবারের পসরা এবং বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ১৮ এপ্রিল শুরু হওয়া এ উৎসব চলবে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত।
এবারের উৎসবে যোগ হয় এক ব্যতিক্রমী অনুভূতি—উদ্বোধনের পর আয়োজকদের ডাকে অংশগ্রহণকারীরা এক মিনিট নীরবতা পালন করেন ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলায় নিহত মানুষদের স্মরণে। এই মানবিক মুহূর্ত উপস্থিত সবাইকে আবেগে ছুঁয়ে যায়।
আয়োজকদের মতে, জলকেলি উৎসবের অন্যতম উদ্দেশ্য রাখাইন সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় ধরে রাখা।
রাখাইন তরুণী ম্যাসুয়েন বলেন, “আমরা কারও প্রতি রাগ পুষে রাখি না। বছরের শেষে যা কিছু খারাপ, সব এই পানির সঙ্গে ধুয়ে ফেলি। নতুন বছর শুরু করি হাসি আর ভালোবাসা নিয়ে।”
বাংলাদেশের বহুবর্ণ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের এক অনন্য নিদর্শন এই জলকেলি উৎসব, যেখানে পানির প্রতিটি ছিটায় মিশে থাকে মিলন, আনন্দ আর আত্মশুদ্ধির নিঃশব্দ বার্তা।