বিগত সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী, আমলা, পুলিশসহ অনেকেই আটক হয়েছেন। তবে এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ কিছু নেতারা। বুধবার (৬ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, ১৪ দলের প্রধান সমন্বয়ক ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে।
জানা যায়, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই আত্মগোপনে চলে যান। এখনো তাদের জনসম্মুখে দেখা যাচ্ছে না। শীর্ষ নেতারা দেশে আছে কি না তা নিয়ে বিভিন্ন সময় খবর প্রকাশ হলেও তাদের অবস্থান নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।
আটককৃত নেতারা:
গত ১৪ অক্টোবর রাতে গ্রেপ্তার হন দলের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক এবং কর্নেল ফারুক খান। ওইদিন রাজধানীর ইস্কাটন এলাকা থেকে আব্দুর রাজ্জাককে এবং ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে আটক করা হয় ফারুক খানকে।
সরকার পতনের পর শুরুর দিকেই আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের মধ্যে গ্রেপ্তার হন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
এরপর গত দুই মাসে আটক হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক মন্ত্রী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আহমদ হোসেন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ।
এছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং হাজী মো. সেলিম গ্রেপ্তার হয়েছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক সংসদ সদস্য শাহে আলম, সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এছাড়া গত দুই মাসে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটককৃতদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা হয়েছে।
তবে শুধু আওয়ামী লীগের নেতারাই নন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে আসামি করা হয়েছে বিগত সরকারের আমলে দায়িত্ব পালন করা কিছু পুলিশ সদস্য ও আমলার বিরুদ্ধেও। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজন সাবেক শীর্ষ আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এদের মধ্যে আছেন শেখ হাসিনা আমলের সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও আবুল কালাম আজাদ। আছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, সাবেক জননিরাপত্তা সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়াসচিব মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ। এছাড়াও সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক এবং আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ পুলিশের সাবেক ১৭ জন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে কলকাতার একটি পার্কে বসে থাকতে দেখা গেছে। দিল্লিতে দেখা গেছে শামীম ওসমানকে। এছাড়া আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় আরো কিছু নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। অন্যান্য দেশে যাওয়ার গুঞ্জন শোনা গেছে কারো কারো ক্ষেত্রে।
এছাড়া পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রীদের মধ্যে ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদ, শেখ সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের অবস্থান নিয়েও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে নানা ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে।
গত প্রায় দুই সপ্তাহ অজ্ঞাত স্থান থেকে দলীয় বিবৃতি দিচ্ছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম। এছাড়া কেউ কেউ গণমাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ বা অনলাইনে সাক্ষাতকারও দিচ্ছেন। তবে তারা এগুলো দেশে বসে করছেন নাকি দেশের বাইরে থেকে তা স্পষ্ট নয়।