ঢাকা , রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
দেশজুড়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার, রেড জোন বরগুনা অচলাবস্থা শেষে স্বাভাবিক হলো জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সংবাদকে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলল ধর্ম মন্ত্রণালয় মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে সিভিল প্রসিডিউর কোড সংশোধন হচ্ছে: আইন উপদেষ্টা গাজীপুরে পুলিশের ছদ্মবেশে প্রতারণা, ৬ যুবক গ্রেফতার গ্যাস দুর্ঘটনা রোধে তিতাসের সতর্কবার্তা, মানতে হবে নিরাপত্তাবিধি দেশসেরা গবেষকের কানাডায় মৃত্যু, হত্যা নাকি অন্যকিছু? দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় শনাক্ত ৭, মৃত্যু শূন্য! ভূমিহীনদের বন্ধু উপাধি পেলেন আবদুল হান্নান মাসউদ

২৬ জুন শুরু এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা, করোনা-ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগ

আগামী ২৬ জুন থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হতে যাচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। ইতোমধ্যে ১১টি শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে করোনাভাইরাস এবং ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। পরীক্ষাসংশ্লিষ্টরাও এ নিয়ে সতর্ক রয়েছেন। যদিও তারা জানিয়েছেন, শঙ্কা থাকলেও নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। অনানুষ্ঠানিকভাবে কিছু বিকল্প পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সরকারি রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৫৩ জন, মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। একই সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৫৭০ জন এবং মারা গেছেন ২৮ জন। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে উভয় সংক্রমণই ঊর্ধ্বমুখী, যা অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে দেশের ৯ হাজার ৩১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে অংশ নিতে যাচ্ছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায়। তত্ত্বীয় পরীক্ষা চলবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে ১১ থেকে ২১ আগস্ট।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা তরুণ। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই নিরাপদ থাকবে। নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”

শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা জানিয়েছেন, সংক্রমণ পরিস্থিতি সত্ত্বেও পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই। উচ্চ মাধ্যমিকে বিষয়সংখ্যা বেশি হওয়ায় সূচি মেনে চলা জরুরি। তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে প্রস্তুত রয়েছেন তারা।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, “ডেঙ্গু ও করোনা নিয়ে আমরা চিন্তিত। অভিভাবকরাও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তবে আমাদের হাতে নির্ধারিত সময়েই পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।”

এদিকে অনেক অভিভাবক কেন্দ্র সংখ্যা বাড়িয়ে দ্রুত পরীক্ষার দাবি তুলেছেন। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন কলেজের এক ছাত্রীর মা বলেন, “ভিকারুননিসা নূন ও নটর ডেমের মতো বড় কলেজগুলোতে কেন্দ্র না থাকায় ঝুঁকি বাড়ছে। চাইলে এসব প্রতিষ্ঠানেই কেন্দ্র করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।”

কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন, নিজ নিজ কলেজে কেন্দ্র হওয়ায় দায়িত্ব পড়েছে তাদের উপর। ডেঙ্গু ও করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষক-পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কারণ, পরীক্ষার সময় শুধু তিন ঘণ্টা নয় — শিক্ষকদের আগেই কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে হয় এবং কেন্দ্রে ভিড়ের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানা কঠিন হয়ে পড়ে।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, “বর্তমানে সংক্রমণের হারে পরীক্ষা বন্ধ রাখার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। পরীক্ষার দিন মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে আসন বণ্টন করা হবে।”

তিনি আরও জানান, ১৮ জুন কেন্দ্র সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। পাশাপাশি ১৫ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হলে ওয়েবসাইট ও অন্যান্য মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা হবে।

ময়মনসিংহ বোর্ডের সচিব অধ্যাপক সফিউদ্দিন সেখ বলেন, “আমরা পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি শেষ করেছি। ১৫ জুন অফিস খোলার পর আন্তঃবোর্ড বৈঠকে পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”

যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আসমা বেগম বলেন, “সংক্রমণের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার থেকে সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ছুটির পর এসব কার্যক্রম জোরদার করা হবে।”

অন্যদিকে কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শামছুল ইসলাম জানান, “শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। রোববার এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যাবে।”

জনপ্রিয়

দেশজুড়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার, রেড জোন বরগুনা

২৬ জুন শুরু এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা, করোনা-ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগ

প্রকাশিত: ১৪ ঘন্টা আগে

আগামী ২৬ জুন থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হতে যাচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। ইতোমধ্যে ১১টি শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে করোনাভাইরাস এবং ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। পরীক্ষাসংশ্লিষ্টরাও এ নিয়ে সতর্ক রয়েছেন। যদিও তারা জানিয়েছেন, শঙ্কা থাকলেও নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। অনানুষ্ঠানিকভাবে কিছু বিকল্প পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সরকারি রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৫৩ জন, মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। একই সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৫৭০ জন এবং মারা গেছেন ২৮ জন। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে উভয় সংক্রমণই ঊর্ধ্বমুখী, যা অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে দেশের ৯ হাজার ৩১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে অংশ নিতে যাচ্ছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায়। তত্ত্বীয় পরীক্ষা চলবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে ১১ থেকে ২১ আগস্ট।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা তরুণ। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই নিরাপদ থাকবে। নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”

শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা জানিয়েছেন, সংক্রমণ পরিস্থিতি সত্ত্বেও পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই। উচ্চ মাধ্যমিকে বিষয়সংখ্যা বেশি হওয়ায় সূচি মেনে চলা জরুরি। তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে প্রস্তুত রয়েছেন তারা।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, “ডেঙ্গু ও করোনা নিয়ে আমরা চিন্তিত। অভিভাবকরাও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তবে আমাদের হাতে নির্ধারিত সময়েই পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।”

এদিকে অনেক অভিভাবক কেন্দ্র সংখ্যা বাড়িয়ে দ্রুত পরীক্ষার দাবি তুলেছেন। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন কলেজের এক ছাত্রীর মা বলেন, “ভিকারুননিসা নূন ও নটর ডেমের মতো বড় কলেজগুলোতে কেন্দ্র না থাকায় ঝুঁকি বাড়ছে। চাইলে এসব প্রতিষ্ঠানেই কেন্দ্র করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।”

কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন, নিজ নিজ কলেজে কেন্দ্র হওয়ায় দায়িত্ব পড়েছে তাদের উপর। ডেঙ্গু ও করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষক-পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কারণ, পরীক্ষার সময় শুধু তিন ঘণ্টা নয় — শিক্ষকদের আগেই কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে হয় এবং কেন্দ্রে ভিড়ের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানা কঠিন হয়ে পড়ে।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, “বর্তমানে সংক্রমণের হারে পরীক্ষা বন্ধ রাখার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। পরীক্ষার দিন মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে আসন বণ্টন করা হবে।”

তিনি আরও জানান, ১৮ জুন কেন্দ্র সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। পাশাপাশি ১৫ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হলে ওয়েবসাইট ও অন্যান্য মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা হবে।

ময়মনসিংহ বোর্ডের সচিব অধ্যাপক সফিউদ্দিন সেখ বলেন, “আমরা পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি শেষ করেছি। ১৫ জুন অফিস খোলার পর আন্তঃবোর্ড বৈঠকে পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”

যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আসমা বেগম বলেন, “সংক্রমণের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার থেকে সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ছুটির পর এসব কার্যক্রম জোরদার করা হবে।”

অন্যদিকে কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শামছুল ইসলাম জানান, “শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। রোববার এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যাবে।”