২০২৪ সালের ‘জুলাই অভ্যুত্থানে’ সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
রবিবার (২৮ মে) চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে ১৩৫ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করেন। তিনি বলেন, “২০২৪ সালের বর্ষা বিপ্লবের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের নিউক্লিয়াস ছিলেন শেখ হাসিনা।” চার্জশিটে বলা হয়, রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার করে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক সহিংসতা, হত্যা, গুম, অঙ্গহানি, এবং লাশ পোড়ানোর মতো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
এই ঐতিহাসিক বিচারপ্রক্রিয়া প্রথমবারের মতো সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। আদালতে চিফ প্রসিকিউটর আবেগভরে বলেন, “আমি শুধু একজন আইনজীবী নই, ইতিহাসের রক্তাক্ত অধ্যায়ের সাক্ষ্যদাতা।”
পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ:
উসকানিমূলক বক্তব্য:
১৪ জুলাই ২০২৪, শেখ হাসিনা গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এর ফলস্বরূপ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকার সমর্থিত কর্মীরা নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর বর্বর হামলা চালায়।
হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ:
শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের দমন করতে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ বাস্তবায়নে সহায়তা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি।
রংপুরে ছাত্র আবু সাঈদ হত্যা:
১৬ জুলাই, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়েছে শেখ হাসিনাসহ তিনজনকে।
চানখাঁরপুলে ছাত্র হত্যা:
৫ আগস্ট ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করা হয়, যা পরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় দমননীতির অংশ বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
আশুলিয়ায় হত্যা ও লাশ পোড়ানো:
৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা ও লাশ পোড়ানোর ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে হত্যার নির্দেশ, সহায়তা ও অন্যান্য নৃশংস অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর ট্রাইব্যুনালে তিন আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আবেদন করেন। এ সময় প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, আব্দুস সোবহান তরফদার, ও গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম-সহ তদন্ত দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ঘটনা শুধু রাজনৈতিক আন্দোলন দমন নয়, এটি ছিল একটি জনগণের মুক্তি আন্দোলনকে রক্তে থামিয়ে দেওয়ার সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।”
ট্রাইব্যুনাল আগামী সপ্তাহে এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করবে বলে জানা গেছে।