সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। এই রাষ্ট্রের মূলধন আসে রিকশাচালক, গার্মেন্টস শ্রমিক, কৃষক, দোকানদার, শিক্ষক, সাধারণ নাগরিকের পরিশ্রম আর ট্যাক্স থেকে। মোবাইল রিচার্জে ট্যাক্স, চাল-ডাল কেনায় ট্যাক্স, এমনকি মৃত্যুর সনদ নিতেও ট্যাক্স। অথচ হাজারো মানুষ বস্তিতে, ড্রেনে, ফুটপাতে, রেলস্টেশনে রাত্রিযাপন করে। যেখানে একটি শীতের চাদর নেই, সন্তানের জন্য ওষুধ নেই; সেখানে নেতারা এসি রুমে শুয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জাতির অর্থ গিলে খাচ্ছেন!
২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার জোয়ারে শেখ হাসিনার পতন হয়। গণভবন, সংসদ ভবনের মতো ‘অস্পৃশ্য’ স্থাপনাগুলোয় ঢুকে পড়ে হাজারো মানুষ। কারণ তারা বুঝে গিয়েছিল এই রাষ্ট্রে আর কোনো ভরসা নেই। তারা কারও দয়ায় নয়, নিজেদের অধিকারে ঢুকেছে। প্রমাণ করে দিয়েছে এই ভবন কারও পারিবারিক সম্পত্তি নয়। এগুলো করদাতা গরিব মানুষের মালিকানাধীন, যারা তিলে তিলে রাষ্ট্র গড়েছে, কিন্তু আজ রাষ্ট্র তাদের গিলে ফেলছে।
আমরা আর চুপ থাকব না। আমরা আর চুপ থাকলে এই দুর্নীতির, বিচারহীনতার, চোর-রাজনীতির শিকড় আরও গভীরে প্রবেশ করবে। এই ‘নেতা’ নামধারী দুর্নীতিবাজরা দেশকে বিদেশে বিক্রি করে দেয়, নিজেদের ছেলেমেয়েদের লন্ডনে পাঠায়, অথচ দেশের কৃষক ধানের দাম পায় না, শ্রমিক ন্যায্য মজুরি পায় না, শিক্ষার্থী চাকরি পায় না। এই রাষ্ট্র কাদের জন্য? এই ভবন কাদের জন্য?
গণভবন ও সংসদ ভবন জনগণের ঘর হোক। সেখানে কোনো দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকের থাকার অধিকার নেই। যারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসে, জনগণের অর্থে বিলাস করে, দেশকে লুটপাটের অভয়ারণ্য বানায়, তাদের জন্য এই রাষ্ট্রে এক ফোঁটা সম্মান থাকা উচিত নয়। বরং তাদের জন্য দরকার খোলা আদালত, গণশাসনের কাঠগড়া।
এটি কোনো আবেগ নয়, এটি যুক্তি। অর্থনৈতিক যুক্তি– কারণ ট্যাক্স দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। নৈতিক যুক্তি– কারণ ঘরহীনদের চেয়ে বেশি অধিকার আর কারও নেই। সাংবিধানিক যুক্তি– কারণ রাষ্ট্র বলেছে, সব ক্ষমতার উৎস জনগণ। তাই এই দাবিকে অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। আমরা মালিক আর রাষ্ট্র আমাদের সেবা না দিলে সেটা হবে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা।
তাই আজ বলছি, ভবনগুলো খুলে দিন। জনগণের ঘর জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিন।
রহমান মৃধা: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন