শীতকালীন সবজির মৌসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের কাঁচাবাজারে শুরু হয়েছে অস্থিরতা। বাজারে এখনও পর্যাপ্ত গ্রীষ্মকালীন সবজি না উঠায় বাড়ছে দাম। পাশাপাশি মুরগি, ডিম, পেঁয়াজ ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও চড়েছে, যা ভোক্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, খিলক্ষেত, নয়াবাজার, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সবজিই ৬০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। করলা, বেগুন, বরবটি, কচুর লতি, ঝিঙে, কাঁকরোল, পটোল, শসা, গাজর, ঢ্যাঁড়শসহ বেশিরভাগ সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
চাহিদা বেশি, সরবরাহ কম
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্রীষ্মকালীন সবজি এখনও বাজারে পুরোপুরি আসেনি। কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা রসুল জানান, “গরমের সবজি উঠছে বটে, তবে সেটা পর্যাপ্ত নয়। ফলে দাম বেশি। সরবরাহ বাড়লেই দাম কমবে।”
খিলক্ষেতের বিক্রেতা আনিস বলেন, “প্রতি বছর এই সময়ে পেঁপে ও অন্যান্য সবজির দাম বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।”
মুরগি ও ডিমের বাজারেও অস্থিরতা
বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বেড়ে হয়েছে ১৮০-১৯০ টাকা, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ১০-২০ টাকা বেশি। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়, দেশি মুরগি ৬৫০-৬৮০ টাকা, আর হাঁসের দাম ৬০০-৭০০ টাকার মধ্যে। ডিমের দামও বেড়েছে। লাল ডিম প্রতি ডজন ১২০-১৩০ টাকা, সাদা ডিম ১১৫-১২০ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিম ২২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
পেঁয়াজ-ধনেপাতা-মরিচেও আগুন
পহেলা বৈশাখের পর হঠাৎ বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। ধনেপাতা প্রতি কেজি ২০০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা দাবি করছেন, বৃষ্টির কারণে অনেক ফসল নষ্ট হওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহ কমেছে।
আলু-মাছ-মাংসে কিছুটা স্থিতিশীলতা
পণ্যবাজারে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে আলু, মাছ এবং গরু-খাসির মাংসের দাম। আলু বিক্রি হচ্ছে ২০-২২ টাকা কেজি, রুই ও কাতল মাছ ৩৫০-৪৫০ টাকা, চাষের শিং-মাগুর ৫০০-৫৫০ টাকা এবং গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভোক্তাদের অভিযোগ: বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি
বাজারে বেড়েছে ক্রেতাদের হতাশা ও ক্ষোভ। ফিরোজ নামে এক ক্রেতা অভিযোগ করেন, “গরমকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। সরকারের নজরদারি জরুরি।” অন্যদিকে জেসমিন নামে এক গৃহিণী বলেন, “দাম এত বেড়েছে যে বাজারে এসে শুধু তাকিয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই।”
সরকারি মনিটরিং ও টিসিবির হস্তক্ষেপ জরুরি
ভোক্তারা সরকারের কঠোর মনিটরিং, বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং টিসিবির কার্যকর ভূমিকা কামনা করছেন। না হলে পণ্যসামগ্রীর দামে লাগাম টানা কঠিন হয়ে পড়বে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।