ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
রবার্ট এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজার নথি প্রকাশ এপ্রিলের রাতের আকাশে দুর্লভ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক চমক কিশোরগঞ্জে ভেজাল খাদ্য তৈরির দায়ে ৪ প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা মুন্সীগঞ্জে পুকুর থেকে ৩২৬ রাউন্ড চায়না রাইফেলের গুলি উদ্ধার গণ-অভ্যুত্থানের পর সমঝোতার সংস্কার দরকার: এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ভিসির প্রতীকী চেয়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ কুয়েট শিক্ষার্থীদের আবাসিকে গ্যাস সংযোগ নিয়ে প্রতারণা: সতর্ক করলো তিতাস গ্যাস ঘুষ ও হয়রানির অভিযোগে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি স্ট্যান্ড রিলিজ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ‘শহীদ তুরাব স্ট্যান্ড’ নামকরণ চার বছরে এসএসসি পরীক্ষার্থী কমেছে তিন লাখের বেশি

ফিলিস্তিনিদের প্রতি আরব দেশগুলোর সমর্থন: জটিল সম্পর্ক ও রাজনৈতিক সংকট

আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের দাবির প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানালেও, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপত্তা, আঞ্চলিক ও গোষ্ঠীগত উত্তেজনার কারণে এসব দেশ ও ফিলিস্তিনিদের সম্পর্ক জটিল হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতি রাজনৈতিক ও সামরিক সংকট তৈরি করেছে, যা বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিশাল প্রভাব ফেলছে।

জর্ডান
১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর প্রায় সাত লাখ ফিলিস্তিনি নিজ ভূমি ছেড়ে পালিয়ে যান অথবা তাদের চলে যেতে বাধ্য করা হয়। অধিকাংশই আশ্রয় নেয় জর্ডানে, যা পরবর্তীতে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইলের কাছে পরাজয়ের পর প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) জর্ডানে আশ্রয় নেয়। তবে, ১৯৭০ সালে পিএলও এবং জর্ডানের সরকারের মধ্যে গৃহযুদ্ধের ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয় এবং অনেককে লেবাননে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৯৪ সালে ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি সইয়ের মাধ্যমে জর্ডান শান্তির পথে একটি বড় পদক্ষেপ নেয়।

লেবানন
লেবানন ১৯৭৫ সালে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে, পিএলও দেশের বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরকে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। ১৫ বছরের দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের এক পর্যায়ে লেবাননের খ্রিষ্টান সশস্ত্র গোষ্ঠী সাবরা ও শাতিলা শিবিরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালায়। এই ঘটনায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়। যদিও লেবানন সরকার ফিলিস্তিনিদের নাগরিক অধিকার প্রদানে অস্বীকার করেছে, তারা তাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছে।

মিসর
মিসর, যা আরব বিশ্বের অন্যতম প্রধান শক্তি, ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান নৃশংসতা বন্ধ করতে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতা করছে কায়রো। হামাসের সঙ্গে মিসরের রাজনৈতিক সম্পর্কও রয়েছে, কারণ হামাস মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা। তবে, গাজা উপত্যকার ওপর মিসরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং অবরোধ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জটিল করে তুলেছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)
২০২০ সালে, ইউএই ইসরাইলের সঙ্গে আব্রাহাম অ্যাকর্ড চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা আরব দেশগুলোর দীর্ঘদিনের নীতি ভেঙে ফেলে। এটি মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রথম বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়। ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে ইউএই রাজনৈতিকভাবে নতুন দ্বার উন্মোচন করে, তবে এর ফলে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি কিছুটা পিছিয়ে পড়ে।

সুদান ও কুয়েত
২০২০ সালে সুদান ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে, যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির পর। একইভাবে, কুয়েতও ১৯৯০ সালের পর থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছে, তবে তাদের রাজনৈতিক নীতির কারণে একসময় কুয়েতের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সম্পর্ক বিঘ্নিত হয়েছিল।

ইরাক
সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলে ইরাকে ফিলিস্তিনিদের জন্য নানা সুবিধা প্রদান করা হলেও, ২০০৩ সালে সাদ্দামের পতনের পর থেকে সেখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা সহিংসতা এবং অবমাননার শিকার হন। শিয়াপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে তারা দেশটি ছাড়তে বাধ্য হয়।

এই জটিল পরিস্থিতি ফিলিস্তিনিরা এবং আরব দেশগুলোর সম্পর্কের ধারাকে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে নিয়ে এসেছে, যেখানে রাজনৈতিক, সামরিক এবং কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা হচ্ছে।

জনপ্রিয়

রবার্ট এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজার নথি প্রকাশ

ফিলিস্তিনিদের প্রতি আরব দেশগুলোর সমর্থন: জটিল সম্পর্ক ও রাজনৈতিক সংকট

প্রকাশিত: ০৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের দাবির প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানালেও, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপত্তা, আঞ্চলিক ও গোষ্ঠীগত উত্তেজনার কারণে এসব দেশ ও ফিলিস্তিনিদের সম্পর্ক জটিল হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতি রাজনৈতিক ও সামরিক সংকট তৈরি করেছে, যা বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিশাল প্রভাব ফেলছে।

জর্ডান
১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর প্রায় সাত লাখ ফিলিস্তিনি নিজ ভূমি ছেড়ে পালিয়ে যান অথবা তাদের চলে যেতে বাধ্য করা হয়। অধিকাংশই আশ্রয় নেয় জর্ডানে, যা পরবর্তীতে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইলের কাছে পরাজয়ের পর প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) জর্ডানে আশ্রয় নেয়। তবে, ১৯৭০ সালে পিএলও এবং জর্ডানের সরকারের মধ্যে গৃহযুদ্ধের ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয় এবং অনেককে লেবাননে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৯৪ সালে ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি সইয়ের মাধ্যমে জর্ডান শান্তির পথে একটি বড় পদক্ষেপ নেয়।

লেবানন
লেবানন ১৯৭৫ সালে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে, পিএলও দেশের বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরকে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। ১৫ বছরের দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের এক পর্যায়ে লেবাননের খ্রিষ্টান সশস্ত্র গোষ্ঠী সাবরা ও শাতিলা শিবিরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালায়। এই ঘটনায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়। যদিও লেবানন সরকার ফিলিস্তিনিদের নাগরিক অধিকার প্রদানে অস্বীকার করেছে, তারা তাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছে।

মিসর
মিসর, যা আরব বিশ্বের অন্যতম প্রধান শক্তি, ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান নৃশংসতা বন্ধ করতে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতা করছে কায়রো। হামাসের সঙ্গে মিসরের রাজনৈতিক সম্পর্কও রয়েছে, কারণ হামাস মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা। তবে, গাজা উপত্যকার ওপর মিসরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং অবরোধ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জটিল করে তুলেছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)
২০২০ সালে, ইউএই ইসরাইলের সঙ্গে আব্রাহাম অ্যাকর্ড চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা আরব দেশগুলোর দীর্ঘদিনের নীতি ভেঙে ফেলে। এটি মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রথম বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়। ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে ইউএই রাজনৈতিকভাবে নতুন দ্বার উন্মোচন করে, তবে এর ফলে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি কিছুটা পিছিয়ে পড়ে।

সুদান ও কুয়েত
২০২০ সালে সুদান ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে, যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির পর। একইভাবে, কুয়েতও ১৯৯০ সালের পর থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছে, তবে তাদের রাজনৈতিক নীতির কারণে একসময় কুয়েতের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সম্পর্ক বিঘ্নিত হয়েছিল।

ইরাক
সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলে ইরাকে ফিলিস্তিনিদের জন্য নানা সুবিধা প্রদান করা হলেও, ২০০৩ সালে সাদ্দামের পতনের পর থেকে সেখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা সহিংসতা এবং অবমাননার শিকার হন। শিয়াপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে তারা দেশটি ছাড়তে বাধ্য হয়।

এই জটিল পরিস্থিতি ফিলিস্তিনিরা এবং আরব দেশগুলোর সম্পর্কের ধারাকে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে নিয়ে এসেছে, যেখানে রাজনৈতিক, সামরিক এবং কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা হচ্ছে।