ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
রবার্ট এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজার নথি প্রকাশ এপ্রিলের রাতের আকাশে দুর্লভ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক চমক কিশোরগঞ্জে ভেজাল খাদ্য তৈরির দায়ে ৪ প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা মুন্সীগঞ্জে পুকুর থেকে ৩২৬ রাউন্ড চায়না রাইফেলের গুলি উদ্ধার গণ-অভ্যুত্থানের পর সমঝোতার সংস্কার দরকার: এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ভিসির প্রতীকী চেয়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ কুয়েট শিক্ষার্থীদের আবাসিকে গ্যাস সংযোগ নিয়ে প্রতারণা: সতর্ক করলো তিতাস গ্যাস ঘুষ ও হয়রানির অভিযোগে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি স্ট্যান্ড রিলিজ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ‘শহীদ তুরাব স্ট্যান্ড’ নামকরণ চার বছরে এসএসসি পরীক্ষার্থী কমেছে তিন লাখের বেশি

নিয়োগ বাণিজ্যে পুলিশ কর্মকর্তার বাড়িতেই ট্রেনিং সেন্টার!

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজের বাড়িতে একটি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করে পুলিশ নিয়োগের নামে কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন করেছেন।

বাড়িতেই গড়ে তোলা হয়েছে ট্রেনিং সেন্টার

অভিযোগ অনুযায়ী, পুলিশ নিয়োগের জন্য ছানোয়ার হোসেন তার নিজ বাড়িতেই একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির এক মাস আগে আবেদনকারীদের ভর্তি করা হতো। প্রতি ব্যাচে ১৫-২০ জন প্রশিক্ষণার্থী থাকত, আর জনপ্রতি ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে নেওয়া হতো।

গত ৭-৮ বছরে এই পদ্ধতিতে শতাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং ৫-৬ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার দেখভাল করতেন ছানোয়ার হোসেনের ভাই, স্কুল শিক্ষক আবদুল মান্নান ও নুরুল ইসলাম। অভিযোগে আরও বলা হয়, নিয়োগপ্রাপ্ত কিছু ব্যক্তির কাছ থেকে টাকার পাশাপাশি জমিও নেওয়া হয়েছে।

দুদকের তদন্ত ও সম্পদ যাচাই

দুদক ইতোমধ্যে ছানোয়ার হোসেন ও তার পরিবারের সম্পদের নথিপত্র সংগ্রহ শুরু করেছে। ৩ মার্চ দুদক থেকে পাঠানো এক চিঠিতে ছানোয়ার হোসেন, তার স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোন ও মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন নথিপত্র তলব করা হয়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ছানোয়ার ও তার ভাইদের ২৭টি ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এছাড়া তিনি ঘুষের টাকায় একটি আলিশান দোতলা বাড়ি, একটি ট্রেনিং সেন্টার এবং আরও অনেক সম্পদ গড়ে তুলেছেন।

অসংখ্য জমি ক্রয়ের অভিযোগ

অভিযোগে বলা হয়েছে, ছানোয়ার হোসেন ও তার ভাইয়েরা বিভিন্ন জায়গা থেকে বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছেন। ধামরাইয়ের উত্তর দীঘলগ্রাম ও দক্ষিণ দীঘলগ্রামে ৭ কোটি টাকার জমি রয়েছে তাদের দখলে। এছাড়া মুরাদনগর, লাকুরিয়া পাড়া এবং অন্যান্য জায়গায় আরও সাড়ে ৪ কোটি টাকার জমি ক্রয়ের চুক্তি হয়েছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও হয়রানি

স্থানীয় ভুক্তভোগীদের দাবি, ছানোয়ার হোসেন ও তার পরিবারের একটি লাঠিয়াল বাহিনী রয়েছে, যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললে হুমকি দেয় ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়।

ভুক্তভোগী দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করেছেন, ছানোয়ারের ভাই আবদুল মান্নানের বাড়ির পাশে থাকা তার ৩৭ শতাংশ জমি জোর করে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। দেলোয়ার বলেন, ছানোয়ার প্রভাব খাটিয়ে ধামরাই থানায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা করিয়েছেন।

ছানোয়ার হোসেনের পুলিশ ক্যারিয়ার

২০০৬ সালে ২৫তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে ছানোয়ার হোসেন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট এবং বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা এই গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জনপ্রিয়

রবার্ট এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজার নথি প্রকাশ

নিয়োগ বাণিজ্যে পুলিশ কর্মকর্তার বাড়িতেই ট্রেনিং সেন্টার!

প্রকাশিত: ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজের বাড়িতে একটি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করে পুলিশ নিয়োগের নামে কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন করেছেন।

বাড়িতেই গড়ে তোলা হয়েছে ট্রেনিং সেন্টার

অভিযোগ অনুযায়ী, পুলিশ নিয়োগের জন্য ছানোয়ার হোসেন তার নিজ বাড়িতেই একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির এক মাস আগে আবেদনকারীদের ভর্তি করা হতো। প্রতি ব্যাচে ১৫-২০ জন প্রশিক্ষণার্থী থাকত, আর জনপ্রতি ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে নেওয়া হতো।

গত ৭-৮ বছরে এই পদ্ধতিতে শতাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং ৫-৬ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার দেখভাল করতেন ছানোয়ার হোসেনের ভাই, স্কুল শিক্ষক আবদুল মান্নান ও নুরুল ইসলাম। অভিযোগে আরও বলা হয়, নিয়োগপ্রাপ্ত কিছু ব্যক্তির কাছ থেকে টাকার পাশাপাশি জমিও নেওয়া হয়েছে।

দুদকের তদন্ত ও সম্পদ যাচাই

দুদক ইতোমধ্যে ছানোয়ার হোসেন ও তার পরিবারের সম্পদের নথিপত্র সংগ্রহ শুরু করেছে। ৩ মার্চ দুদক থেকে পাঠানো এক চিঠিতে ছানোয়ার হোসেন, তার স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোন ও মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন নথিপত্র তলব করা হয়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ছানোয়ার ও তার ভাইদের ২৭টি ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এছাড়া তিনি ঘুষের টাকায় একটি আলিশান দোতলা বাড়ি, একটি ট্রেনিং সেন্টার এবং আরও অনেক সম্পদ গড়ে তুলেছেন।

অসংখ্য জমি ক্রয়ের অভিযোগ

অভিযোগে বলা হয়েছে, ছানোয়ার হোসেন ও তার ভাইয়েরা বিভিন্ন জায়গা থেকে বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছেন। ধামরাইয়ের উত্তর দীঘলগ্রাম ও দক্ষিণ দীঘলগ্রামে ৭ কোটি টাকার জমি রয়েছে তাদের দখলে। এছাড়া মুরাদনগর, লাকুরিয়া পাড়া এবং অন্যান্য জায়গায় আরও সাড়ে ৪ কোটি টাকার জমি ক্রয়ের চুক্তি হয়েছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও হয়রানি

স্থানীয় ভুক্তভোগীদের দাবি, ছানোয়ার হোসেন ও তার পরিবারের একটি লাঠিয়াল বাহিনী রয়েছে, যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললে হুমকি দেয় ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়।

ভুক্তভোগী দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করেছেন, ছানোয়ারের ভাই আবদুল মান্নানের বাড়ির পাশে থাকা তার ৩৭ শতাংশ জমি জোর করে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। দেলোয়ার বলেন, ছানোয়ার প্রভাব খাটিয়ে ধামরাই থানায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা করিয়েছেন।

ছানোয়ার হোসেনের পুলিশ ক্যারিয়ার

২০০৬ সালে ২৫তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে ছানোয়ার হোসেন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট এবং বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা এই গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।