ঢাকা , সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :

উত্তেজনাপূর্ণ ৯৬ ঘণ্টা পর গাজা চুক্তি

কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় উত্তেজনপূর্ণ ৯৬ ঘণ্টার আলোচনা শেষে বহু প্রতীক্ষিত গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা। রয়টার্স লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই সফলতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে হওয়া চুক্তিতে পৌঁছাতে আলোচনায় উইটকফের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।

গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা যুদ্ধের ইতি টানতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ইসরায়েল ও হামাসের সম্মতি এবং রোববার থেকে তা কার্যকর হওয়ার আশাবাদের মধ্যেই ভূখন্ডটিতে ব্যাপক ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৮১ ফিলিস্তিনি হয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার খবর আসার পর থেকেই ইসরায়েল গাজায় হামলা জোরদার করেছে। এসব হামলায় গত ২৪ ঘন্টায় এই বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সর্বশেষ নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা নিয়ে গাজায় যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬,৭৪৪ জনে। এর মধ্যে শিশু ১৮ হাজার। এর অর্থ হলো, যুদ্ধচলাকালে গাজার মোট জনসংখ্যার প্রতি ৫০ জনের ১ জন নিহত হয়েছেন। তবে অনেক বিশ্লেষক আর মানবাধিকার সংগঠন মনে করছে, নিহত ব্যক্তির প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। গাজার জনসংখ্যার অর্ধেকের বয়স এখন ১৮ বছরের নিচে। চলমান যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ উপত্যকার কয়েক প্রজন্মের পরিবার নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে ইসরায়েল। গাজায় চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ১ লাখ ১০ হাজার ২৬৫ মানুষ আহত হয়েছেন। অর্থাৎ গাজায় প্রতি ২০ জনের ১ জন যুদ্ধে আহত হয়েছেন।

গাজা চুক্তি সম্পাদন প্রক্রিয়ার বিষয়ে জ্ঞাত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে তার শেষ দিকে ট্রাম্পের মুহুর্মুহু সতর্কবাণীতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। ট্রাম্প বারবার বলেছিলেন, ২০ জানুয়ারি তার অভিষেকের আগে হামাস জিম্মি করে রাখা বন্দিদের মুক্তি না দিলে মধ্যপ্রাচ্যকে ‘কড়া মূল্য’ চুকাতে হবে। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা কয়েক মাস ধরে থেমে থেমে চলছিল, কিন্তু নভেম্বরে ইসরায়েল ও লেবাননের হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি হওয়ার পর এ আলোচনা গতি পায়। ওই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, শেষ ৯৬ ঘণ্টায় আলোচনা একটি উত্তপ্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। তাদের হাতে বন্দি জিম্মির সংখ্যা কতো এবং যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে তাদের মধ্যে কাকে কাকে মুক্তি দেওয়া হবে হামাস তা জানাতে অস্বীকার করার পর এটি আলোচনার প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। ডিসেম্বরের শেষে এসে হামাস জিম্মিদের তালিকা দিতে রাজি হলে ফের আলোচনা গতিশীল হয় আর তা ইসরায়েলে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে জিম্মিদের মুক্ত করার চুক্তির দিকে এগিয়ে যায়। মার্কিন টিমের নেতৃত্ব দেওয়া দোহায় অবস্থানরত ম্যাকগার্ক চুক্তির বিস্তারিত চূড়ান্ত করতে কাজ করার সময় উইটকফ তাদের সঙ্গে যোগ দেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তির মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল জিম্মিদের মুক্তির ক্রম আর তাদের বিনিময়ে ইসরায়েল কতোজন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে তা নির্ধারণ এবং গাজার ভবিষ্যৎ মানবিক সহায়তা। এই পর্যায়ে এসে আলোচনা অত্যন্ত স্নায়ুক্ষয়ী হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্র এখন আশা করছে যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি রোববার থেকেই কার্যকর হওয়া শুরু হবে।

জনপ্রিয়

শেখ হাসিনাসহ পরিবারের ১০ সদস্যের ‘এনআইডি লকড’

উত্তেজনাপূর্ণ ৯৬ ঘণ্টা পর গাজা চুক্তি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫

কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় উত্তেজনপূর্ণ ৯৬ ঘণ্টার আলোচনা শেষে বহু প্রতীক্ষিত গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা। রয়টার্স লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই সফলতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে হওয়া চুক্তিতে পৌঁছাতে আলোচনায় উইটকফের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।

গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা যুদ্ধের ইতি টানতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ইসরায়েল ও হামাসের সম্মতি এবং রোববার থেকে তা কার্যকর হওয়ার আশাবাদের মধ্যেই ভূখন্ডটিতে ব্যাপক ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৮১ ফিলিস্তিনি হয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার খবর আসার পর থেকেই ইসরায়েল গাজায় হামলা জোরদার করেছে। এসব হামলায় গত ২৪ ঘন্টায় এই বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সর্বশেষ নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা নিয়ে গাজায় যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬,৭৪৪ জনে। এর মধ্যে শিশু ১৮ হাজার। এর অর্থ হলো, যুদ্ধচলাকালে গাজার মোট জনসংখ্যার প্রতি ৫০ জনের ১ জন নিহত হয়েছেন। তবে অনেক বিশ্লেষক আর মানবাধিকার সংগঠন মনে করছে, নিহত ব্যক্তির প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। গাজার জনসংখ্যার অর্ধেকের বয়স এখন ১৮ বছরের নিচে। চলমান যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ উপত্যকার কয়েক প্রজন্মের পরিবার নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে ইসরায়েল। গাজায় চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ১ লাখ ১০ হাজার ২৬৫ মানুষ আহত হয়েছেন। অর্থাৎ গাজায় প্রতি ২০ জনের ১ জন যুদ্ধে আহত হয়েছেন।

গাজা চুক্তি সম্পাদন প্রক্রিয়ার বিষয়ে জ্ঞাত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে তার শেষ দিকে ট্রাম্পের মুহুর্মুহু সতর্কবাণীতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। ট্রাম্প বারবার বলেছিলেন, ২০ জানুয়ারি তার অভিষেকের আগে হামাস জিম্মি করে রাখা বন্দিদের মুক্তি না দিলে মধ্যপ্রাচ্যকে ‘কড়া মূল্য’ চুকাতে হবে। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা কয়েক মাস ধরে থেমে থেমে চলছিল, কিন্তু নভেম্বরে ইসরায়েল ও লেবাননের হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি হওয়ার পর এ আলোচনা গতি পায়। ওই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, শেষ ৯৬ ঘণ্টায় আলোচনা একটি উত্তপ্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। তাদের হাতে বন্দি জিম্মির সংখ্যা কতো এবং যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে তাদের মধ্যে কাকে কাকে মুক্তি দেওয়া হবে হামাস তা জানাতে অস্বীকার করার পর এটি আলোচনার প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। ডিসেম্বরের শেষে এসে হামাস জিম্মিদের তালিকা দিতে রাজি হলে ফের আলোচনা গতিশীল হয় আর তা ইসরায়েলে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে জিম্মিদের মুক্ত করার চুক্তির দিকে এগিয়ে যায়। মার্কিন টিমের নেতৃত্ব দেওয়া দোহায় অবস্থানরত ম্যাকগার্ক চুক্তির বিস্তারিত চূড়ান্ত করতে কাজ করার সময় উইটকফ তাদের সঙ্গে যোগ দেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তির মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল জিম্মিদের মুক্তির ক্রম আর তাদের বিনিময়ে ইসরায়েল কতোজন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে তা নির্ধারণ এবং গাজার ভবিষ্যৎ মানবিক সহায়তা। এই পর্যায়ে এসে আলোচনা অত্যন্ত স্নায়ুক্ষয়ী হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্র এখন আশা করছে যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি রোববার থেকেই কার্যকর হওয়া শুরু হবে।