বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে করা মামলার আবেদনটি আমলে নিয়ে কোতোয়ালি থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু বকর সিদ্দিকের আদালত এ আদেশ দেন। এর আগে, সকালে আদালতে মামলার আবেদনটি করেন এনামুল হক নামে একজন। তিনি নিজেকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কর্মী বলে উল্লেখ করেন।
মামলায় ১৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নাম উল্লেখ করা আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- চট্টগ্রাম অ্যাডভোকেট ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রিপন কান্তি নাথ, আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি চন্দন দাস, আওয়ামী লীগ নেতা সজিব রায়, হাবিবুর রহমান মাসুম, রেজিস্ট্রেশন সদর রেকর্ড অফিসের কর্মচারী তপন কান্তি দাস, রাজিব দাস, ছাত্রলীগ নেতা জামিল হোসেন মুছা প্রমুখ।
মামলার আবেদনে বাদী উল্লেখ করেন, তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের একজন সমর্থক। গত ২৬ নভেম্বর জমি রেজিস্ট্রির কাজে আদালতে যান তিনি। সেখান থেকে বাসায় ফেরার পথে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীরা ‘একটা দুইটা মুসলিম ধর, ধরে ধরে জবাই কর’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। বাদীর পরনে পাঞ্জাবি এবং টুপি থাকায় ‘মোল্লাকে জবাই কর’ বলে তার ওপর হামলা করেন চিন্ময়ের অনুসারীরা। হামলায় বাদী ডান হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং মাথায় কিরিচ দিয়ে কোপ দেওয়া হয়। পরে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, গত ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময় কৃষ্ণের অনুসারীদের দ্বারা মারধরের শিকার হন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কর্মী এনামুল হক। দাঁড়ি-টুপি থাকায় সেদিন তার ওপর হামলা করা হয়। তার ডান হাতে ভেঙে গেছে এবং মাথায় কিরিচের কোপও রয়েছে। এ ঘটনায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো ৪০০ থেকে ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়। আবেদনটি গ্রহণ করে কোতোয়ালি থানার ওসিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গত ২৬ নভেম্বর কোতোয়ালি থানার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এরপরই আদালত এলাকায় শুরু হয় তার অনুসারীদের তাণ্ডব। কারাগারে নেয়ার জন্য চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে অনুসারীরা প্রিজন ভ্যানটি আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন।
একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর এবং চট্টগ্রাম আদালত ভবনে প্রবেশপথের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হল গলিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আলিফ লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ফারাঙ্গা এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে।
আলিফ হত্যার ঘটনায় ২৯ নভেম্বর নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন তার বাবা জামাল উদ্দিন। এতে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়।
একইদিন কোতোয়ালি থানায় আরো একটি মামলা করেন আলিফের বড়ভাই খানে আলম। আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে ১১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়।
এর আগে পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তিনটি মামলা করে পুলিশ। এছাড়াও ৩ ডিসেম্বর একই অভিযোগে সাবেক কাউন্সিলরসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো ৪০ থেকে ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মোহাম্মদ উল্লাহ চৌধুরী নামে এক ব্যবসায়ী।
২৬ নভেম্বর আদালত এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট সাতটি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ৪১ জন। তাদের মধ্যে হত্যা মামলায় গ্রেফতার ১১ জন।