ভারতীয় প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি দাবি করেছে যে, ইসলামাবাদের এই পরবর্তী প্রজন্মের সক্ষমতা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা ভারতের ক্রমবর্ধমান শক্তিশালী বহু-স্তরীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের মোকাবেলা করার জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে ভারতের থেকে সামরিকভাবে অনেক এগিয়ে যাবে পাকিস্তান।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি দাবি করেছে যে, ইসলামাবাদের এই পরবর্তী প্রজন্মের সক্ষমতা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা ভারতের ক্রমবর্ধমান শক্তিশালী বহু-স্তরীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের মোকাবেলা করার জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে ভারতের থেকে সামরিকভাবে অনেক এগিয়ে যাবে পাকিস্তান।
হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকেল প্রযুক্তি অর্জন – যা সবচেয়ে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও এড়িয়ে যেতে সক্ষম – পাকিস্তানকে কৌশলগত প্রতিরোধ এবং দ্রুত নির্ভুলতা আক্রমণ ক্ষমতা উভয় ক্ষেত্রেই একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি প্রদান করতে পারে।
চীন-পাকিস্তানের সামরিক সম্পর্কের গভীরতা এবং বেইজিংয়ের নিকটতম আঞ্চলিক মিত্রের কাছে সংবেদনশীল প্রযুক্তি হস্তান্তরের দীর্ঘদিনের ইচ্ছার পরিপ্রেক্ষিতে, এই ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি বাস্তবায়ন কেবল সময়ের ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে।
গত পাঁচ বছরে পাকিস্তানের মোট অস্ত্র আমদানির প্রায় ৮১ শতাংশ চীনের, যা ভারতের ক্রমবর্ধমান শক্তি প্রক্ষেপণের মুখে ইসলামাবাদের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী এবং কৌশলগত জীবনরেখা হিসেবে তার অবস্থানকে আরও দৃঢ় করেছে।
গত সপ্তাহে, চীনা প্রতিরক্ষা সূত্র প্রকাশ করেছে যে পাকিস্তানকে একটি ব্যাপক সামরিক সহায়তা প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জে-৩৫এ পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার, এইচকিউ-১৯ দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং কেজে-৫০০ বায়ুবাহিত প্রাথমিক সতর্কতা এবং নিয়ন্ত্রণ বিমান।
সাম্প্রতিক সময়ে চীন ‘DF-ZF’ নামের এই হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল (Hypersonic Glide Vehicle–HGV) উন্মোচন করেছে, যা আধুনিক যুদ্ধকৌশলে এক বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। এই অস্ত্রটি ঘণ্টায় প্রায় ১৫,০০০ মাইল বা ২৪,০০০ কিমি বেগে ছুটে যেতে সক্ষম, যা শব্দের গতির প্রায় ২০ গুণ (Mach 20)। এত দ্রুত গতির ফলে এটি পৃথিবীর যেকোনো স্থানে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে আঘাত হানতে পারে।
DF-ZF হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকলটি উৎক্ষেপণ করা হয় DF-17 ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবহার করে। তবে এটি প্রচলিত ব্যালিস্টিক মিসাইলের মতো পূর্বনির্ধারিত পথে না গিয়ে মাঝপথে নিজেই গতিপথ পরিবর্তন করতে সক্ষম। এর ফলে শত্রুর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
এ উচ্চ প্রযুক্তির হাইপারসনিক অস্ত্রের কাঠামোতে ব্যবহৃত হয়েছে হাই-টেম্পারেচার সহনশীল কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল এবং উন্নত হিট শিল্ড, যা বায়ুমণ্ডলের প্রবল ঘর্ষণের মাঝেও একে স্থিতিশীল রাখে। এটি স্বল্প সময়ের জন্য সাব-অরবিটাল কক্ষপথে যাতায়াত করতে পারে, ফলে এর রাডার সিগনেচার কম থাকে এবং এটি শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। DF-ZF উভয় ধরনের ওয়ারহেড যেমন পারমাণবিক ও প্রচলিত ওভারহেড বহন করতে সক্ষম, যা একে কৌশলগতভাবে আরও ভয়ানক করে তুলেছে।
আসলে Hypersonic Glide Vehicle (HGV) টেকনোলজি হলো এক ধরনের অতি দ্রুতগামী অস্ত্র যা শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বা তারও বেশি গতিতে (Mach 5+) চলতে পারে এবং ব্যালিস্টিক মিসাইলের মাধ্যমে উৎক্ষেপণের পর বায়ুমণ্ডলের উচ্চ স্তরে গ্লাইড করতে পারে। এটি প্রচলিত ব্যালিস্টিক মিসাইলের মতো পূর্বনির্ধারিত পথে না চলে মাঝপথে দিক পরিবর্তন করতে সক্ষম।
বিশ্বের শীর্ষ সামরিক শক্তিগুলোর মধ্যে এই প্রযুক্তি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যারা হাইপারসনিক প্রকল্পে বারবার বিলম্বের মুখে পড়েছে, তারা বর্তমানে DARPA এর নেতৃত্বে Glide Phase Interceptor (GPI) এবং Hypersonic and Ballistic Tracking Space Sensor (HBTSS) এর মতো প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির উন্নয়নে মনোযোগী হয়েছে।
এদিকে রাশিয়া ইতিমধ্যে Avangard নামে Mach 27 গতিসম্পন্ন HGV মোতায়েন করেছে। এছাড়া তারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে কিনঝাল ও জিরকন হাইপারসনিক মিসাইল ব্যবহার করে বিশ্বের সামনে তার সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। অন্যদিকে ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, এমনকি ইরান ও উত্তর কোরিয়া পর্যন্ত হাইপারসনিক প্রযুক্তিতে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল প্রযুক্তি ভবিষ্যতের যুদ্ধকৌশলকে আমূল বদলে দিতে পারে। এটি অত্যন্ত দ্রুত, লক্ষ্যভেদে নির্ভুল এবং প্রতিপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অকার্যকর করতে সক্ষম। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, উন্নত সেন্সর ও স্মার্ট সফটওয়্যার যুক্ত হলে এটি আরও মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে।
এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, হাইপারসনিক অস্ত্র এখনো কোনো আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির আওতায় পড়েনি। MTCR কিংবা New START এর মতো বিদ্যমান চুক্তিগুলোর আওতায় এগুলো অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে বিশ্বের সামরিক শক্তিধর দেশগুলো নিজেদের মতো করে নতুন এক অশুভ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, DF-ZF শুধুমাত্র একটি অস্ত্র নয়, বরং এটি চীনের কৌশলগত সামরিক অবস্থান ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা নীতি এবং যুদ্ধের ভবিষ্যৎ চেহারাকেই আমূলভাবে বদলে দিতে পারে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সামরিক বিশ্লেষকেরা।