ঢাকা , শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
আরাফা: তাওবা ও রহমতের মহান দিন হামজা চৌধুরীর আগমনে জোয়ার বাংলাদেশ ফুটবলে, ভুটানের বিপক্ষে আজ প্রস্তুতি ম্যাচ রিলসের নামে অশ্লীলতার প্রতিযোগিতা: ভিউয়ের পেছনে দৌড়ে সমাজ হারাচ্ছে মূল্যবোধ আজ মিনায় অবস্থানের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা ভাঙ্গায় মাহিন্দ্রা-বাস সংঘর্ষে ৪ জন নিহত, আহত ৩ মাদরাসা ধ্বংস ঠেকাতে সরকারের বিরুদ্ধে আইনী লড়াই চালিয়ে যাবে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ মাংস বিক্রেতাদের সরাসরি গুলি করার হুমকি দিয়েছেন ভারতের গাজিয়াবাদ বিধায়ক গুর্জ ইসরাইলের সাথে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক ছিন্ন ও ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি বাতিল করেছে স্পেন বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়নি: এনবিআর চেয়ারম্যান খাবার আনতে যাওয়া ২৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরাইল

লাকসাম-মনোহরগঞ্জে পানিবন্দি ৪ লাখ মানুষ, ত্রাণের জন্য হাহাকার

টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজানে ভারত থেকে আসা ঢলে কুমিল্লার লাকসাম-মনোহরগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণের অভাব মনোহরগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বানভাসী মানুষের মাঝে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। ডাকাতিয়া নদীর পানি বৃদ্ধিতে নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষ করে লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীর পানি উপচে ও বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে দুই উপজেলার ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ১৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ইতিমধ্যে প্রায় ২৯ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে পানিবন্দি মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা অফিসের তথ্যমতে, সোমবার (২৬শে আগস্ট) দুপুর ২টা পর্যন্ত ডাকাতিয়া নদীর পানি সব পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে আগের তুলনায় বেড়েছে। লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদীর কয়েকটি স্থানে পাড় ভেঙে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে লাকসাম পৌরসভা, লাকসাম উপজেলা ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

 

এতে ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। লাকসাম উপজেলার ৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলার ১০৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১২ হাজারের অধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তবে কিছু আশ্রয়কেন্দ্রের নিচতলা ডুবে যাওয়ায় আশ্রয় গ্রহণকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে, উপজেলা দু’টির পানিবন্দি ও আশ্রয় শিবিরে অবস্থান নেয়া লোকদেরকে উপজেলা প্রশাসন, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বিএনপি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে।

লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসায় ৮৩টি আশ্রয় শিবিরে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ অবস্থান নিয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। এ পর্যন্ত আমরা মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় ৪৫ টন চাল পেয়েছি। চাল-ডাল, চিঁড়া-মুড়ি, গুড়, চানাচুর-বিস্কুটসহ নানা খাদ্যসামগ্রী বন্যার্তদের মাঝে পৌঁছাচ্ছি।

এ বিষয়ে মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজালা রানী চাকমা বলেন, আমার মনোহরগঞ্জ উপজেলাবাসী ভালো নেই। তারপরও আমরা সকলকে নিয়ে আমাদের সর্বোচ্চ সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করে আসছি এবং এটা চলমান থাকবে। তিনি জানান, ইতিপূর্বে উপজেলাটির ১০৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১২ হাজারের অধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। উপজেলার সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

দেখা যাচ্ছে, আমরা একটি গ্রামে ৩০টি পরিবারের জন্য খাবার নিয়ে গেছি। কিন্তু ওখানে গিয়ে দেখা যায়, একশ’টি পরিবার অবস্থান করছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

লাকসাম পৌরসভা জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারী জানান, লাকসাম পৌরসভা ও উপজেলার বেশ কয়েকটি আশ্রয় শিবিরে অবস্থান নেয়া বন্যার্তদের মাঝে জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রতিদিন সাড়ে চার হাজার রান্না করা খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হচ্ছে। এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, বন্যার্তদের সহযোগিতায় আমাদের নেতা-কর্মীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। একমাত্র মহান আল্লাহ্‌কে খুশি করার জন্য আমরা এ কাজ করছি। অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়।

মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক সরওয়ার জাহান ভূঁইয়া দোলন বলেন, লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিএনপি’র অভিভাবক ও কেন্দ্রীয় বিএনপি’র শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম নিয়মিত খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। বন্যায় বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে আমরা বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা পৌঁছে দিচ্ছি।

এদিকে বিভিন্ন স্থানে ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে মনোহরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমীর হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ নুরুন্নবী বলেন, আমরা হাতে হাত রেখে জাতি ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে একটি সুন্দর সমপ্রীতির বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমরা বন্যার্তদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছি। এ সময় তিনি, নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রেখে বন্যাদুর্গতদের পাশে থাকার আহ্বান জানান।

জনপ্রিয়

আরাফা: তাওবা ও রহমতের মহান দিন

লাকসাম-মনোহরগঞ্জে পানিবন্দি ৪ লাখ মানুষ, ত্রাণের জন্য হাহাকার

প্রকাশিত: ০৪:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজানে ভারত থেকে আসা ঢলে কুমিল্লার লাকসাম-মনোহরগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণের অভাব মনোহরগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বানভাসী মানুষের মাঝে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। ডাকাতিয়া নদীর পানি বৃদ্ধিতে নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষ করে লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীর পানি উপচে ও বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে দুই উপজেলার ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ১৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ইতিমধ্যে প্রায় ২৯ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে পানিবন্দি মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা অফিসের তথ্যমতে, সোমবার (২৬শে আগস্ট) দুপুর ২টা পর্যন্ত ডাকাতিয়া নদীর পানি সব পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে আগের তুলনায় বেড়েছে। লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদীর কয়েকটি স্থানে পাড় ভেঙে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে লাকসাম পৌরসভা, লাকসাম উপজেলা ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

 

এতে ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। লাকসাম উপজেলার ৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলার ১০৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১২ হাজারের অধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তবে কিছু আশ্রয়কেন্দ্রের নিচতলা ডুবে যাওয়ায় আশ্রয় গ্রহণকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে, উপজেলা দু’টির পানিবন্দি ও আশ্রয় শিবিরে অবস্থান নেয়া লোকদেরকে উপজেলা প্রশাসন, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বিএনপি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে।

লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসায় ৮৩টি আশ্রয় শিবিরে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ অবস্থান নিয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। এ পর্যন্ত আমরা মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় ৪৫ টন চাল পেয়েছি। চাল-ডাল, চিঁড়া-মুড়ি, গুড়, চানাচুর-বিস্কুটসহ নানা খাদ্যসামগ্রী বন্যার্তদের মাঝে পৌঁছাচ্ছি।

এ বিষয়ে মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজালা রানী চাকমা বলেন, আমার মনোহরগঞ্জ উপজেলাবাসী ভালো নেই। তারপরও আমরা সকলকে নিয়ে আমাদের সর্বোচ্চ সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করে আসছি এবং এটা চলমান থাকবে। তিনি জানান, ইতিপূর্বে উপজেলাটির ১০৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১২ হাজারের অধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। উপজেলার সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

দেখা যাচ্ছে, আমরা একটি গ্রামে ৩০টি পরিবারের জন্য খাবার নিয়ে গেছি। কিন্তু ওখানে গিয়ে দেখা যায়, একশ’টি পরিবার অবস্থান করছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

লাকসাম পৌরসভা জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারী জানান, লাকসাম পৌরসভা ও উপজেলার বেশ কয়েকটি আশ্রয় শিবিরে অবস্থান নেয়া বন্যার্তদের মাঝে জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রতিদিন সাড়ে চার হাজার রান্না করা খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হচ্ছে। এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, বন্যার্তদের সহযোগিতায় আমাদের নেতা-কর্মীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। একমাত্র মহান আল্লাহ্‌কে খুশি করার জন্য আমরা এ কাজ করছি। অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়।

মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক সরওয়ার জাহান ভূঁইয়া দোলন বলেন, লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিএনপি’র অভিভাবক ও কেন্দ্রীয় বিএনপি’র শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম নিয়মিত খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। বন্যায় বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে আমরা বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা পৌঁছে দিচ্ছি।

এদিকে বিভিন্ন স্থানে ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে মনোহরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমীর হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ নুরুন্নবী বলেন, আমরা হাতে হাত রেখে জাতি ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে একটি সুন্দর সমপ্রীতির বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমরা বন্যার্তদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছি। এ সময় তিনি, নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রেখে বন্যাদুর্গতদের পাশে থাকার আহ্বান জানান।