ঢাকা , সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
গ্রাম আদালত বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন বাংলাদেশে কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতন হয় না: ধর্ম উপদেষ্টা মার্কিন ভ্রমণ সতর্কতা নিয়ে ভারতীয় কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বিভ্রান্তিকর: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির রায় স্থগিত করলেন চেম্বার আদালত দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬.৭০ বিলিয়ন ডলার: বাংলাদেশ ব্যাংক ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা নিয়ে পিএসসির নতুন বিজ্ঞপ্তি চবির সমাবর্তনের ১৮ হাজার সনদে নিজ হাতে স্বাক্ষর করছেন উপাচার্য উখিয়ায় চাকমা তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে রোহিঙ্গা যুবক আটক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন প্লাটফর্মের বিলুপ্তি চান সাধারণ শিক্ষার্থীরা টঙ্গীতে চায়ের দোকান থেকে ডেকে নিয়ে যুবককে কুপিয়ে হত্যা

দক্ষিণ এশিয়ায় সংস্কারের চাপ ভেতরের চেয়ে বাইরের বেশি: সানেম সম্মেলন

দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করতে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সানেমের অষ্টম বার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা দক্ষিণ এশিয়ায় সংস্কারের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল “দক্ষিণ এশিয়ায় ভূ-অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার প্রভাব”।

মূল আলোচনা:
বক্তারা উল্লেখ করেন যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্য, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক পর্যায়ে সংস্কারের প্রয়োজন থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীগুলোর কারণে সংস্কার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সংস্কারের চাপ বাইরে থেকে বেশি আসলেও অভ্যন্তরীণ চাহিদা কম। এছাড়া, দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতাকাঠামো মধ্যবাম ঘরানার হওয়ায় বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সংস্কার করা সম্ভব হয় না।

বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদের পরামর্শ:
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ ফান্সিসকো ডি ওহনসোর্জ দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য উদারীকরণ ও বাজার উন্মুক্ত করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ভূরাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমছে। যদিও এই অঞ্চলের দেশগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ পাচ্ছে এবং বাণিজ্য করছে, তবে এর পরিমাণ পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা থেকে সুবিধা নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত নয়। ফান্সিসকোর মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উচিত যত বেশি সম্ভব বাজার উন্মুক্ত করা।

সিপিডি ফেলোর বক্তব্য:
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও এটি বহুপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে করা উচিত। উন্নয়নশীল দেশগুলো যথাযথ অর্থায়ন পাচ্ছে কি না এবং তাদের অভিযোগ-আপত্তি আমলে নেওয়া হচ্ছে কি না, তা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও যোগ করেন যে সহযোগিতা শুধু বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নয়, সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজন। উদীয়মান দেশগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা জরুরি।

পূর্ব এশিয়ার সাথে তুলনা:
আইসিআরআইইআরের পরিচালক দীপক মিশ্র পূর্ব এশিয়ার সাথে দক্ষিণ এশিয়ার তুলনা করেন। তিনি বলেন, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো রাজনীতিকে অর্থনীতি থেকে আলাদা করতে পেরেছে, যেমন চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে বাণিজ্য অবাধ রয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনীতি মুখ্য হয়ে উঠেছে, যা অর্থনৈতিক সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করছে। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার নীতিপ্রণেতাদের আরও নমনীয় ও গতিশীল হওয়ার পরামর্শ দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপকের মন্তব্য:
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সান্তাইয়ানান দেবরাজন বলেন, চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ থাকলেও তাদের মধ্যে বাণিজ্য অবাধ রয়েছে। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য অর্থনীতিকে রাজনীতি থেকে আলাদা করার পরামর্শ দেন।

সম্মেলনের সময়সূচি:
তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলন ২৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হচ্ছে।

জনপ্রিয়

গ্রাম আদালত বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন

দক্ষিণ এশিয়ায় সংস্কারের চাপ ভেতরের চেয়ে বাইরের বেশি: সানেম সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৩:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করতে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সানেমের অষ্টম বার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা দক্ষিণ এশিয়ায় সংস্কারের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল “দক্ষিণ এশিয়ায় ভূ-অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার প্রভাব”।

মূল আলোচনা:
বক্তারা উল্লেখ করেন যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্য, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক পর্যায়ে সংস্কারের প্রয়োজন থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীগুলোর কারণে সংস্কার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সংস্কারের চাপ বাইরে থেকে বেশি আসলেও অভ্যন্তরীণ চাহিদা কম। এছাড়া, দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতাকাঠামো মধ্যবাম ঘরানার হওয়ায় বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সংস্কার করা সম্ভব হয় না।

বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদের পরামর্শ:
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ ফান্সিসকো ডি ওহনসোর্জ দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য উদারীকরণ ও বাজার উন্মুক্ত করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ভূরাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমছে। যদিও এই অঞ্চলের দেশগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ পাচ্ছে এবং বাণিজ্য করছে, তবে এর পরিমাণ পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা থেকে সুবিধা নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত নয়। ফান্সিসকোর মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উচিত যত বেশি সম্ভব বাজার উন্মুক্ত করা।

সিপিডি ফেলোর বক্তব্য:
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও এটি বহুপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে করা উচিত। উন্নয়নশীল দেশগুলো যথাযথ অর্থায়ন পাচ্ছে কি না এবং তাদের অভিযোগ-আপত্তি আমলে নেওয়া হচ্ছে কি না, তা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও যোগ করেন যে সহযোগিতা শুধু বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নয়, সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজন। উদীয়মান দেশগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা জরুরি।

পূর্ব এশিয়ার সাথে তুলনা:
আইসিআরআইইআরের পরিচালক দীপক মিশ্র পূর্ব এশিয়ার সাথে দক্ষিণ এশিয়ার তুলনা করেন। তিনি বলেন, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো রাজনীতিকে অর্থনীতি থেকে আলাদা করতে পেরেছে, যেমন চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে বাণিজ্য অবাধ রয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনীতি মুখ্য হয়ে উঠেছে, যা অর্থনৈতিক সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করছে। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার নীতিপ্রণেতাদের আরও নমনীয় ও গতিশীল হওয়ার পরামর্শ দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপকের মন্তব্য:
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সান্তাইয়ানান দেবরাজন বলেন, চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ থাকলেও তাদের মধ্যে বাণিজ্য অবাধ রয়েছে। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য অর্থনীতিকে রাজনীতি থেকে আলাদা করার পরামর্শ দেন।

সম্মেলনের সময়সূচি:
তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলন ২৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হচ্ছে।