ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
লস অ্যাঞ্জেলেস ‘মুক্ত’ করার ঘোষণা ট্রাম্পের, কারফিউ, বিক্ষোভ অনেক রাজ্যে চামড়ার ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ সাধারণ মানুষ: মাওলানা রাব্বানী জুলাইয়ের প্রথমার্ধেই এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের সম্ভাবনা নির্বাচিত সরকারের অংশ হতে চান না: প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস জাতির নিরাপত্তায় আপাতত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত: প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক চট্টগ্রামে করোনার নতুন ধরনে আক্রান্ত আরও এক যুবক, বাড়ছে উদ্বেগ মিয়ানমারে অপহৃত দুলালকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনল বিজিবি নরসিংদীর রায়পুরায় খাদ্যবান্ধব ডিলার নিয়োগ স্থগিত সারা দেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ১,১৮০ জন

তিমির পেট থেকে বেঁচে ফিরলেন যুবক

ভেনেজুয়েলার তরুণ কায়াকার আদ্রিয়ান সিমানকাসের জীবনে ঘটে গেল এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। সমুদ্রে কায়াকিং করার সময় একটি হাম্পব্যাক তিমির মুখে ঢুকে গিয়েছিলেন তিনি। তবে সৌভাগ্যক্রমে তিমিটি তাঁকে গিলে ফেলেনি, মুখ থেকে বের করে দিয়েছে। এই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আদ্রিয়ান বলেন, “আমি এক সেকেন্ডের জন্য বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি কোনো প্রাণীর মুখের ভেতরে আছি। মনে হচ্ছিল এটি একটি অর্কা (ঘাতক তিমি) বা সামুদ্রিক দানব হতে পারে!”

 

২৩ বছর বয়সী আদ্রিয়ান সিমানকাস চিলির পাতাগোনিয়া উপকূলের ম্যাগেলান প্রণালিতে বাবার সঙ্গে কায়াকিং করছিলেন। হঠাৎ পেছন থেকে কিছু একটা তাঁকে আঘাত করে এবং তাঁকে পানির নিচে টেনে নেয়। তাঁর বাবা দাল সিমানকাস এই ঘটনাটি ভিডিওতে ধারণ করেছেন। তাঁর চোখের সামনে মাত্র কয়েক মিটার দূরে ঘটনাটি ঘটছিল।

বিবিসিকে আদ্রিয়ান বলেন, “আমি চোখ বন্ধ করেছিলাম। যখন আবার চোখ খুললাম, তখন বুঝতে পারলাম যে আমি তিমির মুখের ভেতরে আছি। আমি আমার মুখে একটি পিচ্ছিল কিছু অনুভব করলাম। চারপাশে শুধু গাঢ় নীল এবং সাদা রং দেখতে পাচ্ছিলাম।” আদ্রিয়ান আরও বলেন, “আমি ভাবছিলাম যদি এটি আমাকে গিলে ফেলে, তাহলে কী করতে পারি? কারণ আমি এখানে থেকে আর লড়াই করতে পারব না।”

কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আদ্রিয়ান অনুভব করলেন যে তিনি পানির ওপরে উঠে আসছেন। তিনি বলেন, “আমি একটু ভয় পেয়েছিলাম যে, শ্বাস ধরে রাখতে পারব কিনা। কারণ আমি জানতাম না কত গভীরে আছি। মনে হচ্ছিল অনেক সময় লাগছে ওপরে উঠতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি ওপরে উঠে আসলাম এবং বুঝতে পারলাম যে তিমিটি আমাকে গিলে ফেলেনি।”

আদ্রিয়ানের বাবা দাল সিমানকাস এই ঘটনা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমি পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান নেই। এক সেকেন্ডের জন্য চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু এরপর তাকে সমুদ্রের জলে ভেসে উঠতে দেখলাম। তারপর আমি একটি বিশাল শরীর দেখতে পাই, যা দেখে আমি বুঝতে পারি এটি একটি তিমি।”

দাল তাঁর কায়াকের পেছনে একটি ক্যামেরা লাগিয়েছিলেন। ওই ক্যামেরায় এই অবিশ্বাস্য ঘটনাটি ধারণ করা হয়েছে। ভিডিওটি দেখে আদ্রিয়ান নিজেও তিমিটির বিশাল আকার দেখে অবাক হয়ে যান। তিনি বলেন, “আমি তিমিটির পিঠ এবং পাখনা দেখতে পাইনি, শুধু শব্দ শুনেছিলাম। কিন্তু ভিডিও দেখে বুঝতে পারলাম, এটি কত বড় ছিল! যদি আমি আগেই দেখতাম, তাহলে আরও ভয় পেতাম।”

বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, হাম্পব্যাক তিমির খাদ্যনালী খুবই সরু, যা সাধারণত ছোট মাছ এবং চিংড়ি গিলতে পারার উপযুক্ত। ব্রাজিলের সংরক্ষণবাদী রোচেড জ্যাকবসন সেবা বলেন, “হাম্পব্যাক তিমি শারীরিকভাবে কায়াক, টায়ার বা টুনার মতো বড় জিনিস গিলতে পারে না। তাই তিমিটি আদ্রিয়ানকে মুখ থেকে বের করে দিয়েছে।”

সেবা আরও বলেন, “তিমিটি সম্ভবত একদল মাছ শিকার করার সময় অজান্তেই কায়াকটিকে মুখে নিয়ে ফেলেছিল। তিমিরা যখন দ্রুত পানির ওপরে উঠে আসে, তখন তারা তাদের পথে থাকা জিনিসগুলোকে অজান্তে আঘাত করে বা মুখে নিয়ে ফেলে।”

এই ঘটনাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব এলাকায় তিমি সাঁতার কাটে, সেখানে প্যাডেল বোর্ড, সার্ফবোর্ড বা অন্যান্য নিঃশব্দ জলযান ব্যবহার করা উচিত নয়। তিমি দেখার জন্য বা গবেষণার জন্য ব্যবহৃত নৌকাগুলোতে সব সময় ইঞ্জিন চালু রাখতে হবে, কারণ শব্দ হলে তিমিরা এগুলোর উপস্থিতি বুঝতে পারে।

আদ্রিয়ান এই অভিজ্ঞতাকে তাঁর জীবনের একটি ‘দ্বিতীয় সুযোগ’ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “এই অভিজ্ঞতা আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে যে, আমি এর আগে কী কী ভালো কাজ করতে পারতাম, কীভাবে আমি এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারি এবং এর মূল্য দিতে পারি।”

জনপ্রিয়

লস অ্যাঞ্জেলেস ‘মুক্ত’ করার ঘোষণা ট্রাম্পের, কারফিউ, বিক্ষোভ অনেক রাজ্যে

তিমির পেট থেকে বেঁচে ফিরলেন যুবক

প্রকাশিত: ০৩:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ভেনেজুয়েলার তরুণ কায়াকার আদ্রিয়ান সিমানকাসের জীবনে ঘটে গেল এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। সমুদ্রে কায়াকিং করার সময় একটি হাম্পব্যাক তিমির মুখে ঢুকে গিয়েছিলেন তিনি। তবে সৌভাগ্যক্রমে তিমিটি তাঁকে গিলে ফেলেনি, মুখ থেকে বের করে দিয়েছে। এই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আদ্রিয়ান বলেন, “আমি এক সেকেন্ডের জন্য বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি কোনো প্রাণীর মুখের ভেতরে আছি। মনে হচ্ছিল এটি একটি অর্কা (ঘাতক তিমি) বা সামুদ্রিক দানব হতে পারে!”

 

২৩ বছর বয়সী আদ্রিয়ান সিমানকাস চিলির পাতাগোনিয়া উপকূলের ম্যাগেলান প্রণালিতে বাবার সঙ্গে কায়াকিং করছিলেন। হঠাৎ পেছন থেকে কিছু একটা তাঁকে আঘাত করে এবং তাঁকে পানির নিচে টেনে নেয়। তাঁর বাবা দাল সিমানকাস এই ঘটনাটি ভিডিওতে ধারণ করেছেন। তাঁর চোখের সামনে মাত্র কয়েক মিটার দূরে ঘটনাটি ঘটছিল।

বিবিসিকে আদ্রিয়ান বলেন, “আমি চোখ বন্ধ করেছিলাম। যখন আবার চোখ খুললাম, তখন বুঝতে পারলাম যে আমি তিমির মুখের ভেতরে আছি। আমি আমার মুখে একটি পিচ্ছিল কিছু অনুভব করলাম। চারপাশে শুধু গাঢ় নীল এবং সাদা রং দেখতে পাচ্ছিলাম।” আদ্রিয়ান আরও বলেন, “আমি ভাবছিলাম যদি এটি আমাকে গিলে ফেলে, তাহলে কী করতে পারি? কারণ আমি এখানে থেকে আর লড়াই করতে পারব না।”

কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আদ্রিয়ান অনুভব করলেন যে তিনি পানির ওপরে উঠে আসছেন। তিনি বলেন, “আমি একটু ভয় পেয়েছিলাম যে, শ্বাস ধরে রাখতে পারব কিনা। কারণ আমি জানতাম না কত গভীরে আছি। মনে হচ্ছিল অনেক সময় লাগছে ওপরে উঠতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি ওপরে উঠে আসলাম এবং বুঝতে পারলাম যে তিমিটি আমাকে গিলে ফেলেনি।”

আদ্রিয়ানের বাবা দাল সিমানকাস এই ঘটনা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমি পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান নেই। এক সেকেন্ডের জন্য চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু এরপর তাকে সমুদ্রের জলে ভেসে উঠতে দেখলাম। তারপর আমি একটি বিশাল শরীর দেখতে পাই, যা দেখে আমি বুঝতে পারি এটি একটি তিমি।”

দাল তাঁর কায়াকের পেছনে একটি ক্যামেরা লাগিয়েছিলেন। ওই ক্যামেরায় এই অবিশ্বাস্য ঘটনাটি ধারণ করা হয়েছে। ভিডিওটি দেখে আদ্রিয়ান নিজেও তিমিটির বিশাল আকার দেখে অবাক হয়ে যান। তিনি বলেন, “আমি তিমিটির পিঠ এবং পাখনা দেখতে পাইনি, শুধু শব্দ শুনেছিলাম। কিন্তু ভিডিও দেখে বুঝতে পারলাম, এটি কত বড় ছিল! যদি আমি আগেই দেখতাম, তাহলে আরও ভয় পেতাম।”

বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, হাম্পব্যাক তিমির খাদ্যনালী খুবই সরু, যা সাধারণত ছোট মাছ এবং চিংড়ি গিলতে পারার উপযুক্ত। ব্রাজিলের সংরক্ষণবাদী রোচেড জ্যাকবসন সেবা বলেন, “হাম্পব্যাক তিমি শারীরিকভাবে কায়াক, টায়ার বা টুনার মতো বড় জিনিস গিলতে পারে না। তাই তিমিটি আদ্রিয়ানকে মুখ থেকে বের করে দিয়েছে।”

সেবা আরও বলেন, “তিমিটি সম্ভবত একদল মাছ শিকার করার সময় অজান্তেই কায়াকটিকে মুখে নিয়ে ফেলেছিল। তিমিরা যখন দ্রুত পানির ওপরে উঠে আসে, তখন তারা তাদের পথে থাকা জিনিসগুলোকে অজান্তে আঘাত করে বা মুখে নিয়ে ফেলে।”

এই ঘটনাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব এলাকায় তিমি সাঁতার কাটে, সেখানে প্যাডেল বোর্ড, সার্ফবোর্ড বা অন্যান্য নিঃশব্দ জলযান ব্যবহার করা উচিত নয়। তিমি দেখার জন্য বা গবেষণার জন্য ব্যবহৃত নৌকাগুলোতে সব সময় ইঞ্জিন চালু রাখতে হবে, কারণ শব্দ হলে তিমিরা এগুলোর উপস্থিতি বুঝতে পারে।

আদ্রিয়ান এই অভিজ্ঞতাকে তাঁর জীবনের একটি ‘দ্বিতীয় সুযোগ’ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “এই অভিজ্ঞতা আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে যে, আমি এর আগে কী কী ভালো কাজ করতে পারতাম, কীভাবে আমি এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারি এবং এর মূল্য দিতে পারি।”