ঢাকা , শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
বিডিআর হত্যাকাণ্ড: সহায়ক তথ্য আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি মালয়েশিয়ায় ১৬৫ বাংলাদেশিসহ ৫০৬ জন অভিবাসী আটক ইভ্যালির অর্থ আত্মসাৎ: গ্রাহকদের মানববন্ধন ও রাসেলের গ্রেফতারের দাবি কক্সবাজার-মহেশখালী রুটে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলো সি-ট্রাক সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় শাহে আলম মুরাদ ও আনিসুর রহমান ৪ দিনের রিমান্ডে বিচারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির চট্টগ্রামের চকবাজারে নালায় পড়ে ৬ মাসের শিশু নিখোঁজ ১৮ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা: সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অফিস কুয়াকাটায় শুরু হয়েছে রাখাইনদের প্রাচীন ‘জলকেলি’ উৎসব: মিলন, আত্মশুদ্ধি আর মানবিকতার বার্তা জুলাই আন্দোলনে শহীদ ইমনের মরদেহ উত্তোলন: আদালতের নির্দেশে নতুন তদন্তের সূচনা

ইরানের হামলায় এ পর্যন্ত যা ঘটল

গতকাল ১লা অক্টোবর মঙ্গলবার ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী ইসরায়েলের উপর শত শত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে বড় এক হামলা চালিয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আঘাত হানে। হামলার ফলে ইসরায়েলি শহর, গ্রাম ও বসতিগুলোতে সাইরেন বেজে ওঠে এবং ইসরায়েলজুড়ে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

হামলার শুরু যেভাবে

জেরুজালেমের স্থানীয় সময় ৭টা ৩৪ মিনিটে ইরানের তেহরান থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের একটি জরুরি সংবাদ পাঠানো হয়। ঠিক এর সাত মিনিট পরেই জেরুজালেমের প্রতিবেদক জানান, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলে পৌঁছেছে বলে জানানো হয়। এবং তখন থেকেই  মুহূর্তের মধ্যেই ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে সাইরেন বেজে উঠতে শুরু করে।

হামলার স্থায়িত্ব

ইরানের এই পাল্টা আক্রমণ প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে। এই সময়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে।

ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা

ইসরায়েলি গণমাধ্যম প্রথমে ইরান থেকে প্রায় ৪০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার দাবী করে। পরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, ইরান থেকে প্রায় ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিল।

ক্ষেপণাস্ত্রের ধরন

ইসরায়েলের এক সামরিক সূত্রে জানা গেছে, ইরান থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যালিস্টিক ছিল। এছাড়া ইরান এই হামলায় প্রথমবারের মতো তাদের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ফাতাহ’ ব্যবহার করে ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘এরো-২’ এবং ‘এরো-৩’ ধ্বংস করেছে বলে জানিয়েছে।

ইসরায়েলের যে সকল স্থানে সাইরেন বেজে ওঠে

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর তথ্যমতে, ইরানের হামলা থেকে সতর্ক করতে ইসরায়েলের ১,৮৬৪টি স্থানে সাইরেন বাজানো হয়। এর মধ্যে ইসরায়েলের প্রধান শহর তেলআবিব, জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীরের বিভিন্ন বসতি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

হামলা সম্পর্কে ইরানের বিপ্লবী গার্ড যা বলেছে

ইরানের বিপ্লবী গার্ড এক বিবৃতিতে জানায়, ইসমাইল হানিয়া, হাসান নাসরুল্লাহ এবং কমান্ডার নিলফরুশানের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলের উপর এই হামলা চালানো হয়েছে। তারা ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, যদি ইসরায়েল এর কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়, তবে তারা আরও শক্তিশালী আক্রমণের সম্মুখীন হবে।

এরপর আরো এক বিবৃতিতে জানায়, ‘আল ওয়াদ আস সাদিক-২’ নামের এই হামলাটি ইরানের সামরিক নেতাদের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ছিল। এই হামলায় ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু রাডার ঘাঁটি, বিমান ঘাঁটি এবং কমান্ডিং অপারেশন সেন্টার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ইসরায়েল যা বলেছে

হামলা সম্পর্কে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, ইরানের বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করা হয়েছে। তবে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে আঘাত হেনেছে। হ্যাগারি আরও বলেন, ইসরায়েল প্রতিশোধমূলক আক্রমণের পরিকল্পনা করছে এবং এই আক্রমণের প্রতিক্রিয়ার জন্য ইসরায়েলকে বিশেষভাবে স্মরণ করা হবে।

যে সকল দেশের আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র দেখা গিয়েছে

ইরান থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো জর্ডান, সিরিয়া, ইরাক, লেবানন এবং মিশরের সিনাই অঞ্চলে দেখা গেছে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে উক্ত দেশগুলো আকাশে ক্ষেপণাস্ত্রের গতিবিধি লক্ষ্য করা গেছে বলে জানা যায়।

হামলার লক্ষ্যবস্তু

ইরানের বিপ্লবী গার্ড জানিয়েছে এই হামলা তেলআবিবের নিকটে তিনটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে চালনো হয়। এর পাশাপাশি ইরান থেকে নিক্ষিপ্ত কিছু ক্ষেপণাস্ত্র গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনাগুলোকেও আঘাত করে।

যেখানে ছিলেন ইসরায়েলের সরকারি কর্মকর্তারা

হামলার সময় ইসরায়েলের সরকারি কর্মকর্তারা জেরুজালেম পাহাড়ে অবস্থিত একটি ভূগর্ভস্থ নিরাপদ বাঙ্কারে ছিলেন।

ভৌগলিক দূরত্ব যখন ইরানের সুবিধা

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ১,৭২৪ থেকে ২,১৫০ কিলোমিটার। সামরিক বিবেচনায় এই দূরত্ব কম হওয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে আছড়ে পড়ে।

আকাশসীমা বন্ধ

হামলার পর ইরাক, জর্ডান এবং লেবানন তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। ইসরায়েলও তাদের বিমানবন্দরের সকল ফ্লাইট স্থগিত করে।

মোটকথা, ইরানের এই আক্রমণ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে। ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী সামরিক সংঘাতের শঙ্কা। হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক স্থিতি নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এবং ভবিষ্যতে এর প্রতিক্রিয়া ও পরিণতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বেড়েই চলছে।

জনপ্রিয়

বিডিআর হত্যাকাণ্ড: সহায়ক তথ্য আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি

ইরানের হামলায় এ পর্যন্ত যা ঘটল

প্রকাশিত: ০৫:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪
গতকাল ১লা অক্টোবর মঙ্গলবার ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী ইসরায়েলের উপর শত শত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে বড় এক হামলা চালিয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আঘাত হানে। হামলার ফলে ইসরায়েলি শহর, গ্রাম ও বসতিগুলোতে সাইরেন বেজে ওঠে এবং ইসরায়েলজুড়ে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

হামলার শুরু যেভাবে

জেরুজালেমের স্থানীয় সময় ৭টা ৩৪ মিনিটে ইরানের তেহরান থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের একটি জরুরি সংবাদ পাঠানো হয়। ঠিক এর সাত মিনিট পরেই জেরুজালেমের প্রতিবেদক জানান, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলে পৌঁছেছে বলে জানানো হয়। এবং তখন থেকেই  মুহূর্তের মধ্যেই ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে সাইরেন বেজে উঠতে শুরু করে।

হামলার স্থায়িত্ব

ইরানের এই পাল্টা আক্রমণ প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে। এই সময়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে।

ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা

ইসরায়েলি গণমাধ্যম প্রথমে ইরান থেকে প্রায় ৪০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার দাবী করে। পরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, ইরান থেকে প্রায় ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিল।

ক্ষেপণাস্ত্রের ধরন

ইসরায়েলের এক সামরিক সূত্রে জানা গেছে, ইরান থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যালিস্টিক ছিল। এছাড়া ইরান এই হামলায় প্রথমবারের মতো তাদের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ফাতাহ’ ব্যবহার করে ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘এরো-২’ এবং ‘এরো-৩’ ধ্বংস করেছে বলে জানিয়েছে।

ইসরায়েলের যে সকল স্থানে সাইরেন বেজে ওঠে

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর তথ্যমতে, ইরানের হামলা থেকে সতর্ক করতে ইসরায়েলের ১,৮৬৪টি স্থানে সাইরেন বাজানো হয়। এর মধ্যে ইসরায়েলের প্রধান শহর তেলআবিব, জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীরের বিভিন্ন বসতি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

হামলা সম্পর্কে ইরানের বিপ্লবী গার্ড যা বলেছে

ইরানের বিপ্লবী গার্ড এক বিবৃতিতে জানায়, ইসমাইল হানিয়া, হাসান নাসরুল্লাহ এবং কমান্ডার নিলফরুশানের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলের উপর এই হামলা চালানো হয়েছে। তারা ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, যদি ইসরায়েল এর কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়, তবে তারা আরও শক্তিশালী আক্রমণের সম্মুখীন হবে।

এরপর আরো এক বিবৃতিতে জানায়, ‘আল ওয়াদ আস সাদিক-২’ নামের এই হামলাটি ইরানের সামরিক নেতাদের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ছিল। এই হামলায় ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু রাডার ঘাঁটি, বিমান ঘাঁটি এবং কমান্ডিং অপারেশন সেন্টার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ইসরায়েল যা বলেছে

হামলা সম্পর্কে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, ইরানের বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করা হয়েছে। তবে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে আঘাত হেনেছে। হ্যাগারি আরও বলেন, ইসরায়েল প্রতিশোধমূলক আক্রমণের পরিকল্পনা করছে এবং এই আক্রমণের প্রতিক্রিয়ার জন্য ইসরায়েলকে বিশেষভাবে স্মরণ করা হবে।

যে সকল দেশের আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র দেখা গিয়েছে

ইরান থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো জর্ডান, সিরিয়া, ইরাক, লেবানন এবং মিশরের সিনাই অঞ্চলে দেখা গেছে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে উক্ত দেশগুলো আকাশে ক্ষেপণাস্ত্রের গতিবিধি লক্ষ্য করা গেছে বলে জানা যায়।

হামলার লক্ষ্যবস্তু

ইরানের বিপ্লবী গার্ড জানিয়েছে এই হামলা তেলআবিবের নিকটে তিনটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে চালনো হয়। এর পাশাপাশি ইরান থেকে নিক্ষিপ্ত কিছু ক্ষেপণাস্ত্র গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনাগুলোকেও আঘাত করে।

যেখানে ছিলেন ইসরায়েলের সরকারি কর্মকর্তারা

হামলার সময় ইসরায়েলের সরকারি কর্মকর্তারা জেরুজালেম পাহাড়ে অবস্থিত একটি ভূগর্ভস্থ নিরাপদ বাঙ্কারে ছিলেন।

ভৌগলিক দূরত্ব যখন ইরানের সুবিধা

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ১,৭২৪ থেকে ২,১৫০ কিলোমিটার। সামরিক বিবেচনায় এই দূরত্ব কম হওয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে আছড়ে পড়ে।

আকাশসীমা বন্ধ

হামলার পর ইরাক, জর্ডান এবং লেবানন তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। ইসরায়েলও তাদের বিমানবন্দরের সকল ফ্লাইট স্থগিত করে।

মোটকথা, ইরানের এই আক্রমণ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে। ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী সামরিক সংঘাতের শঙ্কা। হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক স্থিতি নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এবং ভবিষ্যতে এর প্রতিক্রিয়া ও পরিণতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বেড়েই চলছে।