ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
রবার্ট এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজার নথি প্রকাশ এপ্রিলের রাতের আকাশে দুর্লভ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক চমক কিশোরগঞ্জে ভেজাল খাদ্য তৈরির দায়ে ৪ প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা মুন্সীগঞ্জে পুকুর থেকে ৩২৬ রাউন্ড চায়না রাইফেলের গুলি উদ্ধার গণ-অভ্যুত্থানের পর সমঝোতার সংস্কার দরকার: এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ভিসির প্রতীকী চেয়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ কুয়েট শিক্ষার্থীদের আবাসিকে গ্যাস সংযোগ নিয়ে প্রতারণা: সতর্ক করলো তিতাস গ্যাস ঘুষ ও হয়রানির অভিযোগে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি স্ট্যান্ড রিলিজ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ‘শহীদ তুরাব স্ট্যান্ড’ নামকরণ চার বছরে এসএসসি পরীক্ষার্থী কমেছে তিন লাখের বেশি

গুমচেষ্টার শিকার “চিরায়ত” ম্যাগাজিনের লেখক

২০১৩ সালের শাপলা চত্বর গণহত্যা নিয়ে রচিত সর্ববৃহৎ ডকুমেন্টেশন ‘শাপলানামা’র সম্পাদক খুবাইব মাহমুদকে সাদা পোশাকে অহেতুক তুলে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানি করায় প্রতিবাদ করেছেন লেখক ও আলেম সমাজ।

 

বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে বাইতুল মোকাররমের পূর্ব গেইটে সংবাদ সম্মেলন করে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।

 

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে “চিরায়ত” ম্যাগাজিনের লেখক এবং সম্পাদক খুবাইব মাহমুদ বলেন, “নিজের ব্যক্তিগত কাজ শেষ করে আমি এই ইসলামিক বইমেলাতে আসি। এবং এখানে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটাই। এরপর ইসলামিক বইমেলা থেকে রাত সোয়া আটটার দিকে নিজ ঠিকানা চাষাড়া নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার জন্য মেয়র মোহাম্মাদ হানিফ ফ্লাইওভারের কাছে আমি বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

 

আর ঠিক সেই সময়ে সাদা পোশাকে অজ্ঞাত কিছু ব্যক্তি রাস্তার মধ্যেই বেশ খানিকটা সময় আমার সাথে রহস্যপূর্ণ আচরণ করার পর কোনো পূর্ব অভিযোগ ছাড়াই ‘জানালায় কালো গ্লাস লাগানো এমন গাড়িতে’ করে আমাকে পল্টন থানায় তুলে নিয়ে যায়।

 

 

এরপর ঘণ্টাব্যাপী সেখানে অপরিচিত অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞসাবাদে তারা আমার বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততাসহ বিতর্কিত সংগঠন হিযবুত তাহরিরের সাথে আমার যোগসূত্র প্রমাণে আপ্রাণ অপচেষ্টা চালাতে থাকে। কিন্তু শত চেষ্টা করার পরও তারা ব্যর্থ হয় এবং রাত সাড়ে ১২টার পর আমাকে মুচলেকা দিতে বাধ্য করে পল্টন থানা থেকে ছেড়ে দেয়।”

 

 

তিনি আরো বলেন, ” কারা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তা জানতে চাইলে পল্টন থানা পুলিশ আমাকে কোনো রকম সাহায্য করেনি। বরং তারা ওইসব ব্যক্তিদের পরিচয় লুকাতে চাচ্ছে। এবং বিভিন্ন সংস্থার কথা বলে নিজেদের দায় এড়াতে চেয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আমি তাদের কোনো পরিচয় জানতে পারিনি।”

 

 

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এরপর বুধবার (৩০ অক্টোবর) সকালে আমি বইমেলা প্রাঙ্গনে সাংবাদিক সম্মেলন আহ্বান করলে আমাকে সংবাদ সম্মেলন না করার জন্য হুমকি দেওয়া হয়। যা পরিষ্কারভাবে পতিত স্বৈরতন্ত্রের কর্মকাণ্ডের সাথে মিলে যায়। আবু সাইদ, মুগ্ধসহ হাজার শহীদদের আত্মত্যাগে অর্জিত নতুন স্বাধীনতায়, নতুন বাংলাদেশে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”

 

এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “আমি মনে করি পরিবর্তিত বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনী স্বৈরাচার পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে নিজেদের বের করে আনবে। আমি পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, যারা আমাকে ফ্যাসিবাদী কায়দায় তুলে নিয়ে গেছে। তাদের প্রত্যেকের পরিচয় জনসাধারণের সামনে প্রকাশ করে অতিসত্বর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

সেইসাথে নতুন বাংলাদেশ মত প্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এবং আগামীর নির্বাচিত সরকারকেও ভবিষ্যতে নিজস্ব স্বাধীন মত প্রকাশের কারণে কোন লেখক, প্রকাশক, এ্যাক্টিভিস্টকে যেন এই স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো প্রশাসনিক হয়রানির শিকার না হতে হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের এই দাবি সরকারকে মানতেই হবে। যদি না মানা হয়, তাহলে আমরা সামনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হব।”

 

 

সম্পাদক খুবাইব মাহমুদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য প্রদান করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়, “গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টায় সময় গুলিস্তান এলাকা হতে খুবাইব মাহমুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিটিটিসির একটি দল রাজধানীর পল্টন থানায় নিয়ে আসে।

 

তার বিস্তারিত পরিচয় এবং গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে তার পরিবারে সংবাদ জানানো হলে রাত আনুমানিক ১২টায় সময় তার মামা মারগুবুসসুন্নাহ ও তার শিক্ষক মো. ইমদাদ হোসেন থানায় আসেন। পরে মুচলেকা গ্রহণপূর্বক খুবাইব মাহমুদকে তাদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।”

 

সকল প্রকার গুম বা হয়রানির অভিযোগকে তারা ভিত্তিহীন এবং অমূলক বলে দাবি করেন। পাশাপাশি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরণের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো অথবা অপপ্রচার চালিয়ে জনমনে অহেতুক বিভ্রান্তি তৈরি না করতে অনুরোধ করেন।

 

উল্লেখ্য, ‘শাপলানামা’ বইটি ২০১৩ সালের ৫ই মে শাপলা চত্বর গণহত্যা নিয়ে সর্ববৃহৎ তথ্যের উৎস হিসেবে পরিচিত। এই বই প্রকাশ করার ব্যাপারেও বিভিন্ন মহল থেকে গুম/ খুনের হুমকি পেয়ে আসছিলেন বলেও জানান বইটির সম্পাদক এবং সংকলক খুবাইব মাহমুদ।

জনপ্রিয়

রবার্ট এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজার নথি প্রকাশ

গুমচেষ্টার শিকার “চিরায়ত” ম্যাগাজিনের লেখক

প্রকাশিত: ০৩:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

২০১৩ সালের শাপলা চত্বর গণহত্যা নিয়ে রচিত সর্ববৃহৎ ডকুমেন্টেশন ‘শাপলানামা’র সম্পাদক খুবাইব মাহমুদকে সাদা পোশাকে অহেতুক তুলে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানি করায় প্রতিবাদ করেছেন লেখক ও আলেম সমাজ।

 

বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে বাইতুল মোকাররমের পূর্ব গেইটে সংবাদ সম্মেলন করে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।

 

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে “চিরায়ত” ম্যাগাজিনের লেখক এবং সম্পাদক খুবাইব মাহমুদ বলেন, “নিজের ব্যক্তিগত কাজ শেষ করে আমি এই ইসলামিক বইমেলাতে আসি। এবং এখানে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটাই। এরপর ইসলামিক বইমেলা থেকে রাত সোয়া আটটার দিকে নিজ ঠিকানা চাষাড়া নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার জন্য মেয়র মোহাম্মাদ হানিফ ফ্লাইওভারের কাছে আমি বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

 

আর ঠিক সেই সময়ে সাদা পোশাকে অজ্ঞাত কিছু ব্যক্তি রাস্তার মধ্যেই বেশ খানিকটা সময় আমার সাথে রহস্যপূর্ণ আচরণ করার পর কোনো পূর্ব অভিযোগ ছাড়াই ‘জানালায় কালো গ্লাস লাগানো এমন গাড়িতে’ করে আমাকে পল্টন থানায় তুলে নিয়ে যায়।

 

 

এরপর ঘণ্টাব্যাপী সেখানে অপরিচিত অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞসাবাদে তারা আমার বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততাসহ বিতর্কিত সংগঠন হিযবুত তাহরিরের সাথে আমার যোগসূত্র প্রমাণে আপ্রাণ অপচেষ্টা চালাতে থাকে। কিন্তু শত চেষ্টা করার পরও তারা ব্যর্থ হয় এবং রাত সাড়ে ১২টার পর আমাকে মুচলেকা দিতে বাধ্য করে পল্টন থানা থেকে ছেড়ে দেয়।”

 

 

তিনি আরো বলেন, ” কারা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তা জানতে চাইলে পল্টন থানা পুলিশ আমাকে কোনো রকম সাহায্য করেনি। বরং তারা ওইসব ব্যক্তিদের পরিচয় লুকাতে চাচ্ছে। এবং বিভিন্ন সংস্থার কথা বলে নিজেদের দায় এড়াতে চেয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আমি তাদের কোনো পরিচয় জানতে পারিনি।”

 

 

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এরপর বুধবার (৩০ অক্টোবর) সকালে আমি বইমেলা প্রাঙ্গনে সাংবাদিক সম্মেলন আহ্বান করলে আমাকে সংবাদ সম্মেলন না করার জন্য হুমকি দেওয়া হয়। যা পরিষ্কারভাবে পতিত স্বৈরতন্ত্রের কর্মকাণ্ডের সাথে মিলে যায়। আবু সাইদ, মুগ্ধসহ হাজার শহীদদের আত্মত্যাগে অর্জিত নতুন স্বাধীনতায়, নতুন বাংলাদেশে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”

 

এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “আমি মনে করি পরিবর্তিত বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনী স্বৈরাচার পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে নিজেদের বের করে আনবে। আমি পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, যারা আমাকে ফ্যাসিবাদী কায়দায় তুলে নিয়ে গেছে। তাদের প্রত্যেকের পরিচয় জনসাধারণের সামনে প্রকাশ করে অতিসত্বর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

সেইসাথে নতুন বাংলাদেশ মত প্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এবং আগামীর নির্বাচিত সরকারকেও ভবিষ্যতে নিজস্ব স্বাধীন মত প্রকাশের কারণে কোন লেখক, প্রকাশক, এ্যাক্টিভিস্টকে যেন এই স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো প্রশাসনিক হয়রানির শিকার না হতে হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের এই দাবি সরকারকে মানতেই হবে। যদি না মানা হয়, তাহলে আমরা সামনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হব।”

 

 

সম্পাদক খুবাইব মাহমুদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য প্রদান করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়, “গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টায় সময় গুলিস্তান এলাকা হতে খুবাইব মাহমুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিটিটিসির একটি দল রাজধানীর পল্টন থানায় নিয়ে আসে।

 

তার বিস্তারিত পরিচয় এবং গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে তার পরিবারে সংবাদ জানানো হলে রাত আনুমানিক ১২টায় সময় তার মামা মারগুবুসসুন্নাহ ও তার শিক্ষক মো. ইমদাদ হোসেন থানায় আসেন। পরে মুচলেকা গ্রহণপূর্বক খুবাইব মাহমুদকে তাদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।”

 

সকল প্রকার গুম বা হয়রানির অভিযোগকে তারা ভিত্তিহীন এবং অমূলক বলে দাবি করেন। পাশাপাশি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরণের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো অথবা অপপ্রচার চালিয়ে জনমনে অহেতুক বিভ্রান্তি তৈরি না করতে অনুরোধ করেন।

 

উল্লেখ্য, ‘শাপলানামা’ বইটি ২০১৩ সালের ৫ই মে শাপলা চত্বর গণহত্যা নিয়ে সর্ববৃহৎ তথ্যের উৎস হিসেবে পরিচিত। এই বই প্রকাশ করার ব্যাপারেও বিভিন্ন মহল থেকে গুম/ খুনের হুমকি পেয়ে আসছিলেন বলেও জানান বইটির সম্পাদক এবং সংকলক খুবাইব মাহমুদ।