নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌর শহরে সড়কের একপাশে বিদ্যালয় আর অন্যপাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। স্থানীয় বাজার ও বাসাবাড়ির যত ময়লা-আবর্জনা প্রতিদিনই এখানে এনে ফেলা হচ্ছে। ফলে এ স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে এলাকাজুড়ে। এতে বিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ে ঢুকতে হচ্ছে নাক চেপে। তীব্র দুর্গন্ধের কারণে বিদ্যালয়ের ভেতরেও টিকতে পারছেন না তারা। তবুও দুর্গন্ধ সহ্য করেই বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম চলছে। শুধু তাই নয়, ময়লার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ সাধারণ পথচারীরাও।
এমন চিত্র নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌর শহরের সাবেরুন্নেছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এলাকার। নেত্রকোনা-কেন্দুয়া সড়কঘেঁষে এ বিদ্যালয়টি। এর অপর পাশেই ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়টি এবং ভাগাড়সংলগ্ন স্থানে কেন্দুয়া পৌরসভা কার্যালয়ও।
জনগুরুত্বপূর্ণ এই স্থানটিতে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় থাকায় বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব। দূষিত হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে ওই বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীসহ আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বরাতে জানা গেছে, কেন্দুয়া উপজেলার অন্যতম একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পৌর শহরে অবস্থিত সাবেরুন্নেছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। ১৯৮৩ সালে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীসংখ্যা রয়েছে ১ হাজার ৩৫০ জন এবং ২৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত ৭-৮ বছর ধরে বিদ্যালয়সংলগ্ন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়টিতে প্রতিদিনই স্থানীয় বাজারের নষ্ট হওয়া শাকসবজি, হোটেলের পচা-বাসি খাবার, মুরগির নাড়ি-ভুঁড়ি এবং বাসাবাড়ির ময়লাসহ সব ধরনের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এখানে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই এগুলো পচে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে এবং তা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় দিন যত যাচ্ছে, ময়লার ভাগাড়টিও তত বড় হচ্ছে।
শিক্ষার্থী রিমা আক্তার বলে, ’স্কুলে ক্লাস করাটা খুবই কষ্টকর। স্কুলের পুরো সময়টা দুর্গন্ধের মধ্যে কাটাতে হয়। এরকম অবস্থা অনেকদিন ধরেই চলে আসছে। আমরা এই দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি চাই।’
শিক্ষার্থী অভিভাবক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আবর্জনার ভাগাড়টির জন্য শিক্ষার্থীরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। তাই দ্রুত এখান থেকে ময়লা সরিয়ে নেওয়া জরুরি। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
সাবেরুন্নেছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুখলেছুর রহমান বাঙালি বলেন, ‘এ বিষয়ে পৌরসভায় বারবার অভিযোগ করার পরও এখান থেকে ময়লার ভাগাড় সরানো হয়নি। এ ছাড়া উপজেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও বিষয়টা নিয়ে কয়েকবার আলোচনা করেছি। কিন্তু কোনও সুরাহা হচ্ছে না। বিষয়টির দ্রুত সমাধান চাই। দুর্গন্ধের কারণে দরজা-জানালা বন্ধ করে ক্লাস নিতে হয়। তারপরও সম্ভব হয় না, এত দুর্গন্ধ। এভাবে চলতে থাকলে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যাবে।’
কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. অরূপ কুমার সরকার বলেন, ‘দুর্গন্ধের কারণে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক ঝুঁকি রয়েছে। ময়লাতে মশা-মাছিসহ নানা ধরনের পোকামাকড় থাকে। মাছির কারণে শিশুরা পেটের পীড়া ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ‘এ বিষয়ে অচিরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন ফেস্টুন, ব্যানার ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে সবাইকে সচেতন করতে হবে। স্কুল আঙিনার আশপাশে কেউ যেন কোনও ধরনের ময়লা-আবর্জনা না ফেলে।’