ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
ঘুষ ও হয়রানির অভিযোগে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি স্ট্যান্ড রিলিজ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ‘শহীদ তুরাব স্ট্যান্ড’ নামকরণ চার বছরে এসএসসি পরীক্ষার্থী কমেছে তিন লাখের বেশি চাঁদপুরে পুকুর খননের সময় মিলল পুরনো থ্রি নট থ্রি রাইফেল ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে আইন উপদেষ্টা পদে নিয়োগ প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছুরিকাঘাতে নিহত, অভিযুক্ত একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানে বাড়ছে বিদেশি পর্যটকদের ভিড় ক্রিমিয়া নিয়ে ছাড়? শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়াকে স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: ব্লুমবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইয়েমেনের রাস ঈসা বন্দরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮০, আহত ১৭১ দিলীপ ঘোষের বিয়ে ঘিরে প্রশ্ন: আরএসএস প্রচারকেরা কি বিয়ে করতে পারেন? সংগঠনটির প্রচারক ছিলেন মোদিও

প্রবাস থেকে ক্ষতবিক্ষত শরীর ও ভাঙা মন নিয়ে ফিরেছেন লোকমান, সহায়তা চায় পরিবার

ভাগ্য ফেরানোর আশায় পাড়ি জমিয়েছিলেন লিবিয়ায়। উদ্দেশ্য ছিল পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হওয়ার বদলে দুঃস্বপ্নে রূপ নেয়। অবশেষে শরীরে অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন ও আতঙ্কিত চোখে দেশে ফিরেছেন মঠবাড়িয়ার দিনমজুর লোকমান হোসেন।

 

২০২৩ সালের আগস্টে বরগুনার দুই দালাল শাহ আলম ও মান্নানের মাধ্যমে লিবিয়ায় যান লোকমান। প্রতিশ্রুতি ছিল একটি দোকানে কাজের। কিন্তু বাস্তবে তাঁকে অবৈধ পথে নেওয়া হয় এবং কাজ দেওয়া হয় রাস্তায় নির্মাণের, তাও ঠিকমতো মজুরি ছাড়াই। বেতন চাইলে চলত শারীরিক নির্যাতন।

 

লিবিয়ায় টিকতে না পেরে সিলেটের শিরু ইসলামের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার চুক্তি করেন লোকমান। এর জন্য স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার করে শিরুকে দেন ১০ লাখ টাকা। কিন্তু ইতালির বদলে তাঁকে বিক্রি করে দেওয়া হয় ত্রিপলীর একটি অপহরণকারী চক্রের হাতে। সেখানে শুরু হয় বর্বর নির্যাতন। পরিবারকে পাঠানো হয় নির্যাতনের ভিডিও এবং মুক্তিপণ চাওয়া হয় ১৫ লাখ টাকা।

 

অবশেষে আরেক বাংলাদেশি দাদন হাওলাদারের মাধ্যমে ১২ লাখ টাকায় মুক্তি পান লোকমান। কিন্তু দাদনের প্রতারণায় তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং আরও দুই মাস জেল খাটেন। পরে আইওএম ও বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ দেশে ফিরতে সক্ষম হন।

 

লোকমানের ফিরে আসা যেমন খুশির, তেমনি বেদনার। তার চিকিৎসা প্রয়োজন, শরীরজুড়ে রয়েছে নির্যাতনের ক্ষত। কিন্তু পরিবারের সব সহায়-সম্পদ বিক্রি হয়ে গেছে, এমনকি বসতভিটাও নেই। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন লোকমান, আর উপার্জনের কোনো উৎস না থাকায় পুরো পরিবার এখন পথে বসার আশঙ্কায়।

 

লোকমানের পরিবার সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য ও সরকারি সহায়তার আবেদন জানিয়েছে। একই সঙ্গে যারা এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন তাঁরা।

“আমরা সব হারিয়েছি। এখন কিছু না হলে পথে বসতে হবে। আমাদের পাশে সরকার ও সমাজ না দাঁড়ালে আমরা বাঁচব না,” – কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন লোকমানের মা।

জনপ্রিয়

ঘুষ ও হয়রানির অভিযোগে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি স্ট্যান্ড রিলিজ

প্রবাস থেকে ক্ষতবিক্ষত শরীর ও ভাঙা মন নিয়ে ফিরেছেন লোকমান, সহায়তা চায় পরিবার

প্রকাশিত: ০৩:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫

ভাগ্য ফেরানোর আশায় পাড়ি জমিয়েছিলেন লিবিয়ায়। উদ্দেশ্য ছিল পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হওয়ার বদলে দুঃস্বপ্নে রূপ নেয়। অবশেষে শরীরে অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন ও আতঙ্কিত চোখে দেশে ফিরেছেন মঠবাড়িয়ার দিনমজুর লোকমান হোসেন।

 

২০২৩ সালের আগস্টে বরগুনার দুই দালাল শাহ আলম ও মান্নানের মাধ্যমে লিবিয়ায় যান লোকমান। প্রতিশ্রুতি ছিল একটি দোকানে কাজের। কিন্তু বাস্তবে তাঁকে অবৈধ পথে নেওয়া হয় এবং কাজ দেওয়া হয় রাস্তায় নির্মাণের, তাও ঠিকমতো মজুরি ছাড়াই। বেতন চাইলে চলত শারীরিক নির্যাতন।

 

লিবিয়ায় টিকতে না পেরে সিলেটের শিরু ইসলামের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার চুক্তি করেন লোকমান। এর জন্য স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার করে শিরুকে দেন ১০ লাখ টাকা। কিন্তু ইতালির বদলে তাঁকে বিক্রি করে দেওয়া হয় ত্রিপলীর একটি অপহরণকারী চক্রের হাতে। সেখানে শুরু হয় বর্বর নির্যাতন। পরিবারকে পাঠানো হয় নির্যাতনের ভিডিও এবং মুক্তিপণ চাওয়া হয় ১৫ লাখ টাকা।

 

অবশেষে আরেক বাংলাদেশি দাদন হাওলাদারের মাধ্যমে ১২ লাখ টাকায় মুক্তি পান লোকমান। কিন্তু দাদনের প্রতারণায় তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং আরও দুই মাস জেল খাটেন। পরে আইওএম ও বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ দেশে ফিরতে সক্ষম হন।

 

লোকমানের ফিরে আসা যেমন খুশির, তেমনি বেদনার। তার চিকিৎসা প্রয়োজন, শরীরজুড়ে রয়েছে নির্যাতনের ক্ষত। কিন্তু পরিবারের সব সহায়-সম্পদ বিক্রি হয়ে গেছে, এমনকি বসতভিটাও নেই। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন লোকমান, আর উপার্জনের কোনো উৎস না থাকায় পুরো পরিবার এখন পথে বসার আশঙ্কায়।

 

লোকমানের পরিবার সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য ও সরকারি সহায়তার আবেদন জানিয়েছে। একই সঙ্গে যারা এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন তাঁরা।

“আমরা সব হারিয়েছি। এখন কিছু না হলে পথে বসতে হবে। আমাদের পাশে সরকার ও সমাজ না দাঁড়ালে আমরা বাঁচব না,” – কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন লোকমানের মা।