ভাগ্য ফেরানোর আশায় পাড়ি জমিয়েছিলেন লিবিয়ায়। উদ্দেশ্য ছিল পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হওয়ার বদলে দুঃস্বপ্নে রূপ নেয়। অবশেষে শরীরে অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন ও আতঙ্কিত চোখে দেশে ফিরেছেন মঠবাড়িয়ার দিনমজুর লোকমান হোসেন।
২০২৩ সালের আগস্টে বরগুনার দুই দালাল শাহ আলম ও মান্নানের মাধ্যমে লিবিয়ায় যান লোকমান। প্রতিশ্রুতি ছিল একটি দোকানে কাজের। কিন্তু বাস্তবে তাঁকে অবৈধ পথে নেওয়া হয় এবং কাজ দেওয়া হয় রাস্তায় নির্মাণের, তাও ঠিকমতো মজুরি ছাড়াই। বেতন চাইলে চলত শারীরিক নির্যাতন।
লিবিয়ায় টিকতে না পেরে সিলেটের শিরু ইসলামের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার চুক্তি করেন লোকমান। এর জন্য স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার করে শিরুকে দেন ১০ লাখ টাকা। কিন্তু ইতালির বদলে তাঁকে বিক্রি করে দেওয়া হয় ত্রিপলীর একটি অপহরণকারী চক্রের হাতে। সেখানে শুরু হয় বর্বর নির্যাতন। পরিবারকে পাঠানো হয় নির্যাতনের ভিডিও এবং মুক্তিপণ চাওয়া হয় ১৫ লাখ টাকা।
অবশেষে আরেক বাংলাদেশি দাদন হাওলাদারের মাধ্যমে ১২ লাখ টাকায় মুক্তি পান লোকমান। কিন্তু দাদনের প্রতারণায় তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং আরও দুই মাস জেল খাটেন। পরে আইওএম ও বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ দেশে ফিরতে সক্ষম হন।
লোকমানের ফিরে আসা যেমন খুশির, তেমনি বেদনার। তার চিকিৎসা প্রয়োজন, শরীরজুড়ে রয়েছে নির্যাতনের ক্ষত। কিন্তু পরিবারের সব সহায়-সম্পদ বিক্রি হয়ে গেছে, এমনকি বসতভিটাও নেই। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন লোকমান, আর উপার্জনের কোনো উৎস না থাকায় পুরো পরিবার এখন পথে বসার আশঙ্কায়।
লোকমানের পরিবার সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য ও সরকারি সহায়তার আবেদন জানিয়েছে। একই সঙ্গে যারা এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন তাঁরা।
“আমরা সব হারিয়েছি। এখন কিছু না হলে পথে বসতে হবে। আমাদের পাশে সরকার ও সমাজ না দাঁড়ালে আমরা বাঁচব না,” – কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন লোকমানের মা।