রাজনৈতিক অস্থিরতা: এরদোয়ানের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড়।
তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারাসহ দেশজুড়ে বিক্ষোভের অভিযোগে অন্তত ৩৪৩ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিক্ষোভ চলাকালীন এই গ্রেপ্তারকার্য পরিচালিত হয়। এ ঘটনায় তুরস্কে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বুধবার সন্ত্রাসবাদে জড়িত অভিযোগে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। তার গ্রেপ্তারের পর, তার সমর্থকরা দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
ইস্তাম্বুলের মেয়রকে দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে অর্থায়নের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তুরস্কের ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার সম্ভাব্য প্রার্থী হওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, যা বিরোধীদের মধ্যে আরো উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
শুক্রবার এক বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়ে বলেন, তার সরকার ‘‘ভাঙচুর’’ বা ‘‘রাস্তার সন্ত্রাস’’ সহ্য করবে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘যেকোনো পরিস্থিতিতে জনসাধারণের শৃঙ্খলায় ব্যাঘাত ঘটলে তা মেনে নেব না।’’
বিক্ষোভকারীরা মেয়রের গ্রেপ্তারের ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করেছেন এবং তার মুক্তি ও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছেন। বিরোধী দলগুলো দাবি করছে যে, গত ১২ বছরে হওয়া বিক্ষোভগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় আন্দোলন।
ইস্তাম্বুলে শুক্রবার অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও পিপার গ্যাস নিক্ষেপ করে। ইজমির শহরেও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
সিএইচপির নেতা ওজগুর ওজেল শনিবার রাতে তৃতীয় রাতের মতো বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন এবং দাবি করেছেন, ‘‘এখন এরদোয়ান বিক্ষোভে ভয় পেয়েছেন।’’ তিনি শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান এবং পুলিশের ক্ষতি ছাড়া প্রতিবন্ধকতা সরানোর নির্দেশ দেন।
মেয়র ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর ইস্তাম্বুলে জনসমাবেশের ওপর চার দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ, তবে বিরোধী দল তার বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাস্তায় বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। এরপর তুরস্কের অন্যান্য শহর আঙ্কারা ও ইজমিরেও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়ারলিকায়া বিক্ষোভের সমালোচনা করে বিরোধী দলগুলোকে ‘‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, ‘‘জনসাধারণের মাঝে ঘৃণা ও শত্রুতা উস্কে দেওয়ার’’ অভিযোগে আরও ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিক্ষোভের সময় পুলিশের অন্তত ১৬ সদস্য আহত হয়েছেন।
এদিকে, তুরস্কের দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান, যিনি ২২ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আছেন, ২০২৮ সালে আর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারবেন না বলে আইনি বাধা রয়েছে।