ঢাকা , শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
ক্রিমিয়া নিয়ে ছাড়? শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়াকে স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: ব্লুমবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইয়েমেনের রাস ঈসা বন্দরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮০, আহত ১৭১ দিলীপ ঘোষের বিয়ে ঘিরে প্রশ্ন: আরএসএস প্রচারকেরা কি বিয়ে করতে পারেন? সংগঠনটির প্রচারক ছিলেন মোদিও নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর চট্টগ্রামে শিশুর লাশ উদ্ধার টাঙ্গাইলে অবৈধ ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু শায়েস্তাগঞ্জে আগুনে পুড়ল ১৫ টি দোকান বিডিআর হত্যাকাণ্ড: সহায়ক তথ্য আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি মালয়েশিয়ায় ১৬৫ বাংলাদেশিসহ ৫০৬ জন অভিবাসী আটক ইভ্যালির অর্থ আত্মসাৎ: গ্রাহকদের মানববন্ধন ও রাসেলের গ্রেফতারের দাবি কক্সবাজার-মহেশখালী রুটে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলো সি-ট্রাক

শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য ২ হাজার মানুষ প্রাণ দেননি: সারজিস আলম

যৌক্তিক সংস্কার শেষেই অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। এসময় তিনি বলেন, শুধু নির্বাচনের জন্য এই আন্দোলন হয়নি। শুধু নির্বাচনের জন্য ২ হাজার মানুষ জীবন দেয়নি।

 

 

শনিবার সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সারজিস আলম।

 

এক বছরের মধ্যে সব কিছু সংস্কার হবে সেটা, কোনো বিবেকবান মানুষ চিন্তা করতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। সারজিস বলেন, ‘’১৬ বছর ধরে সব সিস্টেমকে ধীরে ধীরে ভেঙে শেষ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এই সিস্টেমগুলো, যেগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেগুলোর যৌক্তিক সংস্কারের পরই দ্রুত নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত।’’

 

তিনি আরো বলেন, ‘’আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট কথা, শুধু নির্বাচনের জন্য ২ হাজার মানুষ জীবন দেয়নি, অর্ধলাখ মানুষ রক্ত দেয়নি।’’

 

এরপর তিনি বলেন, ‘’১৬ বছরে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাগুলোর কারণে মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল। আজকে যদি সেই দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেমগুলোর ন্যূনতম সংস্কার না করে নির্বাচনের দিকে যান, ওই নির্বাচন কমিশনও তো একটা ব্যর্থ সিস্টেমে চলেছে ১৬ বছর ধরে।”

 

 

 

নির্বাচন কমিশনের সংস্কার প্রয়োজন উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে একটা ভোটার তালিকা দিলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় লোকবল সেট করে তালিকা পাঠালেন, এভাবে তো সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না।

 

শুধু নির্বাচন কমিশন কোনো দিন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারে না। পুরো দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল পর্যায়ে আসতে হবে। তা না হলে নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে আবার জবরদখল হবে।

 

সেই জবরদখল, ক্ষমতার অপব্যবহার- এটা তো আমরা দেখতে চাই না। পাশাপাশি এই নির্বাচনকেন্দ্রিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে যদি কোনো সমস্যা তৈরি হয় সেগুলোর জন্য বিচারিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। এই বিচার ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন।’’

 

 

তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টে এখনো এমন কিছু দোসর-ফ্যাসিস্ট বসে আছে, যারা যোগ্যতায় নয়, বরং তোষামোদি আর তেলবাজি করে পদে বসেছে। তারা গিয়েছিল দলের চাটুকারিতা করে। তাদের সেই জায়গা থেকে অপসারণ করা প্রয়োজন এবং যারা ওই জায়গাগুলোর জন্য যোগ্য তাদের ওই জায়গাগুলোতে বসানো প্রয়োজন।’’

 

সারজিস বলেন, ‘এই সংবিধান সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করতে পারেনি। আমরা পুরো বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা এবং তাদের প্রতিনিধি হিসেবে মনে করি, সাংবিধানিক সংস্কারও প্রয়োজন।’

 

 

তিনি বলেন, ‘আমরা কখনোই বলছি না, রাষ্ট্রের সব কিছু সংস্কার করে তারপরে নির্বাচনে যান। আমরা কখনোই বলছি না পাঁচ-ছয় বছরে আপনারা এই সংস্কার করে তারপর নির্বাচনে যান। কিন্তু কমপক্ষে স্ট্যান্ডার্ড একটা সময় তো লাগবে। কোনো বিবেকবান মানুষ তার জায়গা থেকে চিন্তা করতে পারবে না যে, এক বছরের মধ্যে সব কিছু সংস্কার হয়ে যাবে। এটা কখনোই সম্ভব নয়।’

 

 

সারজিস আরো বলেন, ‘’এই অভ্যুত্থান কিছু লোক দিয়ে হয়নি। ১৬ বছরে বাংলাদেশের নামিদামি বড় দলগুলো মিলে ফ্যাসিস্ট হাসিনার টনক বিন্দুমাত্র নড়াতে পারেনি। সেই শেখ হাসিনা কিছু লোকের জন্য এই দেশ ছেড়ে ভয়ে পালিয়ে যায়নি। পুরো বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে নেমেছিল বলে এই অভ্যুত্থান ঘটেছে, শেখ হাসিনা পালিয়েছে।’’

 

তিনি আরো বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২১ জনের সরকার না, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই অভ্যুত্থানে যারা অংশগ্রহণ করেছিল, সমর্থন দিয়েছিল তাদের সবার সরকার। এত জীবনের বিনিময়ে, এত রক্তের বিনিময়ে, এত মানুষের সমর্থনে যে অভ্যুত্থান হয়ে এই সরকার এসেছে এটি বাংলাদেশের সরকার।’

 

 

এ সরকারের সংস্কারের পূর্ণ অধিকার রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘’সেই জায়গা থেকে নৈতিকভাবে বলি, আইনগতভাবে বলি এই সরকারের পূর্ণ অধিকার অবশ্যই রয়েছে যে সংস্কারগুলো হওয়া প্রয়োজন। যে সংস্কারগুলো আমরা ছাত্র-জনতার কাতার থেকে প্রয়োজন মনে করি সেগুলো করার দরকার।’’

 

 

তিনি বলেন, ‘সারা দেশ থেকে ১ হাজার ৬০০ জনের বেশি শহীদ পরিবারের তালিকা আমাদের কাছে এসেছে। আপাতত যাচাই-বাছাই করে নির্বাচিতদের পরিবারের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক দেওয়া হচ্ছে। আমরা প্রতিটি বিভাগীয় পর্যায়ে গিয়ে শহীদের পরিবারের হাতে অনুদানের চেক তুলে দিচ্ছি। এটা আমাদের দায়িত্ব। বাকি যারা রয়েছেন তাদের কাগজপত্র সংগ্রহের কাজ চলছে। সেগুলো হাতে পেলে অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হবে।’’

 

চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধসহ ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। সিলেটে শহীদদের মধ্যে ১৮ পরিবারের হাতে অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হয়।

জনপ্রিয়

ক্রিমিয়া নিয়ে ছাড়? শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়াকে স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: ব্লুমবার্গ

শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য ২ হাজার মানুষ প্রাণ দেননি: সারজিস আলম

প্রকাশিত: ০৭:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪

যৌক্তিক সংস্কার শেষেই অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। এসময় তিনি বলেন, শুধু নির্বাচনের জন্য এই আন্দোলন হয়নি। শুধু নির্বাচনের জন্য ২ হাজার মানুষ জীবন দেয়নি।

 

 

শনিবার সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সারজিস আলম।

 

এক বছরের মধ্যে সব কিছু সংস্কার হবে সেটা, কোনো বিবেকবান মানুষ চিন্তা করতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। সারজিস বলেন, ‘’১৬ বছর ধরে সব সিস্টেমকে ধীরে ধীরে ভেঙে শেষ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এই সিস্টেমগুলো, যেগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেগুলোর যৌক্তিক সংস্কারের পরই দ্রুত নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত।’’

 

তিনি আরো বলেন, ‘’আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট কথা, শুধু নির্বাচনের জন্য ২ হাজার মানুষ জীবন দেয়নি, অর্ধলাখ মানুষ রক্ত দেয়নি।’’

 

এরপর তিনি বলেন, ‘’১৬ বছরে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাগুলোর কারণে মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল। আজকে যদি সেই দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেমগুলোর ন্যূনতম সংস্কার না করে নির্বাচনের দিকে যান, ওই নির্বাচন কমিশনও তো একটা ব্যর্থ সিস্টেমে চলেছে ১৬ বছর ধরে।”

 

 

 

নির্বাচন কমিশনের সংস্কার প্রয়োজন উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে একটা ভোটার তালিকা দিলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় লোকবল সেট করে তালিকা পাঠালেন, এভাবে তো সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না।

 

শুধু নির্বাচন কমিশন কোনো দিন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারে না। পুরো দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল পর্যায়ে আসতে হবে। তা না হলে নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে আবার জবরদখল হবে।

 

সেই জবরদখল, ক্ষমতার অপব্যবহার- এটা তো আমরা দেখতে চাই না। পাশাপাশি এই নির্বাচনকেন্দ্রিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে যদি কোনো সমস্যা তৈরি হয় সেগুলোর জন্য বিচারিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। এই বিচার ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন।’’

 

 

তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টে এখনো এমন কিছু দোসর-ফ্যাসিস্ট বসে আছে, যারা যোগ্যতায় নয়, বরং তোষামোদি আর তেলবাজি করে পদে বসেছে। তারা গিয়েছিল দলের চাটুকারিতা করে। তাদের সেই জায়গা থেকে অপসারণ করা প্রয়োজন এবং যারা ওই জায়গাগুলোর জন্য যোগ্য তাদের ওই জায়গাগুলোতে বসানো প্রয়োজন।’’

 

সারজিস বলেন, ‘এই সংবিধান সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করতে পারেনি। আমরা পুরো বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা এবং তাদের প্রতিনিধি হিসেবে মনে করি, সাংবিধানিক সংস্কারও প্রয়োজন।’

 

 

তিনি বলেন, ‘আমরা কখনোই বলছি না, রাষ্ট্রের সব কিছু সংস্কার করে তারপরে নির্বাচনে যান। আমরা কখনোই বলছি না পাঁচ-ছয় বছরে আপনারা এই সংস্কার করে তারপর নির্বাচনে যান। কিন্তু কমপক্ষে স্ট্যান্ডার্ড একটা সময় তো লাগবে। কোনো বিবেকবান মানুষ তার জায়গা থেকে চিন্তা করতে পারবে না যে, এক বছরের মধ্যে সব কিছু সংস্কার হয়ে যাবে। এটা কখনোই সম্ভব নয়।’

 

 

সারজিস আরো বলেন, ‘’এই অভ্যুত্থান কিছু লোক দিয়ে হয়নি। ১৬ বছরে বাংলাদেশের নামিদামি বড় দলগুলো মিলে ফ্যাসিস্ট হাসিনার টনক বিন্দুমাত্র নড়াতে পারেনি। সেই শেখ হাসিনা কিছু লোকের জন্য এই দেশ ছেড়ে ভয়ে পালিয়ে যায়নি। পুরো বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে নেমেছিল বলে এই অভ্যুত্থান ঘটেছে, শেখ হাসিনা পালিয়েছে।’’

 

তিনি আরো বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২১ জনের সরকার না, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই অভ্যুত্থানে যারা অংশগ্রহণ করেছিল, সমর্থন দিয়েছিল তাদের সবার সরকার। এত জীবনের বিনিময়ে, এত রক্তের বিনিময়ে, এত মানুষের সমর্থনে যে অভ্যুত্থান হয়ে এই সরকার এসেছে এটি বাংলাদেশের সরকার।’

 

 

এ সরকারের সংস্কারের পূর্ণ অধিকার রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘’সেই জায়গা থেকে নৈতিকভাবে বলি, আইনগতভাবে বলি এই সরকারের পূর্ণ অধিকার অবশ্যই রয়েছে যে সংস্কারগুলো হওয়া প্রয়োজন। যে সংস্কারগুলো আমরা ছাত্র-জনতার কাতার থেকে প্রয়োজন মনে করি সেগুলো করার দরকার।’’

 

 

তিনি বলেন, ‘সারা দেশ থেকে ১ হাজার ৬০০ জনের বেশি শহীদ পরিবারের তালিকা আমাদের কাছে এসেছে। আপাতত যাচাই-বাছাই করে নির্বাচিতদের পরিবারের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক দেওয়া হচ্ছে। আমরা প্রতিটি বিভাগীয় পর্যায়ে গিয়ে শহীদের পরিবারের হাতে অনুদানের চেক তুলে দিচ্ছি। এটা আমাদের দায়িত্ব। বাকি যারা রয়েছেন তাদের কাগজপত্র সংগ্রহের কাজ চলছে। সেগুলো হাতে পেলে অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হবে।’’

 

চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধসহ ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। সিলেটে শহীদদের মধ্যে ১৮ পরিবারের হাতে অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হয়।