ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ‘শহীদ তুরাব স্ট্যান্ড’ নামকরণ চার বছরে এসএসসি পরীক্ষার্থী কমেছে তিন লাখের বেশি চাঁদপুরে পুকুর খননের সময় মিলল পুরনো থ্রি নট থ্রি রাইফেল ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে আইন উপদেষ্টা পদে নিয়োগ প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছুরিকাঘাতে নিহত, অভিযুক্ত একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানে বাড়ছে বিদেশি পর্যটকদের ভিড় ক্রিমিয়া নিয়ে ছাড়? শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়াকে স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: ব্লুমবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইয়েমেনের রাস ঈসা বন্দরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮০, আহত ১৭১ দিলীপ ঘোষের বিয়ে ঘিরে প্রশ্ন: আরএসএস প্রচারকেরা কি বিয়ে করতে পারেন? সংগঠনটির প্রচারক ছিলেন মোদিও নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর চট্টগ্রামে শিশুর লাশ উদ্ধার

ঢাকায় নতুন এক ‘আয়নাঘর’-এর সন্ধান, ব্যারিস্টার কাসেমের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা প্রকাশ

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে নতুন এক ‘আয়নাঘর’ বা গোপন বন্দিশালার সন্ধান মিলেছে। দীর্ঘ আট বছর ধরে নিখোঁজ থাকা ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেমকে এই গোপন কারাগারেই আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছেন তদন্তকারীরা। বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।

গুম, নির্যাতন আর অমানবিক বন্দিত্ব

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ নতুন নয়। তবে ব্যারিস্টার কাসেমের অভিজ্ঞতা, এবং আয়নাঘরের বাস্তব চিত্র আরও একবার আলোচনায় এনেছে আওয়ামী শাসনামলে গুম-নির্যাতনের বাস্তবতা।

ব্যারিস্টার কাসেম জানান, তাকে যে কক্ষে রাখা হয়েছিল, সেটিতে দিনের আলো ঢোকার কোনো পথ ছিল না। আলো-বাতাসহীন, জানালাবিহীন ওই সেলে তিনি দিন-রাতের পার্থক্য বোঝারও সুযোগ পাননি। তিনি বলেন, “এভাবেই আটটা বছর বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিলাম। মনে হতো, যেন জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছিল আমাকে।”

তদন্তকারীদের ভাষ্য অনুযায়ী, বিমানবন্দরের পাশের বড় একটি ভবনের পেছনে ইট-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল আয়নাঘরটি। একটি সরু করিডোরে ছিল জানালাবিহীন একাধিক ছোট ছোট কক্ষ, যার একটিতে বন্দি ছিলেন কাসেম। দেওয়ালের ইট ও কংক্রিটের ধ্বংসাবশেষ এবং ছড়িয়ে থাকা নীল টাইলস তার বক্তব্যের সত্যতাই প্রমাণ করে।

র‌্যাব সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা

তদন্তকারী দলের সন্দেহ, এই গোপন বন্দিশালাটি পরিচালনা করতেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কিছু সদস্য, যারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাজ করতেন। কাসেম বলেন, “ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থাকে যারা মদদ দিয়েছিলেন, তারা এখনও স্বপদে বহাল রয়েছেন।”

আরও ভুক্তভোগীর ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

ব্যারিস্টার কাসেম ছাড়াও বিবিসি কথা বলেছে আরও পাঁচজন গুম হওয়া এবং পরবর্তীতে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তির সঙ্গে। তাদের সবার অভিজ্ঞতায় উঠে এসেছে চোখ বেঁধে তুলে নেওয়া, দীর্ঘদিন অন্ধকার কক্ষে আটকে রাখা এবং নির্মম শারীরিক নির্যাতনের বর্ণনা।

এক ভুক্তভোগী, ৩৫ বছর বয়সী আতিকুর রহমান রাসেল বলেন, তাকে চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে ধূসর রঙের একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পুরান ঢাকার একটি ভবনে আটকে রাখা হয়। সেখানে তাকে ক্রমাগত মারধর করা হয়। “নাক ভেঙে গেছে, এখনও হাতে ব্যথা,” বলেন রাসেল।

৭১ বছর বয়সী ইকবাল চৌধুরী জানান, তাকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমার আঙুল ও পা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। এখনও সেই ভয়াবহ দিনগুলোর কথা মনে পড়লে গা শিউরে ওঠে।”

২৩ বছর বয়সী রহমতুল্লাহ বলেন, “তারা আমার জীবন থেকে দেড় বছর কেড়ে নিয়েছে। ওই সময়টা আর কোনোদিন ফিরে পাব না।” তাকে রান্নার কাজ ও ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

শত শত অভিযোগ, এখনও বিচারহীনতা

বিবিসি জানায়, বাংলাদেশে গুমের সঠিক সংখ্যা জানা সম্ভব না হলেও একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে কমপক্ষে ৭০৯ জন গুম হয়েছেন। এর মধ্যে ১৫৫ জন এখনও নিখোঁজ। গঠিত তদন্ত কমিশন এরইমধ্যে ১,৬৭৬টিরও বেশি অভিযোগ পেয়েছে, আরও আসছে প্রতিদিন।

ব্যারিস্টার কাসেম বলেন, “এই নির্যাতনের বিচার যত দ্রুত সম্ভব হওয়া উচিত, যাতে দেশ এই ভয়াবহ অধ্যায়টি বন্ধ করে সামনে এগিয়ে যেতে পারে।”

জনপ্রিয়

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ‘শহীদ তুরাব স্ট্যান্ড’ নামকরণ

ঢাকায় নতুন এক ‘আয়নাঘর’-এর সন্ধান, ব্যারিস্টার কাসেমের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা প্রকাশ

প্রকাশিত: ১১:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে নতুন এক ‘আয়নাঘর’ বা গোপন বন্দিশালার সন্ধান মিলেছে। দীর্ঘ আট বছর ধরে নিখোঁজ থাকা ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেমকে এই গোপন কারাগারেই আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছেন তদন্তকারীরা। বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।

গুম, নির্যাতন আর অমানবিক বন্দিত্ব

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ নতুন নয়। তবে ব্যারিস্টার কাসেমের অভিজ্ঞতা, এবং আয়নাঘরের বাস্তব চিত্র আরও একবার আলোচনায় এনেছে আওয়ামী শাসনামলে গুম-নির্যাতনের বাস্তবতা।

ব্যারিস্টার কাসেম জানান, তাকে যে কক্ষে রাখা হয়েছিল, সেটিতে দিনের আলো ঢোকার কোনো পথ ছিল না। আলো-বাতাসহীন, জানালাবিহীন ওই সেলে তিনি দিন-রাতের পার্থক্য বোঝারও সুযোগ পাননি। তিনি বলেন, “এভাবেই আটটা বছর বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিলাম। মনে হতো, যেন জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছিল আমাকে।”

তদন্তকারীদের ভাষ্য অনুযায়ী, বিমানবন্দরের পাশের বড় একটি ভবনের পেছনে ইট-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল আয়নাঘরটি। একটি সরু করিডোরে ছিল জানালাবিহীন একাধিক ছোট ছোট কক্ষ, যার একটিতে বন্দি ছিলেন কাসেম। দেওয়ালের ইট ও কংক্রিটের ধ্বংসাবশেষ এবং ছড়িয়ে থাকা নীল টাইলস তার বক্তব্যের সত্যতাই প্রমাণ করে।

র‌্যাব সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা

তদন্তকারী দলের সন্দেহ, এই গোপন বন্দিশালাটি পরিচালনা করতেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কিছু সদস্য, যারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাজ করতেন। কাসেম বলেন, “ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থাকে যারা মদদ দিয়েছিলেন, তারা এখনও স্বপদে বহাল রয়েছেন।”

আরও ভুক্তভোগীর ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

ব্যারিস্টার কাসেম ছাড়াও বিবিসি কথা বলেছে আরও পাঁচজন গুম হওয়া এবং পরবর্তীতে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তির সঙ্গে। তাদের সবার অভিজ্ঞতায় উঠে এসেছে চোখ বেঁধে তুলে নেওয়া, দীর্ঘদিন অন্ধকার কক্ষে আটকে রাখা এবং নির্মম শারীরিক নির্যাতনের বর্ণনা।

এক ভুক্তভোগী, ৩৫ বছর বয়সী আতিকুর রহমান রাসেল বলেন, তাকে চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে ধূসর রঙের একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পুরান ঢাকার একটি ভবনে আটকে রাখা হয়। সেখানে তাকে ক্রমাগত মারধর করা হয়। “নাক ভেঙে গেছে, এখনও হাতে ব্যথা,” বলেন রাসেল।

৭১ বছর বয়সী ইকবাল চৌধুরী জানান, তাকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমার আঙুল ও পা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। এখনও সেই ভয়াবহ দিনগুলোর কথা মনে পড়লে গা শিউরে ওঠে।”

২৩ বছর বয়সী রহমতুল্লাহ বলেন, “তারা আমার জীবন থেকে দেড় বছর কেড়ে নিয়েছে। ওই সময়টা আর কোনোদিন ফিরে পাব না।” তাকে রান্নার কাজ ও ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

শত শত অভিযোগ, এখনও বিচারহীনতা

বিবিসি জানায়, বাংলাদেশে গুমের সঠিক সংখ্যা জানা সম্ভব না হলেও একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে কমপক্ষে ৭০৯ জন গুম হয়েছেন। এর মধ্যে ১৫৫ জন এখনও নিখোঁজ। গঠিত তদন্ত কমিশন এরইমধ্যে ১,৬৭৬টিরও বেশি অভিযোগ পেয়েছে, আরও আসছে প্রতিদিন।

ব্যারিস্টার কাসেম বলেন, “এই নির্যাতনের বিচার যত দ্রুত সম্ভব হওয়া উচিত, যাতে দেশ এই ভয়াবহ অধ্যায়টি বন্ধ করে সামনে এগিয়ে যেতে পারে।”