চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে বেইজিং। শুক্রবার চীন জানায়, তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন করে উত্তেজনাকর মোড় নিয়েছে।
এই পাল্টাপাল্টি শুল্কনীতি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ তৈরি করছে। এর প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে, যেখানে বিশ্বজুড়ে সূচক পতনের মুখে পড়েছে। ডলারের মান হ্রাস পেয়েছে, সরকারি বন্ড বিক্রিতে তীব্রতা দেখা দিয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে পরিচিত সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা
জনাস হেন্ডারসনের গ্লোবাল মাল্টি-অ্যাসেট প্রধান অ্যাডাম হেটস বলেন, “মন্দার ঝুঁকি এখন অনেক বেশি—যা দুই সপ্তাহ আগেও এতটা ছিল না।” অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন, সরবরাহব্যবস্থার ব্যাঘাত, চাহিদা হ্রাস এবং বিনিয়োগে ধীরগতির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি সংকটে পড়তে পারে।
মার্কিন সাফাই ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বৃহস্পতিবার জানান, পরিস্থিতি অস্থির হলেও যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে। হোয়াইট হাউজ জানায়, ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনাম বাণিজ্য আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবাও যুক্তরাষ্ট্রে একটি বাণিজ্য মিশন পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
চীনের হুঁশিয়ারি ও সংযত প্রতিক্রিয়া
চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, এটি তাদের সর্বশেষ প্রতিক্রিয়া। ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র যদি শুল্ক বাড়ায়, তাতে আর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে না। মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, “শুল্ক বাড়ানোর খেলায় কোনো অর্থ নেই। এটি বিশ্ব অর্থনীতির ইতিহাসে কৌতুক হিসেবেই থাকবে।”
ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের অবস্থান
বেইজিংয়ে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, “চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিলে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা বাণিজ্য নীতির বিরোধিতা করা উচিত।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “বাণিজ্যযুদ্ধে কোনো বিজয়ী নেই।”
অন্যদিকে হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “আমি শি জিনপিংকে দীর্ঘদিন ধরে চিনি, আমি বিশ্বাস করি আমরা একসঙ্গে এমন কিছু করতে পারব যা উভয় দেশের জন্য ভালো হবে।”
বিশ্লেষকদের মতামত
বিশ্বব্যাপী বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্ব শুধু এই দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এর অভিঘাত পড়বে গোটা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়। এতে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, পণ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে এবং ভোক্তাদের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব নেতারা সংযম এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে আদৌ এই বাণিজ্যযুদ্ধ থামবে কিনা, তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।